জ্বালানি খাতকে দুর্নীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার: ফখরুল

‘দুর্নীতি জ্বালানি–সংকট–এর উৎস’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরছবি: দীপু মালাকার

বর্তমান সরকার জ্বালানি খাতকে দুর্নীতি করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার জ্বালানিকে ‘রাজনৈতিক পণ্যে’ পরিণত করার পাশাপাশি এই খাতকে দুর্নীতির হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে। সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান সময়ের বাংলাদেশকে দেখতে মুক্তিযুদ্ধ হয়নি, হয়েছিল একটি উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য।

দেশে গণতন্ত্র ও জবাবদিহি না থাকার কারণে দুর্নীতি হচ্ছে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, এই সংসদ বিলুপ্ত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নতুন নির্বাচ কমিশন গঠন করে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে।

‘দুর্নীতি জ্বালানি সংকট–এর উৎস’ শীর্ষক এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) গত ৮ বছরে বিশ্ববাজারের চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রি করে ৪৮ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে।

সরকার চাইলে জ্বালানির দাম না বাড়িয়ে মুনাফার টাকায় আরও প্রায় ২১ মাস জ্বালানি সরবরাহ করতে পারত। বিপিসি এক ব্যারেল তেল বিক্রি করে প্রায় ১৫ হাজার টাকা লাভ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার এ ক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্যবসায়িক মনোবৃত্তিতে কাজ করেছে, জনকল্যাণে নয়। বিইআরসিকে পাশ কাটিয়ে যে হারে জ্বালনি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, সেটি ‘লুণ্ঠনমূলক’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। প্রবন্ধে জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে আগের অবস্থায় নিয়ে আসাসহ স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ১৬টি সুপারিশ করা হয়।

সেমিনার সঞ্চালনা করেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জ্বালানি তেল আর বাজারের পণ্য নেই, রাজনৈতিক পণ্য হয়ে গেছে এবং এর রাজনৈতিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যারা মূল্য সাধারণ মানুষের পকেট থেকে দিতে হচ্ছে। গত ১৩ বছরে একটি কূপও খনন করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অন্য দেশে পাঁচটি কূপ খনন করলে একটিতে তেল পাওয়া যায়, আমাদের দেশে তিনটি কূপ খনন করলে একটিতে পাওয়া যায়। তারপরও কূপ খনন করা হয়নি।’ এর পেছনে আর্থিকভাবে আওয়ামী লীগের লাভবান হওয়ার বিষয় জড়িত বলে তিনি অভিযোগ করেন।

দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ও সাবেক রাষ্টদূত নজরুল ইসলাম খান বলেন, কেরোসিনের দাম দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি। জ্বালানি খাতকে আমদানি–নির্ভর করার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এটি বড় অন্যায়। এ সময় বর্তমান সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে ‘জিয়া পরিবারের সমালোচনাবিষয়ক মন্ত্রী’ হিসেবেও আখ্যা দেন তিনি।

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, ইংরেজি দৈনিক দ্য নিউ নেশনের সাবেক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ জাকির হোসেন খান।