এই সেলফিতে সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিবর্তন হয়নি: গণতন্ত্র মঞ্চ
বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে—যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে দাবি করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। তাঁরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেলফি, এটাই একমাত্র পাওনা তাঁদের। কিন্তু বাংলাদেশের নাগরিকদের ভোটের অধিকার ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে—যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি।
আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা এসব কথা বলেন। সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গণমিছিল কর্মসূচির আগে এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের এক দফা দাবিতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন দল ও জোট পৃথকভাবে এই কর্মসূচি পালন করেছে।
ভারতের নয়াদিল্লিতে শুরু হয়েছে বিশ্বের শিল্পোন্নত ও বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি-২০-এর শীর্ষ সম্মেলন। আজ শনিবার সেখানে এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর কন্যা সায়মা ওয়াজেদের সাক্ষাৎ হয়েছে। আলাপচারিতার পাশাপাশি শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদকে নিয়ে সেলফি তুলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। ওই অনুষ্ঠানের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
এই সেলফির প্রসঙ্গ তুলে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সেলফি তুলে তাঁরা বোঝানোর চেষ্টা করছেন আমেরিকা আমাদের সঙ্গে আছে। মিথ্যাচার কত রকম হতে পারে। দিল্লিতে গিয়ে নানাজনের পা ধরার চেষ্টা করছেন। মোদি-বাইডেন সবাই তাঁদের পছন্দ করেন বোঝাতে চাচ্ছেন। অথচ আজ সকালেও যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়নি। অর্থাৎ তারা দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।
জো বাইডেনের সঙ্গে শেখ হাসিনার সেলফিতে বাংলাদেশকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে মন্তব্য করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, হামলা-মামলা সব মোকাবিলা করেও সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন কর্মসূচি চলবে। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য না করা পর্যন্ত লড়াই চলবে, সেভাবে প্রস্তুতি নেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব। তিনি বলেন, ‘যতই টালবাহানা করুক, এবার সরকার নির্বাচন করতে পারবে না। জাতীয় স্বার্থ বাদ দিয়ে কীভাবে ক্ষমতায় থাকা যাবে, তা নিয়ে ব্যস্ত তারা। এই সরকার প্রোপাগান্ডা চালানোর ওস্তাদ। পশ্চিমা বিশ্ব চায় দেশে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, আমরাও এটাই চাই।’
সরকার একতরফা নির্বাচনকে সুষ্ঠু বলে চালিয়ে দিতে চায়, এই অভিযোগ করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, তারা বলে, বিরোধীরা না এলেও নাকি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের সংজ্ঞাই বদলে দিতে চায়। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গায়েবি মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করছে। এই সরকারের অধীনে যারা নির্বাচনে যাবে, তারা দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে নতুন রাজাকার হিসেবে নাম লেখাবে।
সরকার আরেকটি একতরফা নির্বাচন করতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সরকার ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় থাকার প্রয়াস চালাচ্ছে। এবার আর একতরফা নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না।
দেশ এখন কতগুলো সিন্ডিকেটের হাতে বন্দী বলে অভিযোগ করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম। তিনি বলেন, আগামী দেড় মাস, দুই মাস অথবা চার মাস পর যেটাই হোক, আগামীর বাংলাদেশে আপনারা নেই। আগামীর বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত হবে না। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল প্রেসক্লাব থেকে পল্টন মোড় হয়ে দৈনিক বাংলায় গিয়ে শেষ হয়।