টাকায় কেনা যায় এমন একটা গণতন্ত্র আমরা প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছি: বদিউল আলম মজুমদার

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারফাইল ছবি: প্রথম আলো

নির্বাচনে কালোটাকার প্রভাবের কথা উল্লেখ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘নির্বাচনটা ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। টাকা দিয়ে কেনা যায়, এমন একটা গণতন্ত্র আমরা প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছি। কালোটাকার এই প্রভাবকে দূরীভূত করতে হবে।’

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘অভ্যুত্থানের অর্থনৈতিক আকাঙ্ক্ষা’ বিষয়ে এক আলোচনায় অংশ নিয়ে বদিউল আলম মজুমদার এ কথা বলেন। ‘চতুর্থ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলন ২০২৫: অর্থনীতির ভবিষ্যৎ পথরেখা ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দৈনিক বণিক বার্তা।

আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘একটা টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার যাত্রা শুরু হয় সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে। সেই মনজিলে মকসুদে পৌঁছাতে হলে অনেকগুলো সংস্কার প্রয়োজন। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে বড় বাধা নির্বাচনী অঙ্গনটা পরিচ্ছন্ন নয়, বরং অস্বচ্ছ। এটাকে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন করতে হবে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন দূরীভূত করতে না পারলে আমাদের আবারও পণ্ডশ্রম হবে।’

একসঙ্গে দল, সরকার ও সংসদের প্রধান হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার হয়ে ওঠেন। এ ক্ষেত্রে সংস্কার না হলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে বাধ্য। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন, কিন্তু স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতিটা রয়ে গেছে। এটা যদি পরিবর্তন না হয়, আবার আরেকজন আসবে সেই পথ ধরে
বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক

নির্বাচনটা ব্যবসায় পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘টাকা দিয়ে কেনা যায়, এমন একটা গণতন্ত্র আমরা প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছি। কালোটাকার এই প্রভাবকে দূরীভূত করতে হবে। নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাবে কেউ সত্য কথা বলে কি না, জানি না। তারপরও এটাকে যদি যাচাই-বাছাই করা হয়, তাহলে নির্বাচনী ও রাজনৈতিক অঙ্গনকে পরিচ্ছন্ন করা যাবে। দুর্বৃত্তদের দূরে রাখলে নির্বাচনে টাকার খেলা কিছুটা হলেও বন্ধ করা যাবে।’

শুধু সংস্কার করলেই হবে না, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেও পরিবর্তন আসতে হবে বলে মন্তব্য করেন সুজন সম্পাদক। পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমেরও ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

সাবেক নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি স্বাধীন হয়, দলনিরপেক্ষভাবে মানুষের কল্যাণে কাজ করে, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম হতে পারে। এর জন্য কতগুলো প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার দরকার। এর বাইরে কিছু কাঠামোগত সংস্কারও প্রয়োজন।

সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতার সমালোচনা করে বদিউল আলম বলেন, একসঙ্গে দল, সরকার ও সংসদের প্রধান হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন। এ ক্ষেত্রে সংস্কার না হলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে বাধ্য। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, কিন্তু স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতিটা রয়ে গেছে। এটা যদি পরিবর্তন না হয়, আবার আরেকজন আসবে সেই পথ ধরে।