আওয়ামী লীগ পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে চাচ্ছে

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আইনজীবী সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতারা। ঢাকা, ২৫ জুলাই
ছবি: প্রথম আলো

জনসমর্থন হারিয়ে বর্তমান সরকার সহিংসতা ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও জোটের নেতারা। তাঁরা বলেছেন, বিরোধীদের কর্মসূচির দিনে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে আওয়ামী লীগ পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে চাচ্ছে। ২৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বিএনপি ও বিরোধীদের ডাকা মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণ না হলে এর দায়দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আইনজীবী সমাবেশে বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে এসব বিষয় উঠে এসেছে। গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীন বিচারব্যবস্থার দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্ট (ইউএলএফ) নামে আইনজীবীদের নতুন একটি মোর্চা। সমাবেশে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি শিক্ষাবিদ ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বক্তব্য দেন।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারা (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ) সহিংসতা চায় বলেই যুবলীগের ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ নামের সমাবেশ পিছিয়ে ২৭ জুলাই নেওয়া হয়েছে। ২৭ জুলাই বিএনপির মহাসমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। চক্রান্ত করে, সহিংসতা করে তা বন্ধ করা যাবে না।

বিএনপির মহাসমাবেশ যাতে শান্তিপূর্ণ হয়, সে ব্যবস্থা করতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ফখরুল। তবে তিনি বলেন, মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণ না হলে দায়দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।
‘কত নিছো, কবে দেবা’

৫২ বছরে দেশে একটা নির্বাচনব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি, এটি দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ২৭ জুলাই অশান্তির কিছু করবেন না।

সমাবেশে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি আবু সাইয়িদ বলেন, ‘এখন এই সরকারকে জনগণ বলছে, কবে যাবা? যাওয়ার পরে বলবে, কত নিছো, কবে দেবা?’
সরকার ক্ষমতায় থাকতে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাবেক প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতেই এটি স্পষ্ট।

আওয়ামী লীগ পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে চাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, তাঁরা উসকানি দেবেন না৷ কিন্তু বিরোধীদের কর্মসূচির দিনেই তাঁরা কর্মসূচি দিচ্ছেন।
বিদেশিদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ এই সরকারই করে দিয়েছে বলে সমাবেশে উল্লেখ করেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন দাবি করেন, মরিচ সিন্ডিকেট, আলু-পেঁয়াজ-চিনির সিন্ডিকেট, ব্যাংক লুটেরা ব্যবসায়ীরা আওয়ামী লীগকে চায়। গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার ও বিচারব্যবস্থাকে আওয়ামী লীগ ‘খেয়ে ফেলেছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিরোধীদের কর্মসূচির দিনে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে সরকার উসকানি দিচ্ছে বলে দাবি করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চায়। পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে তারা জনগণকে ভয় দেখাতে চায়।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইউএলএফের আহ্বায়ক ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন। তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার দেশের সংবিধানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই সংবিধান মোতাবেক কোনো নির্বাচন হবে না। আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ২৭ জুলাই সমাবেশের পর কে কোথায় যাবেন, সে চিন্তা করেন, পথ খোঁজেন।

বর্তমান সরকার নির্বাচনব্যবস্থাকে ‘হাস্যকর’ করে তুলেছে বলে সমাবেশে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি আরও বলেন, জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে এতটা তুচ্ছতাচ্ছিল্য আগে হয়নি। বিনা ভোটের ও রাতের ভোটের মতো তামাশার নির্বাচনও দেখা গেছে।

সমাবেশে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, ইউএলএফের যুগ্ম আহ্বায়ক সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও ইউএলএফের প্রধান সমন্বয়ক কায়সার কামাল, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন