ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে প্রার্থীরা শুক্রবার ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চালিয়েছেন। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনেও কয়েকজন প্রার্থীকে প্রচারপত্র বিলি করতে দেখা যায়।
এ সময় সেখানে দাঁড়িয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রথম বর্ষের অনাবাসিক শিক্ষার্থী সোহানা সাবরিনা। উৎসবমুখর পরিবেশে প্রার্থীদের এমন প্রচার–প্রচারণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তিনি।
সোহানা সাবরিনা প্রথম আলোর এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে একধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এটাকে ইতিবাচকভাবে দেখছি।’
কেমন প্রার্থীকে এগিয়ে রাখছেন, জানতে চাইলে সোহানা বলেন, ‘নতুন হলেও ক্যাম্পাস নিয়ে আমার একধরনের বোঝাপড়া আছে। তবে মা-বাবা কী মত দেন, তা–ও বিবেচনা করে দেখব। কারণ, তাঁদের বোঝাপড়া আমার চেয়ে বেশি। তাঁরা দুজনেই সরকারি চাকরি করেন। তবে যেসব প্রার্থী প্রতিশ্রুতি রাখবেন বলে মনে হচ্ছে, তাঁদেরই এগিয়ে রাখব।’
সোহানার সঙ্গে যখন এ প্রতিবেদকের কথা হচ্ছিল, তখন গ্রন্থাগারের সামনে প্রচারপত্র বিলি করছিলেন ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল থেকে সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী জাহেদ আহমাদ। নির্বাচিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার্থীবান্ধব ও গবেষণা সহায়ক করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
এ সময় একই এলাকায় আরও দুজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরাও প্রায় সোহানার মতোই মত দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, যাঁরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাখবেন বলে মনে হচ্ছে, তাঁদেরই ভোট দেবেন। কিন্তু প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি কতটুকু রাখবেন, তা নিয়ে তাঁদের সংশয় আছে।
এই দুই শিক্ষার্থীর একজন বলেন, ২০১৯ সালে যখন সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল, তখন অনেক প্রার্থী ভালো ভালো প্রতিশ্রুতি দিলেও তা তেমন একটি পূরণ করেননি।
জুমার নামাজের পর থেকেই প্রার্থীরা মূলত প্রচার–প্রচারণা শুরু করেন। দুপুর থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকজন প্রার্থী ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
জুমার নামাজ শেষে বিজয় একাত্তর হলের সামনে থেকে প্রচার শুরু করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। প্রচারণার এক ফাঁকে প্যানেলটির ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটি গোষ্ঠী রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে আমাদের প্রার্থীদের নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
গতকাল প্রায় একই সময়ে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল এবং এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ অমর একুশে হলে প্রচার চালান।
ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা রয়েছে। এবার ডাকসুর ২৮টি পদের বিপরীতে মোট ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে নারী প্রার্থী ৬২ জন।
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে প্রচার চালান গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুরো ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্দীপনা কাজ করছে। আমরা আমাদের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি, সহাবস্থানে প্রচারণা চলছে।’ তবে নির্বাচন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন।
বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় প্রচার চালাতে দেখা যায় বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেল থেকে ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদেরকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর থেকে গত এক বছর আমি শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করেছি। আমি আশা করি, শুধু ফেসবুক ও সংবাদমাধ্যমের প্রচারণা দেখে শিক্ষার্থীরা কাউকে এগিয়ে রাখবেন না।’
একই সময়ে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের’ ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম প্রচার চালান। পরে তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ডাকসু নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশন একপক্ষীয় আচরণ করছে। কমিশনে থাকা শিক্ষকেরা একটি নির্দিষ্ট ছাত্রসংগঠনের পক্ষে কাজ করছেন। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে হবে।
সন্ধ্যার আগমুহূর্তে ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকায় গিয়ে ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। এ সময় সেখানে কয়েকজন প্রার্থীকে প্রচারপত্র বিলি করতে দেখা গেছে। তাঁদের একজন মোহাম্মদ সাকিব। তিনি বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেল থেকে আন্তর্জাতিক সম্পাদক প্রার্থী। প্রচারে ভালো সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
সন্ধ্যায় কার্জন হল, অমর একুশে হল, শহীদুল্লাহ্ হল, ফজলুল হক মুসলিম হল এলাকা ঘুরে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী ও প্রার্থীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ মুরাদ প্রথম আলোকে জানান, দলীয় পরিচয়ের চেয়ে ব্যক্তি পরিচয়কে এগিয়ে রাখছেন তিনি।
প্রচারে সহাবস্থান
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে শহীদুল্লাহ্ হলের পুকুরপাড়ের পাশের দোকানগুলোর সামনে উমামা ফাতেমা ও আবু বাকের মজুমদারকে একই সময়ে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। উমামা ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল থেকে ভিপি প্রার্থী। আর আবু বাকের বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের জিএস প্রার্থী।
তাঁরা দুজনই প্রথম আলোকে জানান, ভালো সাড়া পাচ্ছেন। হলে হলে যাচ্ছেন বলে জানান উমামা। ছাত্রীদেরও ভালো ভোট পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী বাকের।
এ সময় ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ক্রীড়া সম্পাদক প্রার্থী চিম চিম্যা চাকমা আবু বাকেরসহ অন্যদের প্রচারপত্র দেন ও দোয়া চান।
কিছুক্ষণ পর সেখানে ছাত্রদল প্যানেলের এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ প্রচারণা চালাতে আসেন। এতে পুকুরপাড়ে ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রচারণায় সহাবস্থান ও আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয়। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, নির্বাচনী প্রচারণার সহাবস্থানের এই চিত্র যেন পরবর্তী সময়েও জারি থাকে।