ভোটে ‘নিরুৎসাহিত’ করার চেষ্টা চালাবে বিএনপি
‘ভোট বর্জনের’ আহ্বান কার্যকর করতে সারা দেশে বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি শুরু।
৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের ভোট দানে নিরুৎসাহিত করতে শান্তিপূর্ণ পন্থায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে বিএনপি। দলটির লক্ষ্য হবে যতটা সম্ভব কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কমানো। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, এরই অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে প্রতিটি নির্বাচনী আসনে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ভোটের দিন নিজ নিজ এলাকায় থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সবাইকে মাঠে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে গতকাল শুক্রবারও বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২–দলীয় জোট ও ছাত্রদল রাজধানীতে মিছিল করেছে। জামায়াতে ইসলামীও পৃথক মিছিল করেছে ঢাকা মহানগরে। গতকাল সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে লাঠিমিছিল হয়। এতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
বিএনপির নেতারা বলছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে দেয়নি। রাতেই তারা ব্যালটে সিল মেরেছে। এবার বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপরীত ফন্দি-কৌশল নিয়েছে। এবার তারা ভোটারদের কেন্দ্রে আনার জন্য সরকারি ভিজিএফ কার্ড বাতিল করাসহ নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এর পাল্টা কৌশল নিয়েছে বিএনপিও।
সরকারের এই ভাঁওতাবাজি, ধাপ্পাবাজি আমরা বৈধতা দেব না। সেই কারণেই আমরা এটা (নির্বাচন) প্রত্যাখ্যান করেছি।
গতকাল সকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিনজন নেতা সংবাদ সম্মেলন করে ৭ জানুয়ারি ‘সর্বজনীন ভোট বর্জন’–এর ডাক দিয়েছেন। পাশাপাশি ‘ভোট বর্জনের’ আহ্বান আরও কার্যকর করতে ডাকা সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচিও আজ শনিবার সকাল ছয়টা থেকে শুরু হয়েছে। আগামীকাল রোববার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের পরদিন সোমবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে। ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে গত ১০ দিন সারা দেশে গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিতরণ কর্মসূচি শেষে বিএনপি হরতালের এই কর্মসূচি দেয়।
‘ঘরে থাকা’ কর্মসূচি নিন
বিএনপি ছাড়াও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণতন্ত্র মঞ্চ, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ ডান ও বামপন্থী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জন করেছে। তারা জনগণকে ভোট না দিয়ে ভোটের দিন ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে। এর মধ্যে সিপিবি নির্বাচন স্থগিত করে বর্তমান সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন ভোট বর্জন করে নির্বাচনের দিন জনগণকে ‘ঘরে থাকা’ কর্মসূচি নিতে বলেছেন। একই সঙ্গে তিনি জোর করে কাউকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে ভোট বর্জনের অধিকার হরণ করা থেকে বিরত থাকতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
একই আহ্বান জানান গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশবাসীর উদ্দেশে আমাদের আহ্বান, ভোট বর্জন করে নীরব প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে নতুন গণপ্রতিরোধের সূচনা করুন।’
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন ভোট বর্জন করে নির্বাচনের দিন জনগণকে ‘ঘরে থাকা’ কর্মসূচি নিতে বলেছেন। একই সঙ্গে তিনি জোর করে কাউকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে ভোট বর্জনের অধিকার হরণ করা থেকে বিরত থাকতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
৩০ নভেম্বর ভোট হয়ে গেছে
সকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিন সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান সংবাদ সম্মেলন করেন। মঈন খানের গুলশানের বাসায় এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনই ভোট হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, ‘কিসের ভোট ৭ তারিখে? ৭ তারিখে একটা ঘোষণা হতে পারে...নির্বাচন তো হয়েই গেছে। যেদিন মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছে ৩০ নভেম্বর, সেদিনই ভোট হয়ে গেছে। সরকারের এই ভাঁওতাবাজি, ধাপ্পাবাজি আমরা বৈধতা দেব না। সেই কারণেই আমরা এটা প্রত্যাখ্যান করেছি। এটা ইলেকশন না, এটা সিলেকশন।’
মঈন খান বলেন, ‘একজন মানুষের ইচ্ছায় আজকে বাংলাদেশের ১২ কোটি ভোটারের ইচ্ছা নির্ধারিত হবে...এটা কোনো দিন হতে পারে না। সরকার ভাবছে, ৭ জানুয়ারি তাদের জয়লাভের দিন। আমি বলব, ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকারের পরাজয়ের দিন। কারণ, সে দিন তারা বাংলাদেশের নতুন করে অপমৃত্যু ঘটাবে।’
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে মঈন খান বলেন, ‘আপনারা এই জনপ্রতিনিধিত্বহীন বর্তমান সরকারের কোনো হুমকি–ধমকি অথবা তাদের কোনো ভয়ভীতিতে চিন্তিত হবেন না। আপনারা সাহসিকতার সঙ্গে সরকারের প্রদত্ত ভয়ভীতির মোকাবিলা করুন। যে বা যারা আপনাকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধ্য করতে চায়, তাদের চিহ্নিত করুন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানাতে চাই, ভাতা কার্ড জব্দ করে, ভাতা বন্ধ করে দিয়ে কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নিয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধ্যকরণের মতো কোনো অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যাঁরা জড়িত হবেন বা হচ্ছেন, ভবিষ্যতে তাঁদের আইনের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।’
‘এই নির্বাচন একটা প্রহসন’ বলে মন্তব্য করেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি জনগণের উদ্দেশে বলেন, ‘এটা অর্থহীন নির্বাচন, যেটাতে দয়া করে কেউ জড়িত হবেন না। কারণ, এটা একটা অপরাধমূলক তৎপরতা, এটাতে জড়িত হওয়াও অপরাধ। আমরা শুধু শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন বর্জন করার আহ্বান জানাচ্ছি।আর কোনো আহ্বান আমাদের নাই।’