জাতীয় যুবশক্তির আত্মপ্রকাশ
আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে ভারত সরকারের প্রতি আখতারের আহ্বান
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় ভারত সরকারের উদ্বেগ প্রকাশের সমালোচনা করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা ভারত সরকারের কাছে আহ্বান রাখব, বাংলাদেশে বাকশালী, ফ্যাসিবাদী, স্বৈরতান্ত্রিক, গণহত্যাকারী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপনাদের (ভারত সরকার) যে সম্পর্ক, সেই সম্পর্ক ছিন্ন করে এ দেশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে।’
এনসিপির যুবসংগঠন জাতীয় যুবশক্তির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন আখতার হোসেন। আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলিস্তানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ) পরিত্যক্ত কার্যালয়ের সামনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে যারা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, অপরাধের দায়ে বাংলাদেশে যাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়েছে, সেই আওয়ামী লীগের পক্ষে ভারত সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ভারত সরকার দীর্ঘ সময় ধরে এ দেশের মানুষের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক তৈরি করেনি; বরং তাদের সম্পর্ক ছিল এ দেশের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগের সঙ্গে।
এনসিপির এই নেতা বলেন, বাকশালী, ফ্যাসিবাদী, স্বৈরতান্ত্রিক, গণহত্যাকারী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে। এ দেশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে ভারতকে। কোনো বিদেশি প্রভু বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
আখতার বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করা হয়েছে। তাঁদের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার আইনগতভাবে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মতাদর্শিকভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করার সময় এসেছে এখন।
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অনেকে মেনে নিতে পারছেন না—এমন মন্তব্যও করেন এনসিপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়াকে যাঁরা গ্রহণ করতে পারছেন না, আমরা তাঁদের বলতে চাই, বাংলাদেশে গণহত্যাকারী-ফ্যাসিবাদী-জুলুমবাজ-স্বৈরতান্ত্রিক কোনো শক্তিকে আপনারা কি আবার পুনরুজ্জীবিত করতে চান? বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে আর পুনর্বাসিত করতে চায় না।’
গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ফ্যাসিবাদী একটি দল থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হলেও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা এখনো রাষ্ট্র ও সংবিধানে বিরাজ করছে। যদি সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতাকাঠামোর জায়গায় দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে হয়, তাহলে অবশ্যই একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। নতুন সংবিধানে অবশ্যই ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহি ও বিকেন্দ্রীকরণকে নিশ্চিত করতে হবে। শুধু সংবিধান সংশোধন করে, সংবিধানের মূল কিছু ঠিক রেখে ও পারিপার্শ্বিকতাকে সংশোধন করে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে উন্নীত করা সম্ভব নয়। পরিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে উন্নীত করার জন্য নতুন সংবিধানের স্বার্থে একটি গণপরিষদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের ব্যাপারে রাষ্ট্র শতভাগ দায়িত্ব নিতে এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন আখতার। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, জুলাই যোদ্ধা ও জুলাইয়ের শহীদদের পরিবারকে যথোপযুক্ত রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, সেটাকে ভুলে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যেসব ন্যায্য দাবিদাওয়া নিয়ে রাজপথে হাজির হয়েছেন, অতি দ্রুত তাঁদের সেসব ন্যায্য দাবিদাওয়া বাস্তবায়ন করতে হবে।
মানবিক করিডর প্রসঙ্গ
‘মানবিক করিডর’ দেওয়ার বিষয়ে যে আলোচনা এখন চলছে, তা নিয়েও কথা বলেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মানবিক করিডরের প্রয়োজন আছে কি না, সেই করিডরের নিয়ন্ত্রণ কাদের কাছে থাকবে, সেই করিডর দিয়ে কি পারাপার হবে, প্রতিটি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এনসিপির অন্য নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ। অনুষ্ঠানে এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তির ১৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। যুবশক্তির আহ্বায়ক হয়েছেন তারিকুল ইসলাম, সদস্যসচিব পদে এসেছেন জাহেদুল ইসলাম ও মুখ্য সংগঠক হয়েছেন ফরহাদ সোহেল।