বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতা-কর্মীরা, কক্ষে কক্ষে তাণ্ডবের অভিযোগ

৭ ডিসেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। তারপর আজ শনিবার প্রথম কার্যালয়ে যান দলটির নেতাকর্মীরা
ছবি: সাজিদ হোসেন

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবশেষে প্রবেশ করতে পেরেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। প্রবেশের পর কার্যালয় ঘুরে দেখেছেন দলটির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ। তিনি অভিযোগ করেছেন, কার্যালয়ে তাণ্ডব চালানো হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র খোয়া গেছে।

আজ রোববার বেলা একটার দিকে কয়েকজন আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান এমরান সালেহ। বেলা সোয়া একটার দিকে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখেন। বেলা আড়াইটার দিকে তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন।

আরও পড়ুন

এমরান সালেহ বলেন, দুই দিন আগে নিরাপত্তারক্ষীর কাছে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ফটকের চাবি বুঝিয়ে দেয় পুলিশ। কিন্তু নেতা-কর্মীদের কার্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া ঢোকার মতো পরিস্থিতিও ছিল না। আজ তাঁরা ঢুকতে পেরেছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের একটি কক্ষের ভাঙা দরজা
ছবি: সাজিদ হোসেন

১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের কর্মসূচি ছিল। তার আগে ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে দলটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে একজন নিহত হন। আহত হন অনেকে। সংঘর্ষের পরই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে নেতা-কর্মীদের আটক করে পুলিশ। তারপর থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ ছিল। গতকাল শনিবার রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ হয়। এ গণসমাবেশের পরদিন আজ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকতে পারলেন দলটির নেতা-কর্মীরা।

এমরান সালেহ বলেন, ‘প্রায় চার দিন পর আমরা আমাদের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকতে পেরেছি। বিএনপির ঢাকার গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার ও তার অনুগত প্রশাসন ৭ ডিসেম্বর আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে। না দেখলে বোঝা যাবে না, কী ধরনের তাণ্ডব এখানে হয়েছে।’

আজ রোববার দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পেরেছেন নেতা–কর্মীরা
ছবি: প্রথম আলো
আরও পড়ুন

এমরান সালেহ বলেন, দলীয় চেয়ারপারসনের কক্ষের দরজা ভাঙা। কক্ষে যে জিনিসপত্র ছিল, তা নেই। দলের ভাইস চেয়ারম্যানের দপ্তরে তাঁরা স্কাইপে সভা করেন। স্কাইপের মনিটর, সিপিইউ, ফাইলপত্রসহ কিছু সেখানে নেই। হিসাব বিভাগে কম্পিউটার, সিপিইউসহ কিছু নেই। টাকা রাখার ড্রয়ার ভাঙা। সেখানে টাকা পাওয়া যায়নি। চেকবই পাওয়া যায়নি। কম্পিউটার, সিপিইউ, প্রিন্টার, স্ক্যানার, ল্যাপটপ খোয়া গেছে। ফাইলপত্রগুলো নেই। ছাত্রদল, যুবদল, কৃষক দল, মহিলা দলসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের দপ্তরগুলোও তছনছ করা হয়েছে।

ঘটনা নিন্দা জানিয়ে এমরান সালেহ বলেন, ‘সরকার দেশকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। একইভাবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও তারা লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। আমাদের চলমান আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে তারা এই কাজ করেছে।’

বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে পুলিশের অভিযানের পর আজ দলটির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ (প্রিন্স) দলীয় কার্যালয় পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি কার্যালয়ের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ক্ষয়ক্ষতি দেখেন
ছবি: সাজিদ হোসেন

গুরুত্বপূর্ণ নথি ও যন্ত্র খোয়া যাওয়ার বিষয়ে আইনগত কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি না, জানতে চাইলে সৈয়দ এমরান সালেহ বলেন, কী কী জিনিস খোয়া গেছে, তার তালিকা করবেন তাঁরা। এরপর দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।

আরও পড়ুন

এমরান সালেহ বলেন, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশ ককটেল রেখে নাটক মঞ্চস্থ করেছিল। তাঁরা এখনো জানেন না, তাঁদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশ কী কী রেখে গেছে। এটা নিয়ে তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় তছনছ করার অভিযোগ অস্বীকার করেন রাজধানীর পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন মিয়া। তিনি বলেন, জব্দ তালিকার বাইরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পুলিশ কিছু আনেনি।

আরও পড়ুন

আজ নয়াপল্টন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এখনো বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য অবস্থান করছেন। নাইটিঙ্গেল মোড়ে সাঁজোয়া যান রাখা হয়েছে। নয়াপল্টন এলাকা দিয়ে স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করছে।