আওয়ামী লীগ-বিএনপি মুখোমুখি, জাপা কোন দিকে

জাপা দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হলেও বেশির ভাগ সময় রাজনীতিতে কোনো স্বতন্ত্র অবস্থান নিতে পারেনি।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও জি এম কাদের
ফাইল ছবি

বাংলাদেশের রাজনীতির মূল আলোচ্য এখন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যদিও নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের চেয়ে কার অধীনে, কীভাবে নির্বাচন হবে—সেটা নিয়েই বেশি ‘মাঠ গরম’ হচ্ছে। এ বিষয়ে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন চায়। বিএনপি নির্বাচন চায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে।

নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এমন অবস্থানের মধ্যে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির (জাপা) অবস্থান এখনো অস্পষ্ট। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের শরিক হলেও সাম্প্রতিক সময়ে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা করছেন।

কিন্তু সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক বিভাজন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠলে দলটি ‘স্বাধীনভাবে’ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কি না—এমন প্রশ্ন উঠছে। এ রকম সংশয়ের কারণ হলো জাপা এবং দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অতীত ইতিহাস।

এরশাদের উত্থান ও পতন

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক সেনাবিদ্রোহে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন। সে সময় এরশাদ ছিলেন সেনাপ্রধান। তিনি বিএনপি সরকারের উপরাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে রাষ্ট্রপতি বানানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন এবং পরে তাঁকেই ক্ষমতাচ্যুত করেন।

পরে এরশাদ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পূর্বসূরি জিয়াউর রহমানের মতো তিনিও ক্ষমতায় থেকে দল গঠন করেন এবং সে দলকে নির্বাচনে জিতিয়ে আনেন। এরশাদের আমলে অনুষ্ঠিত সব কটি নির্বাচনই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এরশাদ সরকারের পতন হয়।

গণ-অভুত্থানে কোনো স্বৈরশাসকের পতনের পর সাধারণত তিনি আর রাজনীতিতে ফেরত আসার সুযোগ পান না। কিন্তু এরশাদ সেই বিরল ‘সৌভাগ্যবান’দের একজন, যিনি সেই সুযোগ পেয়েছিলেন। এরশাদ কারাবন্দী থাকলেও তাঁর দল ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় এবং ৩৫টি আসন পায়। সে নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। বিএনপি সরকারের আমলে (১৯৯১-৯৬) তাঁর বিরুদ্ধে ৪০টির বেশি মামলা হয়। এ আমলের পুরোটা সময় এরশাদকে কারাগারেই থাকতে হয়।

জাপায় ভাঙন

বিএনপি আমলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ যে আন্দোলন করেছিল, জাপাও সেই আন্দোলনের অংশীদার ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ১৯৯৬ সালে সংসদ নির্বাচনে জাপা ৩২টি আসন পায়। দলটির সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ ‘ঐকমত্যের সরকার’ গঠন করে। সেই সরকারে জাপা থেকে মন্ত্রী করা হয়। আওয়ামী লীগ আমলে এরশাদ একের পর এক মামলায় জামিন পান এবং ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি কারামুক্ত হন।

আওয়ামী লীগ আমলের (১৯৯৬-০১) শেষ দিকে বিরোধী দলগুলো নিয়ে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। এ জোটে যাওয়া না-যাওয়া নিয়ে জাপায় ভাঙন দেখা দেয়। এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাপা থেকে বেরিয়ে গিয়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু তৈরি করেন জাতীয় পার্টি (জেপি) এবং নাজিউর রহমান মঞ্জুর বানান বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)।

দলের এ বিভক্তির জন্য এরশাদ বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছেন। এরশাদের জাপা প্রথম দিকে চারদলীয় ঐক্যজোটে থাকলেও পরে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে এবং স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়। ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন জিতে ক্ষমতায় আসে। এরশাদের জাপা ১৪টি আসন পায়।

‘আমি পুনরায় জেলে যেতে পারব না’

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের আমলের (২০০১-০৬) শুরু থেকে এরশাদ ‘কৌশলী’ অবস্থান নেন। ২০০৫ সাল পর্যন্ত এরশাদ ক্ষমতাসীন চারদলীয় জোটের সঙ্গে ‘সদ্ভাব’ বজায় রেখেছিলেন। অবস্থাদৃষ্টে বোঝা যায়, তাঁর মধ্যে জেলভীতি ছিল। তাঁর এ জেলভীতি জাপার রাজনীতির নির্ধারক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।

২০০৪ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসর নেওয়ার বয়স ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ বছর করে। এ পরিবর্তনের ফলে সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ছিল এর ঘোর বিরোধী। তাদের অভিযোগ ছিল, কে এম হাসান বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন। তিনি নিরপেক্ষ নন।

লক্ষণীয় বিষয় হলো, এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাপার সংসদ সদস্যরা প্রথমে চতুর্দশ সংশোধনীর বিরোধিতা করলেও পরে সংসদে এর পক্ষে ভোট দেন। এরশাদ পরবর্তী সময়ে দাবি করেছেন, তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে চাপের মুখে তিনি অবস্থান পাল্টাতে বাধ্য হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের ১৭ মে অবমুক্ত করা একটি মার্কিন নথিতে (জেনারেল এরশাদ: ‘আই ক্যানট গো ব্যাক প্রিজন’) এর উল্লেখ আছে। নথিটি কথোপকথন বা সাক্ষাৎকারধর্মী, যেখানে প্রশ্নকর্তা এরশাদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। এরশাদের প্রতি একটি প্রশ্ন ছিল, ‘প্রথমে আপনি চতুর্দশ সংশোধনীর বিরোধিতা করেন এবং পরে আপনার এমপিরা এর পক্ষে ভোট দিল। কেন?’। উত্তরে এরশাদ জানান, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর (খালেদা জিয়া) কার্যালয় থেকে হারিছ চৌধুরী (খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব) তাঁকে সরাসরি হুমকি দিলে তিনি ‘নিরুপায়’ হয়ে তাঁর দলের সংসদ সদস্যদের চতুর্দশ সংশোধনীর পক্ষে ভোট দিতে বলেন।

২০০৫ সালে ক্ষমতাসীন চারদলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪-দলীয় জোট গঠিত হয়। এ দুই জোটই এরশাদের সমর্থন পাওয়ার আশায় ছিল। ২০০৬ সালের শেষ দিকে এরশাদ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ‘মহাজোটে’ যোগ দেন।

মহাজোট সরকারে জাপা

২০০৭ সালে এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ভূমিধস বিজয় পায়। আওয়ামী লীগ একাই দুই-তৃতীয়াংশের বেশি অর্থাৎ ২৩০টি এবং মহাজোটের শরিক দলগুলো ৩২টি আসন পায়। এর মধ্যে জাপা পেয়েছিল ২৭টি আসন। মহাজোট সরকার গঠিত হলে জাপা থেকে এরশাদের ছোট ভাই জি এম কাদেরকে (বর্তমানে দলের চেয়ারম্যান) মন্ত্রী করা হয়।

২০১১ সালের ১০ মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতি এক সংক্ষিপ্ত আদেশে ত্রয়োদশ সংশোধনীকে (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেন। তবে ক্রান্তিকালীন ব্যবস্থা হিসেবে এবং রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তার খাতিরে পরবর্তী দুটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে—এমন কথাও বলা হয়। আদালতের এই রায়ের সূত্র ধরে ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়া হয়। জাপার সংসদ সদস্যরা সংশোধনীর পক্ষে ভোট দেন।

যদিও পরবর্তী সময়ে এরশাদ পঞ্চদশ সংশোধনীর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এ সংশোধনী সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাধা। (পঞ্চদশ সংশোধনীর ‘অসংগতি’ দূর করতে হবে: এরশাদ, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১২, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)। জাপার সংসদ সদস্যরা কেন তাহলে পঞ্চদশ সংশোধনীর পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন, এ ব্যাপারে এরশাদ বা দলের অন্য কোনো দায়িত্বশীল নেতা প্রকাশ্যে কিছু বলেননি।

২০১৪ সালের নির্বাচন: প্রথমে বর্জন, পরে ‘অংশগ্রহণ’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের প্রতিবাদে বহুল আলোচিত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দল। মহাজোটের শরিক জাপাও প্রথমে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ রকম অবস্থায় দৃশ্যপটে হাজির হন ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং। ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর ২১ ঘণ্টার এক সফরে তিনি বাংলাদেশে আসেন এবং এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর এরশাদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব তাঁকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা বলেছেন। সুজাতা সিং ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগেই এরশাদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানান।

কয়েক দিনের মধ্যেই এরশাদ আবার তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন এবং দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি সিএমএইচে (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) ভর্তি বলে খবর পাওয়া যায়। (‘আটক’ করে এরশাদকে সিএমএইচে নিল র‍্যাব, প্রথম আলো অনলাইন ১৩ ডিসেম্বর ২০১৩)। নির্বাচন পর্যন্ত তাঁকে হাসপাতালেই রাখা হয়। এদিকে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাপার কিছু নেতা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা এ সিদ্ধান্ত ‘স্বতঃস্ফূর্তভাবে’, নাকি ‘চাপের মুখে’ নিয়েছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে দুর্নীতির অভিযোগে জেলের ভয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগও যে তাঁকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে অনেক আলোচনা ছিল।

২০১৪ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জোটের প্রার্থীরা ভোটের আগেই ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ‘একতরফা’ এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একাই ২৩৪টি আসন পায় এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৃতীয় দফা সরকার গঠন করে। জাপা পায় ৩৪টি আসন।

২০১৪ থেকে ২০১৮: না সরকারি, না বিরোধী দল

২০১৪ সালের ‘একতরফা’ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাপা সংসদে বিরোধী দল হয়। একই সঙ্গে দলটি থেকে মন্ত্রীও করা হয় এবং এরশাদকে বানানো হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত।

জাপা আসলে সরকারের অংশ, নাকি বিরোধী দল, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিষয়টি নিয়ে ওই সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে জাপার তৎকালীন কো-চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ সংসদে দেওয়া বক্তব্যে তাঁর অস্বস্তির কথা জানিয়েছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা সরকারি দল না বিরোধী দল, পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারি না।’ (যুগান্তর অনলাইন, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮)। একই বক্তৃতায় তিনি মন্ত্রিসভা থেকে জাপার মন্ত্রীদের বাদ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘হস্তক্ষেপ’ চান। তাঁর এমন বক্তৃতার পর জাপার নিয়ন্ত্রণ আসলে কার হাতে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা, মৃত্যুর পর দলে ‘বিরোধ’

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো অংশ নেয়। নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ এ নির্বাচনে মহাজোট ২৮৮ আসন পায় এবং আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করে। মহাজোটের শরিক হিসেবে ২২টি আসন পেয়ে জাপা আবারও বিরোধী দল হয়। এরশাদ হন বিরোধীদলীয় নেতা।

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই এরশাদ মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর এরশাদের ভাই জি এম কাদের চেয়ারম্যান হিসেবে দলের নেতৃত্বে এলেও প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাপায় আরেকটি ধারা কার্যকর আছে। বিভিন্ন ইস্যুতে এরই মধ্যে তাদের মধ্যেকার ‘বিরোধ’ প্রকাশ্যে এসেছে।

জি এম কাদের বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা করে আসছেন। দলে তাঁর সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়ে আদালতে একাধিক মামলাও হয়। তাঁর দলের সাবেক নেতারা মামলাগুলো করেছিলেন। কিন্তু মামলাগুলোর পেছনে অন্য কারও ‘ইন্ধন’ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল বলে দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

জাপা কোন দিকে যাবে?

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জি এম কাদের আবারও সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনামুখর হয়েছেন। গত ২৩ জুলাই টাঙ্গাইলে এক দলীয় কর্মসূচিতে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে ইলেকশন নয়, সিলেকশন হতে পারে।

বর্তমান সরকার দেশের নির্বাচনব্যবস্থা তছনছ করে রাজনৈতিক সংস্কৃতি ধ্বংস করেছে।’ (প্রথম আলো অনলাইন, ২৩ জুলাই ২০২৩)। সরকারের বিরুদ্ধে এ রকম গুরুতর অভিযোগের পরেও জাপার অবস্থান এখনো অস্পষ্ট।

জাপা দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হলেও বেশির ভাগ সময় রাজনীতিতে কোনো স্বতন্ত্র অবস্থান নিতে পারেনি। কোনো না কোনোভাবে তারা ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এতে জাপা দুর্বল হয়েছে বলে বিভিন্ন সময় দলটির নেতারাও স্বীকার করেছেন। জাপাকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি বড় কৌশল ছিল এরশাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো। দলটির বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে হত্যা বা দুর্নীতির কোনো মামলা নেই।

সে ক্ষেত্রে এরশাদের মতো তাঁর জেলভীতি থাকার কথা নয়। তবে দলটির মধ্যে ভিন্ন দুটি ধারা বা নেতাদের মধ্যে ‘বিরোধ’ রয়েছে। এ রকম অবস্থায় ‘ভয়’ বা ‘প্রলোভনের’ ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাপা স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন রয়েছে।