ঝালকাঠি সদরে তিন খানের লড়াই ঘিরে উত্তাপ

  • তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীই আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় ভোটের আমেজ নেই।

  • ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নতুন শঙ্কা তৈরি করেছে বৈরী আবহাওয়া।

ঝালকাঠি জেলার মানচিত্রপ্রতীকী ছবি

নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে ঝালকাঠি সদর উপজেলায় একটি নির্বাচনী পথসভায় হামলার ঘটনার রেশ এখনো কাটেনি। ওই দিন থেকে ভোটারদের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। নির্বাচনের এক দিন আগে গতকাল সোমবারও আনারস প্রতীকের প্রার্থীর দুই কর্মীকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। তাই আজ মঙ্গলবার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেক ভোটার। প্রার্থীদের কেউ কেউ আবার কেন্দ্র দখলের শঙ্কাও প্রকাশ করছেন।

ঝালকাঠি সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশ নিয়েছেন তিনজন। আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান খান আরিফুর রহমান। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আমির হোসেন আমুর প্রার্থী হিসেবে পরিচিত তিনি। আরেক প্রার্থী সুলতান হোসেন খান নির্বাচন করছেন দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আর জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন খান নির্বাচন করছেন কাপ পিরিচ প্রতীকে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরপর দুটি ঘটনা ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে ভোটকেন্দ্রে যাবেন কি না, তা ভাবছেন।
ব্যবসায়ী মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন

গতকাল সারা দিন সদর উপজেলার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এবার তিনজন প্রার্থীই আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় এলাকায় ভোটের উৎসব ও আমেজ নেই। তবে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আমির হোসেন আমুর ‘নিজস্ব প্রার্থী’ থাকায় উত্তেজনা আছে। দলের তিন নেতা প্রার্থী হওয়ায় এই উপজেলায় আওয়ামী লীগে বিভক্ত দেখা দিয়েছে।

গতকাল আদালতপাড়ায় নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে কথা হয় তিনজন ভোটারের সঙ্গে। ব্যবসায়ী মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরপর দুটি ঘটনা ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে ভোটকেন্দ্রে যাবেন কি না, তা ভাবছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক ভোটার জানালেন, তিনজন একই দলের প্রার্থী। তাই নির্বাচনের সেই আমেজ নেই।

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি কামরুন নেছা প্রথম আলোকে বলেন, মানুষ এমনিতেই ভোটকেন্দ্রে যেতে চায় না। তার ওপর দুটি ঘটনায় ভোটারদের আগ্রহ আরও কমবে। অনেক ভোটার আসবে এমনটা আশা করা যায় না।

তবে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে দাবি পুলিশ সুপার আফরুজুল হকের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এর আগে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে মামলা হয়েছে। আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে তথাকথিত গুজব থাকবে। বাস্তবতা হবে ভিন্ন। প্রশাসন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর।

জেলা সদরের ৬ নম্বর বাসন্ডা ইউনিয়নের পশ্চিম বিকনা গ্রামে গতকাল বিকেলে কথা হয় অন্তত ১২ জন ষাটোর্ধ্ব ভোটারের সঙ্গে। তাঁরা ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। মুনাচ্ছেব ব্যাপারী, মোহাম্মদ উজ্জ্বল, রফিক সরদার নিজেদের চাপা ক্ষোভের কথা জানিয়ে বলছিলেন, ভোট উপলক্ষে কোনো প্রার্থী তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। দেখা করতে যাননি। ভোটও চাননি।

মানুষ এমনিতেই ভোটকেন্দ্রে যেতে চায় না। তার ওপর দুটি ঘটনায় ভোটারদের আগ্রহ আরও কমবে। অনেক ভোটার আসবে এমনটা আশা করা যায় না।
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি কামরুন নেছা

সহিংসতার আশঙ্কার কারণে যখন ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কথা হচ্ছে, তখন নতুন শঙ্কা তৈরি করেছে বৈরী আবহাওয়া। গত দুই দিন টানা বৃষ্টি ঝরছে ঝালকাঠিতে। আজ নির্বাচনের দিনও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

আজ ঝালকাঠি সদরের পাশাপাশি নলছিটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেরও ভোট গ্রহণ। সদরে মোট ভোটার ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৯ জন। কেন্দ্র আছে ৭৭টি। অন্যদিকে নলছিটি উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৭৪। কেন্দ্রের সংখ্যা ৭০। জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় বলছে, এর মধ্যে ৮৪টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৫০টি ও নলছিটিতে ৩৪টি।

সহিংসতার আশঙ্কার কারণে যখন ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কথা হচ্ছে, তখন নতুন শঙ্কা তৈরি করেছে বৈরী আবহাওয়া। গত দুই দিন টানা বৃষ্টি ঝরছে ঝা

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৪ মে দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থীর ওপর নির্বাচনী পথসভায় হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সুলতান হোসেন খান দায়ী করেন আরেক প্রার্থী খান আরিফুর রহমানকে। গতকাল খান আরিফুর রহমানের (আনারস) দুজন কর্মীকে কুপিয়ে আহত করা হয়। পরে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এ ঘটনায় খান আরিফুর রহমান দায়ী করেন কাপ পিরিচ প্রার্থী নুরুল আমিনকে।

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খান আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনগণ আমাকেই বেছে নেবে। আনারসের বিজয় নিশ্চিত। তবে প্রতিপক্ষ দোয়াত কলম ও কাপ পিরিচের প্রার্থী আমার বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করছে। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করছে।’ পাল্টা অভিযোগ করে নুরুল আমিন খান বলেন, ‘আমার এজেন্ট ও কর্মীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। ভোটারদেরও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে কাপ পিরিচ প্রতীক জয়লাভ করবে।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতান হোসেন খান (দোয়াত কলম) বলেন, ‘আমি ও আমার কর্মীরা হামলার শিকার হয়েছি। নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চলছে। কেন্দ্র দখলের পাঁয়তারা চলছে। সুষ্ঠু ভোট হলে আমার বিজয় নিশ্চিত।’

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনগণ আমাকেই বেছে নেবে। আনারসের বিজয় নিশ্চিত। তবে প্রতিপক্ষ দোয়াত কলম ও কাপ পিরিচের প্রার্থী আমার বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করছে। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খান আরিফুর রহমান

এদিকে নলছিটি উপজেলা পরিষদে প্রার্থী তিনজন। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জি কে মোস্তাফিজুর রহমান (দোয়াত কলম), উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তছলিম উদ্দীন চৌধুরী (আনারস) ও সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন খান সেলিম ভোটে লড়ছেন (মোটরসাইকেল)।