ওসমান হাদিকে হত্যা করে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে: অভিযোগ তাঁর ভাইয়ের
‘ওসমান হাদি বলেছিল, ফেব্রুয়ারিতে দেশে নির্বাচন হতে হবে। সেই নির্বাচন করার জন্য সে প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছিল। কিন্তু তাকেই হত্যা করে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে,’ কথাগুলো বলেছেন শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদির বড় ভাই শরিফ ওমর বিন হাদি। আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘শহীদি শপথ’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
ওসমান হাদির খুনিদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার ও ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার নিশ্চিত করা এবং কাঙ্ক্ষিত ইনসাফের বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে এই ‘শহীদি শপথ’ পাঠের আয়োজন করে ইনকিলাব মঞ্চ। ওসমান হাদি এই সংগঠনের আহ্বায়ক ছিলেন।
শরিফ ওমর বিন হাদি বলেন, ‘ওসমান হাদি শহীদ হয়েছে আজকে ষষ্ঠ দিন। সরকার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি উপস্থাপন করে নাই। সরকারের কাছে একটাই দাবি জানাচ্ছি, শহীদ ওসমান হাদির গোটা খুনি চক্রকে জাতির সামনে উপস্থাপন করুন।’
সরকারের উদ্দেশে ওসমান হাদির ভাই বলেন, ‘একটা জিনিস মনে রাখবেন, বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লবের আগে যাঁরা ক্ষমতাধর ছিলেন, যাঁরা রাষ্ট্রকে নিজেদের মনে করতেন; তাঁরা কিন্তু আজকে কেউ এই বাংলাদেশে নাই। তাঁরা পালাতে বাধ্য হয়েছেন। ওসমান হাদির বিচার যদি না হয়, আপনারাও একদিন বাংলাদেশ থেকে পালাতে বাধ্য হবেন।’
ওসমান হাদি কোনো ‘এজেন্সির’ কাছে মাথা নত করেননি উল্লেখ করে ওমর বিন হাদি বলেন, ‘যে এজেন্সির হয়ে, যে রাষ্ট্রের হয়ে আপনারা ওসমান হাদিকে হত্যা করেছেন; মনে রাখবেন, ওসমান হাদি কোনো এজেন্সি, কোনো রাষ্ট্র, কোনো তাঁবেদারের কাছে কখনোই মাথা নত করে নাই। সে যদি মাথা নত করত, অন্যান্য বিক্রি হওয়া নেতার মতোই সে সুখে জীবনযাপন করতে পারত।’
শরিফ ওসমান হাদি বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে পথ দেখিয়েছে উল্লেখ করে তাঁর ভাই বলেন, ‘কীভাবে রাজপথে আন্দোলন করতে হয়, কীভাবে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়, এজেন্সির রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে জনসাধারণের নেতা হতে হয়; ওসমান হাদি এটা আমাদের সামনে প্রমাণ করে গেছে।’
সরকার এ হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে পারে না মন্তব্য করে ওমর বিন হাদি বলেন, ‘জীবিত ওসমান হাদির চেয়ে শহীদ ওসমান হাদি অনেক গুণ শক্তিশালী হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসছে। বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ ওসমান হাদির বিচারের অপেক্ষায় আছে। সরকারের কাছে আমি অনুরোধ করব, আপনারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ওসমান হাদিকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যার দায় আপনারা এড়াতে পারবেন না; আপনাদেরও বিচার হবে। আজ হোক, ১০ বছর পরে হোক; বিচারের কাঠগড়ায় আপনাদের দাঁড়াতেই হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে ওমর বিন হাদি আরও বলেন, ‘আপনারা যদি মনে করেন, আর দুই মাস পরে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে চলে যাবেন, বিদেশে চলে যাবেন। মনে রাখবেন, এই দেশের জনতা আপনাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেই। তাই সরকারকে অনুরোধ করব, দ্রুত খুনিদের আমাদের সামনে উপস্থাপন করুন। নির্বাচনের পরিবেশ যাতে বিঘ্ন না হয়। খুনির বিচার করুন। আপনারাই ওসমান হাদিকে হত্যা করিয়েছেন, আবার আপনারাই এটাকে ইস্যু করে নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করতেছেন, তা আমরা কখনোই হতে দেব না।’
ওসমান হাদির ভাই বলেন, ‘ওসমান হাদি বলেছিল, ফেব্রুয়ারিতে দেশে নির্বাচন হতে হবে এবং সেই নির্বাচন করার জন্য সে প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছিল। কিন্তু তাকেই হত্যা করে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে।’
এ সময় ওমর বিন হাদি বলেন, ‘প্রিয় বিপ্লবী জনতা, আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে শহীদি শপথ পাঠ করার পরে পরবর্তী প্রোগ্রামের (কর্মসূচির) জন্য অপেক্ষা করবেন। পরবর্তী প্রোগ্রাম থেকে খুনিদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত রাজপথ ছেড়ে আমরা যাব না, ইনশা আল্লাহ।’
‘শহীদি শপথ’ পাঠ শেষে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের। এর মধ্যে রয়েছে ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর ওসমান হাদিকে নিয়ে দেয়াললিখন; তাঁর সংগ্রাম ও লড়াইয়ের কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপন। ২৬ ডিসেম্বরের কর্মসূচি পরে ঘোষণা করা হবে বলে জানান ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব।