বিএনপির উদ্দেশে শেষ বার্তা দিল আওয়ামী লীগ। আর এই বার্তা হলো—শেখ হাসিনাই নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই বার্তা দেন। বিএনপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, অবরোধ দিলে পাল্টা অবরোধ হবে, বিএনপিকে দাঁড়াতে দেওয়া হবে না।
আজ বুধবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আয়োজিত ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ সমাবেশে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এই সমাবেশের আয়োজন করে।
বিএনপি ঢাকা অবরোধ করলে পাল্টা অবরোধ করার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘দাঁড়াতে দেব না। কারণ, যারা বলেছে শান্তিপূর্ণ নিরপেক্ষ, অবাধ নির্বাচন করতে হবে; বাধা যারা দেবে তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা। আমরা তো নির্বাচন চাই, আমরা কেন বাধা দেব? অবরোধ যারা করবে, ঢাকা অচল যারা করবে, তারাই বাধা দিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে বন্ধুরা কী ব্যবস্থা নেয়, আমরা তা দেখব।’
ওবায়দুল কাদের সমাবেশে বক্তৃতা শুরু করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নাম উল্লেখ করে। তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুলের পকেট গরম, মালপানি ভালো সরবরাহ, ভালো আসছে, পকেট গরম, তাঁর কথাও গরম। হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। আমাদের ধমক দেন, ভয় দেখান। মির্জা ফখরুল পাঁচতারা হোটেলের নাশতা খেয়ে অনশন করেন তিন ঘণ্টা, আড়াই ঘণ্টা পরে বিদেশি জুস খেয়ে অনশন বন্ধ করেন। এ আন্দোলন তাঁরা করছেন।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘আমাদের বার্তা দিচ্ছে, দিনক্ষণ বলে দিচ্ছে, কবে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে। আমি ফখরুল সাহেবকে বলতে চাই, আজ নয় কাল—এভাবে বলবেন না। বলেন, কখন আমাদের শেষ বার্তা? আপনারা কে বার্তা দেওয়ার? কার কাছে ক্ষমতা দেবেন শেখ হাসিনা? আপনার কাছে নাকি দণ্ডিত যুবরাজ তারেক রহমানের কাছে? কার কাছে দেবে। আমিও বার্তা দিয়ে দিচ্ছি। শেষ বার্তা। আপনি শেষ বার্তা দিয়েছেন ক্ষমতা ছেড়ে দিতে, আমি আপনাকে শেষ বার্তা দিচ্ছি, আগামী নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নির্বাচনী সরকারের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। বার্তা দিয়ে দিচ্ছি, নির্বাচনের পর আল্লাহর রহমতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে শেখ হাসিনা আবারও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে বসবেন। এটাই আমাদের বার্তা। অন্যথা হবে না।’
বিএনপিকে খুনির দল আখ্যা দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এদের হাতে রক্তের দাগ। এদের হাতে ১৫ আগস্টের রক্ত, শিশু রাসেলের রক্ত, বঙ্গবন্ধুর রক্ত, বেগম মুজিবের রক্ত, জাতীয় চার নেতার রক্ত। এরা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকেও হত্যা করতে চেয়েছিল, যেখানে আইভি রহমানসহ ২৩ জনের রক্ত। এরা বাংলার শতসহস্র মায়ের বুক খালি করেছে। এ অপশক্তির হাতে বাংলাদেশের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে পারি না।’
তত্ত্বাবধায়ক মরে গেছে উল্লেখ করে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক আজিমপুরে শুয়ে আছে। ওইটা আর ফিরে আসবে না। ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক আর আসবে না। ওয়ান-ইলেভেনের দুঃস্বপ্ন কি সফল হবে?’
পশ্চিমাদের সমর্থনে উৎসাহিত হচ্ছি—বিএনপি মহাসচিবের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ফখরুল সাহেব দুনিয়ার অবস্থা ভালো না। যাদের কথা বলছেন তাদের ঘর সামলানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। যাদের কথা বলছেন, তাদের চারপাশে অশান্তির আগুন, এ আগুন সামাল দিতে পারছে না। তারা ঘর সামলাবে! না এখানে এসে আপনাকে উৎসাহ দেবে? সময় চলে গেছে। উৎসাহ দেওয়ার দিন চলে গেছে।’
খেলা হবে, এই খেলায় জিততে হবে জানিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এ স্পিরিট যেন থাকে। কেউ কেউ বলে, আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকলে স্পিরিট বাড়বে। সরকারি দলে থাকলে একটু নরম নরম। এখন তো দেখছি স্পিরিট আছে। এটা থাকবে তো?’ এ সময় সমাবেশে আগতরা ‘হ্যাঁ’ বলে জবাব দেন।
নৌকা ছাড়া উপায় নেই এমন মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের শান্তি চাইলে নৌকা, সুখ চাইলে নৌকা, উন্নয়ন চাইলে নৌকা, মুক্তিযুদ্ধ চাইলে নৌকা, স্বাধীনতা চাইলে নৌকা। নৌকা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র থাকবে না। সারা দেশে উন্নয়ন চাইলে শেখ হাসিনার নৌকায় ভোট দিতে হবে।
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, সারা দুনিয়ায় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে। দাম বাড়াচ্ছে বড় বড় শক্তি, বাংলাদেশের মানুষ এর শাস্তি পাচ্ছি। সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা স্বীকার করি, একজন মানুষ আছে, কষ্ট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে যার রাতে ঘুম নেই। তিনটা ঘণ্টা তিনি ঘুমান। বঙ্গবন্ধুর পর এমন সৎ নেতা আমরা দেখিনি। শেখ হাসিনা নেতা, আমাদের বুকে সাহস আছে।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফী। আরও বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, মির্জা আজম, মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান, ঢাকার দুই মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ফজলে নূর তাপস প্রমুখ।