১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে সন্ধ্যায় বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় সাড়ে ৪ মাস পর ১৪–দলীয় জোটের বৈঠক বসছে আজ। জোটের নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সন্ধ্যা সাতটায় এ বৈঠক ডেকেছেন।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটের শরিকদের সম্পর্কে একধরনের তিক্ততা তৈরি হয়। নির্বাচনের পর জোটের ভেতরে সম্পর্কের টানাপোড়েন দূর করতে শরিক দলগুলোর নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের অনুরোধ জানিয়ে আসছিলেন।

শরিক দলগুলোর একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের ব্যাপারে তাঁদের অনুরোধ এত দিন গুরুত্ব পায়নি। রাজনৈতিক দিক থেকে প্রয়োজন না হলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ১৪–দলীয় জোটকে গুরুত্ব দেয় না বলে শরিক দলগুলোর নেতারা মনে করেন।

একটি শরিক দলের শীর্ষ নেতা প্রথম আলোকে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সরকার সমালোচনার মুখে রয়েছে। সরকার সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

এরই মধ্যে দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি এসেছে। যদিও এই নিষেধাজ্ঞাকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক বলা হচ্ছে এবং সরকার এটিকে গুরুত্ব দিতে চাইছে না। কোনো কোনো মন্ত্রীর বক্তব্যে এমনটা প্রকাশ পাচ্ছে। কিন্তু ১৪ দলের শরিকদের কেউ কেউ মনে করেন, অবসরপ্রাপ্ত একজন জেনারেলের ওপর ওই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও তা সরকারকে বিব্রত করে।

এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ঝিনাইদহ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের কোলকাতায় খুন হওয়ার ঘটনা দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি করেছে। তাঁর খুন হওয়ার ঘটনার প্রেক্ষাপটে দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, এর পেছনে সীমান্তে চোরাচালান-সংক্রান্ত বিরোধের বিষয় থাকতে পারে। ফলে জন্ম দিয়েছে অনেক প্রশ্নের।

এমন পটভূমিতে ১৪–দলীয় জোটের বৈঠক হতে যাচ্ছে। তবে চলমান ঘটনাগুলো এই বৈঠকে আলোচনা করার সুযোগ হবে কি না, সেটা জানেন না শরিক দলগুলোর নেতারা।

জোটের একজন নেতা জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে জোটই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। জোট টিকে থাকবে কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছিল। এখন জোটের ভেতরে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য এই বৈঠক করা হচ্ছে। ফলে বিব্রতকর কোনো বিষয়ে আলোচনার সুযোগ কম বলে শরিকেরা মনে করছে।

গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে ছয়টি আসনে সমঝোতা করে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কেন্দ্রীয় নেতা এ কে এম রেজাউল করিম জয়ী হয়েছেন।

অন্য সবাই হেরে গেছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে শরিকদের ১৩টি আসনে ছাড় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে সাতটিতে জয়ী হয় তারা। পরে উপনির্বাচনে আরেকটি আসন পায় ১৪ দলের শরিকেরা। গত সংসদে ১৪ দলের শরিকদের দুজন নারী সংসদ সদস্যও ছিলেন। এবার সংরক্ষিত নারী সদস্য একজন।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকেরা তাদের ছেড়ে দেওয়া ছয়টি আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছিল। কিন্তু তা আমলে নেয়নি আওয়ামী লীগ। শরিকেরা গুরুত্ব না পাওয়ায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আজ বৈঠকে  মূলত জোটের শরিকদের ক্ষোভ, অস্বস্তি দূর করার চেষ্টা থাকবে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন।