আন্দোলন যুগপৎ হলেও বিএনপির একক সিদ্ধান্তে কর্মসূচি, শরিকেরা অসন্তুষ্ট
আন্দোলন যুগপৎ হলেও বিএনপি একক সিদ্ধান্তে কর্মসূচি নিচ্ছে। এই অভিযোগ তুলেছে দলটির সঙ্গে আন্দোলনে থাকা দল ও জোটগুলো। এসব জোটের নেতাদের অনেকে বলেছেন, কর্মসূচি ঘোষণার আগে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে না বিএনপি। অনেকটা এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে বাকিদের তা জানিয়ে দেয় দলটি।
বিএনপির এমন চাপিয়ে দেওয়া কর্মসূচি নিয়ে শরিক অন্য দল ও জোটগুলোর মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জোটগুলো তাদের নিজ নিজ ফোরামে আলোচনাও করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম শরিক গণতন্ত্র মঞ্চ বিএনপি ঘোষিত ১ এপ্রিল শনিবার দেশের সব মহানগর ও জেলায় অবস্থান কর্মসূচি পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরেক শরিক ১২-দলীয় জোট কর্মসূচি আংশিক পালন করবে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ বেশ কিছু দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে একাধিক জোট। এর মধ্যে রয়েছে সাত দলের গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট ও ১১ দলের জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। এর বাইরে এলডিপি ও গণফোরাম (মন্টু) নিজেদের মতো করে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করছে।
গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করছে আন্দোলনকারীরা। গত তিন মাসে গণমিছিল, গণ–অবস্থান, পদযাত্রা, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের মতো কর্মসূচি দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। সর্বশেষ ১৮ মার্চ সমাবেশের কর্মসূচি ছিল।
বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট সূত্রে জানা যায়, যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সব দল ও জোটের পক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি। এটি তাদের সিদ্ধান্ত ছিল। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কর্মসূচি ঘোষণার আগে শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করা হয় না। পরবর্তী সময়ে কী কর্মসূচি ও কবে পালন করা হবে, তা বিএনপির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর শরিকদের জানানো হয়। আন্দোলন সমন্বয় করতে লিয়াজোঁ কমিটি হয়েছে, এই কমিটিতে আলোচনা করে কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা থাকলেও তা হয়নি বলে বিএনপির শরিকেরা অভিযোগ করছেন।
এ বিষয়ে ১২-দলীয় জোটের সমন্বয়কারী এবং জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, যখন আন্দোলন যুগপৎ হবে, তখন সবার মতামতের ভিত্তিতেই কর্মসূচি ঘোষণা করা উচিত, সেটাই স্বাভাবিক। তবে সব সময় সেটা প্রতিপালন করা সম্ভব না। সে ক্ষেত্রে বিএনপি কর্মসূচির বিষয়টি পরে শরিকদের জানিয়ে দেয়।
তবে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির অন্যতম সদস্য ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছু কর্মসূচি আমাদের নিজস্ব, কিছু যুগপৎ আছে। যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি আলোচনা করেই ঠিক করা হয়। কর্মসূচি চাপিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা নেই।’
২৪ মার্চ পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। ১৮ মার্চের সর্বশেষ সমাবেশ থেকে জোটের নেতারা জানান, রোজায় যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি গণসংযোগ, বৈঠক ও কর্মীদের নিয়ে আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকবে। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে রমজান মাসেও যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। রোজায় নতুন কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে কোনো শরিকের সঙ্গেই আলোচনা করেনি দলটি।
২৪ মার্চ রাজধানীর লেডিস ক্লাবে আলেম-ওলামা ও এতিমদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১ এপ্রিল দেশের সব মহানগর ও জেলায় বেলা দুইটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। ৮ এপ্রিল দেশের সব মহানগরের থানা ও উপজেলা পর্যায়ে বেলা তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে। এ ছাড়া ৯ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বিভাগ অনুযায়ী বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচি পালিত হবে।
গত সোমবার রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শরিকদের সঙ্গে আলোচনা না করে কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সভা সূত্রে জানা যায়, রোজার মাসে কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের অধিকাংশ নেতা অসন্তুষ্ট ছিলেন।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, রোজার মাসে কর্মসূচি পালনের বিষয়ে বিএনপি আলোচনা করেনি। গণতন্ত্র মঞ্চ বিএনপি ঘোষিত পরবর্তী যুগপৎ কর্মসূচি পালন করবে না। গণতন্ত্র মঞ্চ পৃথকভাবে কর্মসূচি দিয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আগামী ৩ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করা হবে।
রোজায় বিএনপি ঘোষিত টানা কর্মসূচি নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে ১২-দলীয় জোটেও। কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আলোচনা না করায় ১২-দলীয় জোটও এই কর্মসূচি পুরোপুরি পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
১২-দলীয় জোটের সমন্বয়কারী মোস্তফা জামাল হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, রোজায় বিএনপি যে কর্মসূচি দিয়েছে, সেটি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তাদের ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে শুধু ১ এপ্রিলের কর্মসূচি পালন করবে ১২-দলীয় জোট। বাকি কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হবে না।