এমসি কলেজে শিক্ষার্থীর ওপর শিবিরের হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধীদের বিক্ষোভ
সিলেটের এমসি কলেজের এক শিক্ষার্থীর ওপর ইসলামী ছাত্রশিবিরের হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মিছিল শেষে সমাবেশে ছাত্রনেতারা শিবিরকে গুপ্ত রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ডাস চত্বর থেকে মিছিল শুরু করে। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ডাস চত্বরের সামনে এসে শেষ হয়। সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিলে ‘রগকাটার রাজনীতি বাংলাদেশে চলবে না’, ‘শিবিরের সন্ত্রাস, রুখে দাও ছাত্রসমাজ’, ‘সিলেটে রগ কাটে, প্রশাসন কী করে’ প্রভৃতি স্লোগান দেওয়া হয়।
মিছিল শেষে সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস ছাত্রশিবিরকে ইঙ্গিত করে বলেন, আগস্টের সময় ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে যে ঐক্য তৈরি হয়েছিল, তা নষ্ট করতে একটি ছাত্রসংগঠন উঠেপড়ে লেগেছে। সিলেটের এমসি কলেজের ঘটনা দেখে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আবরার ফাহাদের কথা মনে পড়ে। বুকে রক্তক্ষরণ হয়।
গণেশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময়ে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ গেস্টরুম-গণরুম করে শিক্ষার্থীদের মিছিলে নিতে বাধ্য করত। আমরা ভেবেছিলাম, ৫ আগস্টের পর তা বন্ধ হবে। কিন্তু আমরা দেখলাম, সিলেটের এমসি কলেজে এক শিক্ষার্থী তার মনের আকাঙ্ক্ষা “গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হোক, গুপ্ত না থেকে সবাই প্রকাশ্যে রাজনীতি করুক” মতামত দেওয়ার কারণে একাত্তরের পরাজিত শক্তি শিবির তাকে বেধড়ক মারধর করেছে।’
ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ‘দীর্ঘ লড়াই–সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণের লক্ষ্যে ছাত্রদলের শত শত নেতা জীবন দিয়েছেন, গুম হয়েছেন। আজকে একটি গুপ্ত সংগঠন সেই চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। জুলাই-আগস্টের সেই চেতনাকে আমরা ভূলুণ্ঠিত হতে দেব না।’
গুপ্ত রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসুন
এমসি কলেজের শিক্ষার্থীকে মারধরের প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশ করেছে। সমাবেশে তারা শিবিরকে গুপ্ত রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে। তারা আজ রাত সাড়ে আটটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বর হয়ে আবার রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘বাংলাদেশে সহিংসতার রাজনীতি আবার ফিরে আসছে। শিক্ষাঙ্গনগুলোতে ছাত্রদের ওপরে, ছাত্রদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপরে হামলা আসছে। সিলেটের এমসি কলেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজনের ওপর ইসলামী ছাত্রশিবিরের একজন কর্মী আঘাত করেছে, তাকে আহত করেছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।’
আরিফ সোহেল বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সহিংসতার রাজনীতি ফেরত আসাকে আমরা অবশ্যই প্রতিহত করব। বাংলাদেশে সহিংসতার কোনো রাজনীতি আর হবে না। ছাত্রদল বা ছাত্রশিবির যদি সহিংসতা কিংবা পুরোনো রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে চায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের প্রতিহত করবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সন্ত্রাসকে বিতাড়িত করেছিলাম। কিন্তু আমরা দেখছি, বিভিন্ন সংগঠন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন করে সন্ত্রাস কায়েম করতে চায়। আমরা তাদের এই সমাবেশ থেকে ধিক্কার জানাই।’
আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘আজ এমসি কলেজে আমাদের এক সহযোদ্ধার ওপর বর্বর হামলা চালিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। এর আগে আমরা দেখেছি, কুয়েটে ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের ওপর কীভাবে হামলা চালিয়েছে। আমরা এসব সন্ত্রাসবাদের নিন্দা জানাই৷ জড়িত ব্যক্তিদের অতি দ্রুত আইনের আওতায় আনার মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস প্রতিহত করতে হবে।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী, হাসিব আল ইসলাম প্রমুখ।