সাতজনের জয়ে নানা আলোচনা বিএনপিতে

বিএনপি

দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় তাঁরা বহিষ্কৃতও হয়েছেন। এর মধ্যেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপির (বহিষ্কৃত) সাত নেতা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নির্বাচনে এই সাতজনের জয়কে দলের চেয়ে ব্যক্তির জনপ্রিয়তা হিসেবে দেখছেন।

অবশ্য নির্বাচনী এলাকার বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও স্থানীয় বিএনপির অনেকে নেপথ্যে থেকে এসব প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে কাজ করেছেন। এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সংশ্লিষ্ট উপজেলায় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার প্রার্থিতা। তাঁদের নিজেদের মধ্যে ভোট ভাগাভাগি হওয়ায় সেটির সুবিধাও পেয়েছেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতারা জয়ের ক্ষেত্রে।

যদিও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে বহিষ্কৃত ২৭ জনের মধ্যে মাত্র সাতজনের জয়ী হওয়া নিয়ে বিএনপিতে নানা আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া রয়েছে। দলের একটি অংশ মনে করে, নির্বাচনে প্রার্থী হলে দল বহিষ্কার করবে জেনেও তাঁরা ভোটে অংশ নেন। বহিষ্কারের পর দলের নেতা-কর্মীদের সহযোগিতা ছাড়াও জেতার মতো অবস্থান না থাকলে দলের সঙ্গে এমন বিদ্রোহের প্রয়োজন ছিল না। যাঁরা পরাজিত হয়েছেন, তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সেই সঙ্গে দলকেও বিতর্কের মধ্যে ফেলেছেন।

অবশ্য বিএনপির বহিষ্কৃত নেতাদের জয়ের বিষয়ে আরেক ধরনের আলোচনা রয়েছে। অনেকে বলছেন, যাঁদের সক্ষমতা ছিল, তাঁরা জিতেছেন। ভোটকেন্দ্রেও তারা কর্মী-সমর্থক এবং অনুসারীদের হাজির করতে পেরেছেন। যেসব প্রার্থী এটি করতে পারেননি, তাঁরা হেরেছেন। এ ক্ষেত্রে যেসব এলাকায় বেশি ভোটার উপস্থিত হয়েছেন, সে অঞ্চলে বিএনপির সাংগঠনিক দায়িত্বশীলদেরও প্রশ্নের সম্মুখীন করছে। কারণ, তাঁরা দলীয় প্রার্থীদের তো নই, ভোটারদেরও নিরুৎসাহিত করতে পারেননি বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।

ঢাকার অদূরে গাজীপুর সদরে জেলা বিএনপির সহসভাপতি (বহিষ্কৃত) ইজাদুর রহমান ১৮ হাজার ৯৬৯ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বর্তমান চেয়ারম্যান ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রিনা পারভীনকে ৮ হাজার ৭৬১ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, ইজাদুরের জয়ের ক্ষেত্রে গত সংসদ নির্বাচন ঘিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভক্তি কাজ করেছে।

অবশ্য ইজাদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মারা গেলে বিএনপি এসে আমাকে কবর দেবে না। এলাকার মানুষই আমাকে কবর দিতে আসবে। এলাকার মানুষ চেয়েছে আমি নির্বাচন করি।’

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় তৃতীয়বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মো. আমিনুল ইসলাম। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের কারণে তাঁর জয়টা সহজ হয়েছে। এর সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ তাঁকে জয়ী হতে সহায়তা করেছে। দল তাঁকে বহিষ্কার করলেও নেপথ্যে দলের অনেকে তাঁর হয়ে কাজ করেছেন।

আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে সব সময় সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি, তাদের সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়িয়েছি। সুষ্ঠু নির্বাচনে এ জয় হয়েছে।’

এ ছাড়া বহিষ্কৃত নেতাদের মধ্যে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে মো. আবদুল হামিদ, সিলেটের বিশ্বনাথে মোহাম্মদ সুহেল আহমদ চৌধুরী ও বান্দরবান সদরে আব্দুল কুদ্দুস জয়ী হয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে মো. আনোয়ারুল ইসলাম ও গোমস্তাপুর উপজেলায় আশরাফ হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

এবার ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ৮ মে প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত ১৩৯টি উপজেলায় বিএনপির ৮০ জন নেতা প্রার্থী হন। এর মধ্যে দুই ধাপে ৭৬ জনকে বহিষ্কার করে বিএনপি। বাকি চারজন দল থেকে অব্যাহতি নিয়ে প্রার্থী হন। এর মধ্যে ২৭ জন চেয়ারম্যান পদে, বাকিরা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন।

গতকাল নয়াপল্টনের সমাবেশে উপজেলা নির্বাচনকে ‘আমি’ ও ‘ডামি’ নির্বাচন বলে সমালোচনা করেন বিএনপির নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রিজভী বলেন, বিএনপি যে এই নির্বাচন বর্জন করেছে, জনগণ তাতে সমর্থন দিয়েছে।