ঢাবির ‘আওয়ামী ভিসি-প্রক্টরের প্ররোচনায়’ ছাত্রদলের ওপর হামলা: রিজভী

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলাকে ‘নির্মম, কাপুরুষোচিত ও সহিংস সন্ত্রাসী ঘটনা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। হামলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান ও প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানীকে দায়ী করে তিনি বলেন, আওয়ামী ভিসি (উপাচার্য) ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা প্রক্টরের প্ররোচনায় ছাত্রদলের ওপর নারকীয় হামলা হয়েছে। এই বর্বর, অমানবিক ও কাপুরোষোচিত আচরণের জবাব তাঁরা (উপাচার্য-প্রক্টর) পাবেন।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সামনে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। এর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে সন্ধ্যায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকে ছাত্রদল। সেখানে রিজভী এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ছাত্রলীগ যে নির্মম, কাপুরুষোচিত ও সহিংস সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছে, বিএনপির পক্ষ থেকে আমি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমি মনে করি, এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পাতানো ফাঁদ। আওয়ামী ভিসি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা প্রক্টরের প্ররোচনায় ছাত্রদলের ওপর নারকীয় হামলা হয়েছে। এখন এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে যে শেখ হাসিনা তাঁর চাকরবাকর ছাড়া উপাচার্য-প্রক্টর নিয়োগ করেন না। ছাত্রদলের ওপর হামলার ঘটনায় তারই প্রতিফলন দেখা গেল। তারা মনে করেছে, রক্ত ঝরালেই বিএনপি ও ছাত্রদলের ছেলেরা ভয় পেয়ে যাবে। এ ধারণা অমূলক। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো অন্যায় পার পায়নি। জনতার পক্ষ থেকে যে ট্রাইব্যুনাল হবে, সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের বিচার হবে এবং জনগণ তাঁদের উচিত শাস্তি দেবে। এই বর্বর, অমানবিক ও কাপুরুষোচিত আচরণের জবাব তারা পাবেন।

ক্যাম্পাসে ঢুকতে গেলে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ২৭ সেপ্টেম্বর
ছবি: সাজিদ হোসেন

ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রদলের ১৫ নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানান রিজভী। তাঁর দাবি অনুযায়ী, আহত নেতা–কর্মীরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সম্পাদক মো. মাসুম বিল্লাহ, আবদুল জলিল আমিনুল, ফারহান আরিফ, নাছির উদ্দীন, রাজু আহমেদ, সুপ্রিয় দাশ ও নাজমুস সাকিব, সহসাধারণ সম্পাদক মুন্সী সোহাগ, প্রচার সম্পাদক ইমাম আল নাসের, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক জসিম খান, বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাইফ খান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকিব জাভেদ এবং কবি জসীমউদ্‌দীন হল শাখার কর্মী জোসেফ আল জুবায়ের। আহত ব্যক্তিো ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ‘সন্ত্রাসী হামলার’ প্রতিবাদে ২৯ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) বেলা তিনটায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের উদ্যোগে ছাত্র সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন কাজী রওনকুল। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন তিনি। ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ‘উপাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক। সৌজন্য সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ করে দিয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে একটি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংগঠনের নেতা–কর্মীদের মেরে আহত করার নজির ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসে আমরা দেখিনি। যে উপাচার্য ও প্রক্টর ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনকে লেলিয়ে দিয়ে একটি ছাত্রসংগঠনকে ক্যাম্পাসে রাজনীতির চর্চা করতে না দেওয়ার জন্য এভাবে হামলা করাতে পারেন, আমরা সেই উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করছি। এমন ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মতো সম্মানিত পদে থাকতে পারেন না বলে মনে করি। প্রক্টর ছাত্রদলকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা
ছবি: প্রথম আলো

কাজী রওনকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ছাত্রদলকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। আমাদের কাছে আগেই তথ্য এসেছিল যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টর আমাদের দাওয়াত করলেও তাদের ইন্ধনেই ছাত্রলীগ ছাত্রদলের ওপর হামলা করতে পারে। এটি জানার পর আমরা বারবার প্রক্টরের সঙ্গে আমরা বারবার কথা বলার চেষ্টা করেছি। আমরা তাঁকে বলেছি, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ছাড়াও মহানগর ছাত্রলীগের বহিরাগত সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে। প্রক্টর আমাদের বারবার আশ্বস্ত করেছেন। তবু ছাত্রলীগ ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে। ছাত্রলীগের এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে আমরা ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানাই।’

আরও পড়ুন