অবৈধ টাকা ব্যাংকে আনতে এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ছয় দফা দিবস উপলক্ষে আজ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাছবি: পিআইডি

অবৈধ টাকা ব্যাংক–ব্যবস্থায় নিয়ে আসার জন্যেই বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এটাকে বড়শিতে আধার গেঁথে মাছ ধরার সঙ্গে তুলনা করেন।

আজ শুক্রবার তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ছয় দফা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা প্রশ্ন আসছে কালোটাকা নিয়ে। কালোটাকা নিয়ে আমি শুনি, অনেকে বলেন কালোটাকা? তাহলে আর কেউ ট্যাক্স দেবেন না। ঘটনা কিন্তু এটা নয়। এটা শুধু কালোটাকা নয়। জিনিসের দাম বেড়েছে, এখন এক কাঠা জমি যাঁর, সে–ই কোটিপতি। কিন্তু সরকারি যে হিসাব, সেই হিসাবে কেউ বেচেন না, বেশি দামে বেচেন বা কিছু টাকা উদ্বৃত্ত হয়। এই টাকা তাঁরা গুঁজে রাখেন। গুঁজে যাতে না রাখেন, সামান্য একটা কিছু দিয়ে সেই টাকা আসল পথে আসুক, জায়গামতো আসুক। তারপর তো ট্যাক্স দিতেই হবে।’

অনেকটা রসিকতার সুরে বিষয়টি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলি মাছ ধরতে গেলে তো আধার দিতে হয়, দিতে হয় না? আধার ছাড়া তো মাছ আসবে না। সেই রকম একটা ব্যবস্থা, এটা আসলে আগেও হয়েছে। সেই তত্ত্বাবধায়ক আমলেই শুরু হয়েছিল। এরপরও প্রত্যেক সরকারই করে।’

শেখ হাসিনা বলেন, সেই সুযোগ সরকার দিয়েছে। যাতে অল্প কর দিয়ে সেই টাকা ব্যাংকে নিয়ে আসা যায়। এটা নিয়ে নানাজনের নানা কথা। কিন্তু তারপরও যেগুলো মানুষের প্রয়োজন, সে ক্ষেত্রে কর কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মূল্যস্ফীতি চ্যালেঞ্জ

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাকে চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, বিশেষ করে খাদ্যমূল্য। সেখানে উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে। উৎপাদনমুখী হলে খাদ্যে কোনো দিন অভাব হবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বপরিস্থিতি মাথায় রেখে আমাদের পরিকল্পনা নিয়ে চলতে হবে। আমাদের দেশে যাঁরা হচ্ছেন...কিছু ভালো লাগে না, তাঁদের ভালো না লাগাই থাক, কান দেওয়ার দরকার নেই।’

মানুষের চাহিদা পূরণের ভাবনা থেকেই এই বাজেট দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অনেকে বসে বসে হিসাব কষেন, আগে এত শতাংশ বেড়েছে, এবার কম শতাংশ বাড়ল কেন?

সরকারপ্রধান বলেন, ‘সীমিতভাবে খুব সংরক্ষিতভাবেই আমরা এগোতে চাই। যেন আমাদের দেশের মানুষের কষ্ট না হয়, মানুষের চাহিদাটা যেন পূরণ করতে পারি, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বাজেট করেছি।’

মূল্যস্ফীতির মধ্যে পারিবারিক কার্ডের মাধ্যমে সহায়তা দেওয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে অবাক কাণ্ড, আমাদের উৎপাদন বেড়েছে। চাল উৎপাদনই আমরা চার গুণ বাড়িয়েছি। প্রতিটি জিনিসের উৎপাদন বাড়িয়েছি। মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বেড়েছে, মানুষের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণও বেড়েছে। এখন আর দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতে হয় না। কমপক্ষে দুই বেলা খাবার তো পাচ্ছে মানুষ। সেখানে গ্রহণটাও বেড়েছে, চাহিদাটাও বেড়েছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনও বাড়িয়েছি।’

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য পারিবারিক কার্ড দেওয়া হয়েছে। একেবারে হতদরিদ্রদের বিনা পয়সায় খাবার দেওয়া হচ্ছে। আর সামাজিক নিরাপত্তা তো বিনা পয়সায় দেওয়া হচ্ছে।

‘দেশের মানুষকে আগে খাওয়াতে হবে’

রিজার্ভ নিয়ে চিন্তা না করে মানুষকে আগে খাওয়াতে হবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের রিজার্ভ কত আছে না আছে, সেটার চেয়ে বেশি দরকার, আমার দেশের মানুষের চাহিদাটা পূরণ করা। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা পানির মতো টাকা খরচ করেছি।’

বিনা পয়সায় করোনার টিকা দেওয়া ও টেস্ট করার কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, অনেক উন্নত দেশও তা করতে পারেনি। বিনা পয়সায় চিকিৎসা করা হয়েছে। যাঁরা চিকিৎসা দিয়েছেন, সেই সব চিকিৎসককে আলাদা ভাতা দিতে হয়েছে। তারপর যখন দাম বেড়েছে, তখন ২০০ ডলারের গম ৬০০ ডলার করেও কেনা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ঠিক সেভাবেই ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে, উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে।

বাজেটে মৌলিক চাহিদাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির আমলে শেষ বাজেট মাত্র ৬২ হাজার কোটি টাকার ছিল। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়েছিল ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট। বর্তমান সরকার ৭ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই বাজেটে এবার কতগুলো মৌলিক চাহিদা...মানুষের মৌলিক যে অধিকার, সেটাকে নিশ্চিত করার জন্য যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য তারপর দেশীয় শিল্প ও সামাজিক নিরাপত্তা, এগুলোকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, যা মানুষের জীবনকে উন্নত করবে, নিশ্চয়তা দেবে।