সাক্ষাৎকার: ডাকসু নির্বাচনে ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের

হয়রানি ও হেনস্তাকে কবরে পাঠাতে চাই

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ-সমর্থিত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেল থেকে ভিপি পদে লড়ছেন আব্দুল কাদের। নির্বাচনের নানা দিক নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির এই নেতা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসিফ হাওলাদার

প্রথম আলো:

ভোটের প্রচারে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সাড়া কেমন পাচ্ছেন?

আব্দুল কাদের: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা শিক্ষার্থীদের ছেড়ে চলে যাইনি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমাদের বন্ডিংয়ের (বন্ধন) কারণে ভালো সাড়া পাচ্ছি। আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি, তাঁরা তাঁদের কনসার্নগুলো (উদ্বেগগুলো) আমাদের জানাচ্ছেন।

প্রথম আলো:

শিক্ষার্থীরা আপনাদের কী ধরনের কনসার্নের কথা বলছেন?

আব্দুল কাদের: নারী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মোরাল পুলিশিং (নীতি পুলিশিং) বেড়ে যাওয়ার কথা বলছেন। এ অবস্থা থেকে তাঁরা নিস্তার চান। অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ভবঘুরে ও অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তিদের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হয়ে একধরনের ট্রমার (মানসিকভাবে আঘাত পাওয়া) মধ্যে আছেন। শিক্ষার্থীদের অনেকের মধ্যে এই শঙ্কা আছে ক্যাম্পাসে আবার গণরুম-গেস্টরুম ফিরে আসে কি না। এর পাশাপাশি কোনো কোনো শিক্ষকের হয়রানি-হেনস্তার শিকার হওয়ার কথাও বলছেন অনেকে। শিক্ষার্থীরা একটা আস্থা ও অভয়ের জায়গা চান। আমরা সেই জায়গাটা তৈরি করতে চাই।

শিক্ষার্থীদের উদ্বেগের বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করতে চাই। কিন্তু এগুলোর বাস্তবায়ন তখনই সম্ভব হবে, যদি সঠিক প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। অনেকে নতুন করে এসে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার কথা বলছেন, যাঁরা আত্মগোপনে ছিলেন।

প্রথম আলো:

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের অনেকে ডাকসুতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, কেউ কেউ সংগঠন থেকে পদত্যাগও করেছেন। এটা হওয়ার কারণ কী?

আব্দুল কাদের: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির নেতাদের নিয়ে আমাদের সংগঠন। যাঁরা এর আগে নির্দিষ্ট কোনো দল করতেন না, তাঁরাই আমাদের সংগঠনে এসেছেন। আমাদের সংগঠনের সবাই নিজেদের দায়বদ্ধতার জায়গাটা পূরণ করতে চান। কিন্তু ডাকসুর প্যানেল শুধু ২৮ সদস্যের হওয়ায় আমরা সবাইকে জায়গা দিতে পারিনি। এ অবস্থায় কৌশলগত জায়গা থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, যাঁরা আমাদের প্যানেলের আওতাভুক্ত হতে পারবেন না, তাঁদের স্বতন্ত্র নির্বাচন করার সুযোগ থাকবে। যাতে তাঁরা নিজস্ব সক্ষমতা অনুযায়ী নির্বাচনী লড়াইয়ে জিতে আসতে পারেন। আমরা এই গণতান্ত্রিক জায়গাটা রেখেছি।

প্রথম আলো:

এ বিষয়টিকে অনেকে আপনাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল হিসেবে দেখছেন।

আব্দুল কাদের: প্রত্যেকের নিজস্ব অডিয়েন্স (সমর্থক) ও নিজস্ব চিন্তাভাবনা আছে। একাধিক প্রার্থী থাকার বিষয়টি সামগ্রিক বিবেচনায় একটা প্রভাব ফেলতে পারে, কিন্তু সেটি খুব বড় কোনো প্রভাব হবে না। আমাদের সংগঠনের যাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক রয়েছে।

প্রথম আলো:

শিক্ষার্থীদের ভোট টানতে আপনারা কী কী কৌশল নিচ্ছেন?

আব্দুল কাদের: আমরা গণরুম-গেস্টরুম ফিরে আসার শঙ্কাসহ শিক্ষার্থীদের উদ্বেগের জায়গাগুলো ধরে ধরে কাজ করছি। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির কাঠামো কেমন হবে, শিক্ষক রাজনীতির ধরন কেমন হবে—এ বিষয়টা নিয়ে কাজ করার কথা আমরা বলছি। আমরা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জায়গাটা সমুন্নত রাখতে চাই।

গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণে কাজ করার কথা আমরা বলছি। এ ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে আবাসিক হলে একটা সিটের জন্য আমাদের জিম্মি থাকতে হয়। এর সমাধানে আমরা ‘ওয়ান স্টুডেন্ট ওয়ান সিট’-এর কথা বলছি। শিক্ষার্থীদের খাবারের মানোন্নয়নে একটা ব্যবস্থাপনা সেল গঠনের কথা বলছি, যাতে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যকর খাবার পান। শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে ‘ওয়ান কার্ড অল সার্ভিস’-এর কথা বলেছি। প্রশাসনিক হয়রানি ও হেনস্তাকে আমরা কবরে পাঠাতে চাই।

এক সপ্তাহ ধরে আমাদের একটা টিম মাঠপর্যায়ে কাজ করেছে। তাঁরা ছাত্রী হল, বিজ্ঞান অনুষদ, হলপাড়া ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে সমস্যাগুলো বোঝার চেষ্টা করেছেন। সেখান থেকে পাওয়া দাবিগুলো আমাদের ইশতেহারে থাকছে। ভোটের কথা যদি বলি, ছাত্রীদের পাঁচ হল, জগন্নাথ হল ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা এবারের ভোটে মূল ফ্যাক্টর (নিয়ামক) হিসেবে কাজ করবে।

প্রথম আলো:

জয়ের ব্যাপারে আপনারা কতটা আশাবাদী?

আব্দুল কাদের: শিক্ষার্থীরা বিগত দিনে আমাদের পাশে পেয়েছেন, ভবিষ্যতেও পাবেন। ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকাটা আমাদের শক্তির জায়গা। আমরা পূর্ণ প্যানেলে জেতার ব্যাপারে আশাবাদী, ইনশা আল্লাহ।

প্রথম আলো:

আপনাকে ধন্যবাদ।

আব্দুল কাদের: আপনাকেও ধন্যবাদ।