ইনকিলাব মঞ্চের কেউ ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচনে দাঁড়াবেন না: আবদুল্লাহ আল জাবের

রাজধানীর শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের। ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ছবি: মেহেদী হাসান

শহীদ ওসমান হাদির মতো যোগ্যতাসম্পন্ন না হয়ে ওঠা পর্যন্ত ইনকিলাব মঞ্চের কেউ ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না বলে জানিয়েছেন প্ল্যাটফর্মটির সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের। তিনি বলেছেন, ‘কোনো সিমপ্যাথি (সহানুভূতি) নিয়ে আমরা নির্বাচনে দাঁড়াইতে চাই না। ইনকিলাব মঞ্চ কোনো দিন সিমপ্যাথির রাজনীতি করবে না। এটার নিশ্চয়তা দিচ্ছি।’

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগের অবরোধ কর্মসূচি থেকে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব এই ঘোষণা দেন। এর আগে বেলা সোয়া ২টা থেকে ওসমান হাদির খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন তাঁরা। গত শুক্রবার থেকে প্রতিদিন শাহবাগ মোড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে ইনকিলাব মঞ্চ।

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, ‘অনেকেই ঢাকা-৮ আসনে ইনকিলাব মঞ্চের কেউ যাতে নির্বাচন করে, সেই অনুরোধ করছেন। ইনকিলাব মঞ্চ কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টিকারী সংগঠন। শহীদ ওসমান হাদি ইনকিলাব মঞ্চ থেকে নির্বাচনে অংশ নেননি। তিনি একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। আমরা কয়েকজন তাঁর পক্ষে দাঁড়িয়েছিলাম। শহীদ ওসমান হাদির ইনকলাব মঞ্চ কোনো দিন ক্ষমতার কাছে নিজেকে বর্গা দেবে না। কোনো দিন ক্ষমতার মুখাপেক্ষী হবে না।’

আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, ওসমান হাদি রাজনীতি করতে আসেননি। আগামী দিনে বাংলাদেশের রাজনীতি কেমন হবে, সেটা বিনির্মাণ করতে এসেছিলেন। আগামী দিনেও বাংলাদেশের রাজনীতি কেমন হবে, তার রূপরেখা ঠিক করে দেবে ইনকিলাব মঞ্চ।

রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব বলেন, ‘বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি প্রত্যেকের নিজস্ব রাজনৈতিক এজেন্ডা থাকবে। কিন্তু জনগণ আপনাদেরকে হাদি হত্যার বিচারের জন্য পাশে চায়। আপনারা যদি বিচারের জন্য সোচ্চার না হন, আগামী নির্বাচনে জনগণ আপনাদের সোচ্চার করে দেবে।’

ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব বলেন, যারা শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য শহীদ ওসমান হাদির নাম ব্যবহার করতে চায়, তারা সফল হবে না। জনগণ আবেগ দিয়ে নয়, আগের হিসাব ও বর্তমান হিসাব মিলিয়েই ভোট দেবে।

দুই জায়গায় খেলা চলবে না উল্লেখ করে আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, যারা খুনিদের জামিন করিয়েছে, কিংবা টক শোতে গিয়ে শহীদ ওসমান হাদিকে গিনিপিগ বলে হেয় করেছে—তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলটি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আপনি জানাজায় আসবেন, কিন্তু বহিষ্কার করবেন না—তা হতে পারে না। কবর জিয়ারত করবেন, কিন্তু দায় নেবেন না—তা হতে পারে না।

উপদেষ্টাদের উদ্দেশে আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, ‘ঢাকা শহরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে। আমি মনে করি না বর্তমান কোনো উপদেষ্টা এখানে এসে আমাদের সঙ্গে দাঁড়াতে পারবেন। তারা এখন কম্বলের নিচে। রাষ্ট্র যেন কম্বলের নিচে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু জনগণ রাষ্ট্রের পাহারাদার হয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছে। ওসমান হাদি খুনের সাথে যে রাঘববোয়ালরা জড়িত, তাদের নাম প্রকাশ করুন। জনগণ আপনাদের পাহারা দেবে। আর যদি কোনোভাবে রাঘববোয়ালদের সঙ্গে সমঝোতায় আসেন, আপনারা ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবেন না।’

শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি নিয়ে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলার অপপ্রচার করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন আবদুল্লাহ আল জাবের। তিনি বলেন, শাহবাগ একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলেও এর বিকল্প পথ রয়েছে। এখানে আসা মানুষগুলো কি ভাড়া করে আনা? এই শীতের মধ্যে তাঁরা কি টাকার জন্য বসে আছেন? খুনিদের বিচারের দাবিতে তাঁরা এখানে অবস্থান করছেন। সুতরাং যতই অপপ্রচার চালান, শহীদ ওসমান হাদির হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত না করা পর্যন্ত এখান থেকে কেউ যাবে না।

আইন উপদেষ্টার সমালোচনা করে আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, ‘গতকালকেও আমরা দেখেছি জুলাইয়ের আসামিদের জামিন দেওয়া হয়েছে। মাননীয় আইন উপদেষ্টা আপনার কাছে জানতে চাই, আপনি কোনোভাবে দায় এড়াতে পারেন না। আইন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরাসরি রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকে। আপনারা দায় এড়াতে পারেন না।’