ঢাকা–১৫ আসনে ৯টি নির্বাচনী ক্যাম্পের ৮টিই সড়ক–ফুটপাতে 

আচরণবিধি ভঙ্গ করে মানুষের হাঁটাচলার জায়গায় নৌকার প্রার্থী প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারের পক্ষে করা হয়েছে নির্বাচনী ক্যাম্প।

আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে তৈরি করা হয়েছে নির্বাচনী ক্যাম্প। গতকাল রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ কনভেনশন হলের পেছনের সড়কেছবি: তানভীর আহাম্মেদ

সিটি করপোরেশন এলাকায় কোনো ওয়ার্ডে একজন প্রার্থী কোনোভাবেই একটির বেশি নির্বাচনী কার্যালয় (ক্যাম্প) করতে পারেন না। বিষয়টি স্পষ্ট করেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালায় বলা আছে। তবে ঢাকা–১৫ সংসদীয় আসনের (শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, কাফরুল ও মিরপুরের একাংশ) ৪ নম্বর ওয়ার্ডে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ৯টি অস্থায়ী নির্বাচনী ক্যাম্প করা হয়েছে। এসব ক্যাম্পের কোনোটি করা হয়েছে ফুটপাতে, মানুষের হাঁটাচলার জায়গায়, কোনোটি আবার করা হয়েছে মূল সড়কের জায়গায়।

এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। তিনি এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের চারটি ওয়ার্ড নিয়ে আসনটি গঠিত। ওয়ার্ডগুলো হলো—৪, ১৩, ১৪ ও ১৬। এই আসনে মোট ভোটার প্রায় সাড়ে ৩ লাখ।

গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এই আসনের দুটি ওয়ার্ড (৪ ও ১৬) সরেজমিন ঘুরে দেখেছেন প্রথম আলোর একজন নিজস্ব প্রতিবেদক ও একজন আলোকচিত্রী।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন মিরপুর ১৩ নম্বরের বি ব্লকে বিদ্যুৎ অফিসের উল্টো পাশের সড়কের ওপর বাঁশ ও কাপড় দিয়ে নির্বাচনী ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। নৌকা প্রতীকের পোস্টার দিয়ে ঘেরা এই ক্যাম্প থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে সি ব্লকে রাস্তার ওপর আরেকটি ক্যাম্প করা হয়ছে। এই ক্যাম্পের পেছনের ফুটপাত ভাঙাচোরা। মানুষজন কোনোমতে চলাচল করতে পারেন।

এই ক্যাম্প থেকে ১০০ মিটার দূরে একই সড়কের ওপর আরেকটি ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। সড়ক ও ফুটপাত দখল করে তৈরি করা এই ক্যাম্প থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে আরেকটি ক্যাম্প করা হয়েছে। এটিও সড়ক ও ফুটপাতের জায়গা দখল করে করা হয়েছে।

এ ছাড়া মিরপুর ১৩ নম্বরের সি ব্লকেও (৪ নম্বর ওয়ার্ড) নৌকা প্রতীকের পক্ষে ফুটপাতের জায়গায় আরও দুটি ক্যাম্প করা হয়েছে। এই ব্লকে লাঙ্গল প্রতীকের একটি নির্বাচনী ক্যাম্পও রয়েছে। ডি ব্লকেও নৌকা প্রতীকের আরেকটি ক্যাম্প রয়েছে। এটিও ফুটপাতের জায়গায় তৈরি করা।

মিরপুর ১৫ নম্বর সেকশনে (৪ নম্বর ওয়ার্ড) গিয়ে দেখা যায়, আবাসিক এলাকার একটি গলির মুখে সড়কের ওপর কাপড় দিয়ে ঘেরা বড় একটি নির্বাচনী ক্যাম্প। এই ক্যাম্পের সামনের দুই দিকে দুটি ব্যানার ঝোলানো। তাতে লেখা ‘নির্বাচন প্রচার কেন্দ্র’। এই নির্বাচনী ক্যাম্পের আকার ৮০০ বর্গফুটের মতো। কিন্তু আচরণবিধি অনুযায়ী, ৪০০ বর্গফুটের বেশি কোনো ক্যাম্প করা যায় না।

একই ওয়ার্ডের পূর্ব বাইশটেকি এলাকায় আরেকটি ক্যাম্প করা হয়েছে। অবশ্য এটি ফুটপাত বা সড়কের জায়গায় করা হয়নি। সড়কের পাশে একটি দোকানে এই ক্যাম্প করা হয়েছে। তবে এখানে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা রয়েছে, যা আচরণবিধির লঙ্ঘন।

নির্বাচনী আচরণবিধি ভেঙে সড়ক ও ফুটপাতে ক্যাম্প স্থাপনের বিষয়ে আওয়ামী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদার গতকাল রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, অতি উৎসাহী কিছু লোক এসব ক্যাম্প করেছেন। প্রচারে গিয়ে তিনি এসব দেখার পর ক্যাম্পগুলো বন্ধ করে দিতে বলেছিলেন। কিন্তু নেতা-কর্মীরা কথা শুনছেন না।

কামাল আহমেদ মজুমদারসহ আটজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ঢাকা–১৫ আসনে। অন্যরা হলেন জাসদের মুহাম্মদ সামছুল ইসলাম (মশাল প্রতীক), জাতীয় পার্টির মো. সামসুল হক (লাঙ্গল), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মো. সামছুল আলম চৌধুরী (একতারা), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আশরাফ হোসাইন সরকার (ডাব), এনপিপির নাজমা বেগম (আম), তৃণমূল বিএনপির খন্দকার মো. ইমদাদুল হক (সোনালী আঁশ) ও বিএনএফের এস এম ইসলাম (টেলিভিশন)।

এই সংসদীয় আসনের বিভিন্ন সড়কে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে অসংখ্য পোস্টার লাগানো হয়েছে। লাঙ্গল ও মশাল প্রতীকের পোস্টারও অনেক জায়গায় দেখা গেছে।

আচরণবিধি ভঙ্গ করে সড়ক ও ফুটপাতে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী ক্যাম্প করার বিষয়ে ঢাকা–১৫ আসনের দুজন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলামের সঙ্গে গতকাল রাতে কয়েক দফায় মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে প্রথম আলো। তাঁরা ফোন ধরেননি। পরে দুজনের মুঠোফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠানো হয়। কিন্তু দুজনের কেউই কোনো জবাব দেননি।