আমি মূলত জয়বাংলার লোক: শাহজাহান ওমর

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন মোহাম্মদ শাহজাহান ওমর, বীরউত্তম। এই অবস্থান বদলের বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। শাহজাহান ওমরের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কাদির কল্লোল

প্রথম আলো:

আপনি ৪৪ বছর বিএনপির রাজনীতিতে ছিলেন। হঠাৎ আওয়ামী লীগ হয়ে গেলেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হলেন। নির্বাচনী এলাকায় কী প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন?

মোহাম্মদ শাহজাহান ওমর: অনেস্টলি (সততার সঙ্গে) বলছি, আমার এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কোনো বিভাজন নেই। আমি তো দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতি করি। আওয়ামী লীগের লোকেরাও আমাকে ভোট দিত। আর বিএনপির লোকেরা তো আমাকেই ভোট দিয়ে আসছে। আমি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য।

প্রথম আলো:

বিএনপির রাজনীতি থেকে আপনি ওই দলের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের নৌকায় চড়লেন ভোট ও আসনের জন্য, নৈতিকতা প্রশ্ন আসে কি না?

শাহজাহান ওমর: আমি তো অনেক আগে থেকেই বিএনপির কর্মকাণ্ড বা ক্রিয়াকলাপের প্রতিবাদ করেছিলাম। এভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চলে না। রাজনৈতিক কিছু সংস্কৃতি ও আচরণ আছে। সেগুলো না মানলে তো রাজনীতি করা যায় না। আমি তারেক রহমানকেও স্কাইপের মাধ্যমে আলোচনায় বলেছি যে আপনার হুমকিধমকি চলে না। আপনি দয়া করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চলেন। আমার কথা শোনেনি। তো আমি বিএনপিতে স্বাচ্ছন্দ৵বোধ করছিলাম না। ওনারা বারবার নির্বাচন বর্জন করে। আমি নির্বাচনের পক্ষে। যেহেতু আমি বিএনপিতে অ্যাডজাস্ট করতে পারছিলাম না। তাই দল পরিবর্তন করেছি।

প্রথম আলো:

আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার আগের দিনে আপনি যে মামলায় জামিন পান, সেই মামলায় বিএনপির বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার জামিন হয়নি।

শাহজাহান ওমর: এখানে ভুল–বুঝাবুঝি আছে। আমি আইনজীবী জয়নাল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন ও নিতাই রায় চৌধুরী—এই চারজন অন্তবর্তীকালীন জামিনের আবেদন করেছিলাম। এর শুনানির তারিখ পড়েছিল ৬ নভেম্বর। আমি গ্রেপ্তার হলাম ৪ নভেম্বর। ফলে আমি তখন জামিন নিতে পারিনি। অন্য তিনজন জামিন পেয়েছেন আইনজীবী হিসেবে। আমি গ্রেপ্তার না হলে সেদিনই তাঁদের সঙ্গে জামিন পেতাম। ফলে আমার জামিনটা অন্য কিছু নয়। আইনের স্বাভাবিক গতিতেই আমি জামিন পেয়েছি।

প্রথম আলো:

কিন্তু ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ড শেষে আপনি জেলে ছিলেন। গত ২৯ নভেম্বর জামিন মঞ্জুর; কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি। পরদিনই আপনি সরাসরি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেন। ঘটনাগুলো বেশ দ্রুতগতিতে ঘটেছে।

শাহজাহান ওমর: দ্রুত কোথায়। জামিন হলো সকালে। আর আমি মুক্তি পেলাম বিকেলে। পরদিন যে মনোনয়নের কথা বলছেন, আমি তো ব্যাসিক্যালি (মূলত) জয়বাংলার লোক। আমি ১৯৭১ সালে জয়বাংলা বলে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি মিলিটারি একাডেমিতে আমার টিচার ছিলেন। তিনি ১৯৭৮ সালে যখন রাজনীতি শুরু করেন, তখন আমাকে ডেকে নিয়ে তাঁর দলে যুক্ত করেছিলেন।তখন তো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সমস্যা ছিল। নেত্রী দেশে ছিলেন না। ১৯৯১ সালে আমি আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করার জন্য গিয়েছিলাম। তখন তাদের মনোনয়ন আগে ঠিক হয়ে যাওয়ায় সে সময় আমি পাইনি।

প্রথম আলো:

এবার মনোনয়ন কীভাবে পেলেন, মানে যোগাযোগটা কার সঙ্গে কীভাবে হলো?

শাহজাহান ওমর: আমি তা জানি না। জেল থেকে আমি ২৯ তারিখে বের হই। পরদিন ৩০ নভেম্বর সকালে এক ভদ্রলোক আমি তাঁকে চিনি না। ওই ব্যক্তি আমাকে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে ফোন দিয়ে বললেন, প্রধানমন্ত্রী আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান। ৩০ নভেম্বর সকাল ১১টায় সময় দিল। অবশ্যই বঙ্গবন্ধু ও তাঁর কন্যা গণতন্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চলেন। তাঁদের প্রতি আমার অগাধ শ্রদ্ধা আছে। সে কারণে আমি বললাম, কেন দেখা করব না। তো আমি ১১টায় দেখা করতে গেলাম। প্রধানমন্ত্রী বললেন যে আপনি নির্বাচন করেন। আমি বললাম, আপনি আমাকে নৌকা প্রতীক দিলে আমি নির্বাচন করব। তখন তিনি বললেন, আপনি তো স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি। আপনাকে আমার দলে নিতে আমার আপত্তি নেই। আপনি যদি আসেন, আমি স্বাগত জানাব। ঠিক আছে। আমি দস্তখত করে আওয়ামী লীগে যোগ দিলাম। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) এক ঘণ্টার মধ্যে নৌকার টিকিট দিলেন। টিকিট নিয়ে চলে এলাম। আমি মনোনয়ন ফরম পূরণ করে দৌড় দিলাম এলাকায়। সেখানে মনোনয়ন জমা দিয়ে ঢাকায় এলাম।

প্রথম আলো:

কিন্তু বিএনপি যখন সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন আপনি জেল থেকে বেরিয়েই দল ছেড়ে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হলেন। বিএনপি নেতাদের অনেকে এটাকে পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করার অভিযোগ আনছেন আপনার বিরুদ্ধে।

শাহজাহান ওমর: না আমি ছুরিকাঘাত করিনি। আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমি চেয়েছিলাম, বিএনপি নির্বাচনে যাক। কিন্তু দেখলাম, বিএনপি নির্বাচনে যেতে চায় না। আর আমার একটা বদ্ধমূল ধারণা হলো যে বিএনপি তখনই নির্বাচনে যাবে, যখন তারা ক্ষমতায় যাওয়ার নিশ্চয়তা পাবে। তো কখন আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার নিশ্চয়তা পাব, আর এত দিন ওই ঘানি টানব। এটা হয় না। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এদের ক্ষমতায় বসাবে তৃতীয় কোনো পক্ষ। এটার বিপক্ষে আমি। নিজের শক্তি ছাড়া অন্যের শক্তি দিয়ে শক্তিমান হওয়া সম্ভব না। নির্বাচনেই যাব না, এটা কেমন কথা। আমি নির্বাচনমুখী। সে জন্য আমি নির্বাচনে গেছি।

প্রথম আলো:

প্রার্থী হওয়ার পর কাঁঠালিয়া এলাকায় এক সভায় আপনার পাশে বন্দুক হাতে একজন ছিলেন। সেখানে অস্ত্র নেওয়া হয়েছিল কেন?

শাহজাহান ওমর: এটি নিয়ে আলোচনার তো কিছু নেই। আমার লাইসেন্স করা বন্দুক। এটি নিরাপত্তার জন্য ছিল। গাড়িতে জায়গা না থাকায় সে সেটি ধরে ছিল।

প্রথম আলো:

কিন্তু লাইসেন্স করা অস্ত্র কোনো লোকসমাগমের জায়গায় প্রদর্শন করা যায় না।

শাহজাহান ওমর: এটা আসলে বন্দুকটা নিয়ে তাকে সভার বাইরে এক কোনায় বসে থাকতে বলা হয়েছিল। সে ভুল করে সভার জায়গায় গিয়েছিল। এটা অনিচ্ছাকৃত ভুল। সে জন্য আমি দুঃখিত।

প্রথম আলো:

আপনি যেহেতু দল পরিবর্তন করে ক্ষমতাসীন দলে গিয়ে নির্বাচন করছেন। আপনি নিশ্চয়ই জেতার নিশ্চয়তা নিয়েই ভোটে গেছেন।

শাহজাহান ওমর: না এটা আমি আপনার সঙ্গে দ্বিমত করা। আমি আসনের জন্য দল বদল করিনি। আমি ভোট করছি। ভোট দেবে জনগণ। জনগণ যদি ভোট দেয়, তাহলে জিতব। ভোট না দিলে জিতব না। এটাই তো গণতন্ত্র।

প্রথম আলো:

আসলে কি তাই হচ্ছে নাকি ‘একতরফা’ নির্বাচন হতে যাচ্ছে?

শাহজাহান ওমর: বিএনপি ভোটে এলে তো তারা একতরফা নির্বাচনের কথা বলতে পারত না। তারা এলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও বেশি হতো।