বাবার ‘কর্মজীবন’ নিয়ে আলোচনায় ছেলে মামুনুল হকের মুক্তি দাবি
প্রয়াত শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের ‘জীবন ও কর্ম’ নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল ‘শায়খুল হাদিস পরিষদ’ নামের একটি সংগঠন। আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর কাজী বশির উদ্দিন মিলনায়তনে এ আলোচনা সভা হয়। কিন্তু সব আলোচকের মূল কথাই ছিল শায়খুল হাদিসের ছেলে মাওলানা মামুনুল হকের মুক্তির দাবি।
এই আলোচনা সভা উপলক্ষে সকাল থেকেই কওমি মাদ্রাসার কয়েক হাজার আলেম, ছাত্র-শিক্ষক গুলিস্তানের কাজী বশির উদ্দিন মিলনায়তন ঘিরে সমবেত হন।
সভায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার ঘোষণা ছিল। কিন্তু অসুস্থ থাকায় তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠান। বক্তব্যে মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী প্রয়াত আল্লামা আজিজুল হকের হাদিসবিষয়ক অধ্যাপনা, রাজনীতিতে নির্ভীক ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
হেফাজতের আমির বলেন, ‘আজকে শায়খুল হাদিস (রহ.)-এর জীবনী আলোচনা করতে গিয়ে বারবার মনে পড়ছে তাঁর কলিজার টুকরা, আমার অত্যন্ত স্নেহের মাওলানা মামুনুল হকের কথা। তিনি প্রায় দেড় বছর ধরে কারাবন্দী। অনেকেই আমাকে বলে এই সরকার যত দিন ক্ষমতায় আছে, তারা আলেমদের মুক্তি দেবে না। আমি এ কথা বিশ্বাস করতে চাই না।’
লিখিত বক্তব্যে মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বর্তমান প্রেক্ষাপট স্মরণ করিয়ে দিয়ে আলেম সমাজকে ‘সতর্ক’ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, অনেকে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য, কিছু পাওয়ার আশায় মূল কাজ থেকে সরে গিয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছে, যা আলেমদের ঐতিহ্যের বিরোধী। আলেমরা নিজেদের মূল কাজ ঠিকভাবে করলে কারও কাছে ধরনা দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।
হেফাজতে ইসলামের আমির গতকাল বৃহস্পতিবার অসুস্থ হয়ে চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সভায় তাঁর প্রতিনিধি চট্টগ্রামের জামিয়া ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর মাদ্রাসার শিক্ষক মুফতি মুহাম্মাদ ইকবাল লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান।
অবিলম্বে মাওলানা মামুনুল হকসহ সব আলেমের মুক্তি দাবি করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির ইসমাইল নুরপুরী। তিনি বলেন, ‘আল্লামা মামুনুল হকসহ অনেক আলেমকে জেলে আবদ্ধ রেখেছে এই সরকার। সরকারকে বলতে চাই, আপনারা ওলামাদের চোখের পানিকে অ্যাটম বোম বানাবেন না। অনতিবিলম্বে মামুনুল হকসহ সব আলেমকে মুক্তি দিন। তাহলে দেশে শান্তি নাজিল হবে।’
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের বলেন, বাংলাদেশে শায়খুল হাদিস বলতে একমাত্র শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হককেই বোঝায়। তাঁর কর্মজীবনের খেদমতের জন্য যেন আল্লাহ তাঁকে বেহেশত নসিব করেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁর মতো মানুষের প্রয়োজন বড় আকারে অনুভব হচ্ছে।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন শায়খুল হাদিসের ছেলে ও মাওলানা মামুনুল হকের ভাই মাওলানা মাহফুজুল হক। তিনি বলেন, ‘শায়খুল হাদিসের রেখে যাওয়া সবকিছু আমাদের কাছে আমানত। তাঁর পরিবার, এটাও বড় আমানত। এই আমানতের কদর করা, তাঁদের পাশে থাকা, সহযোগিতা করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।’
মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘শায়খুল হাদিসের পরিবারের সদস্য আমার ছোট ভাই মামুনুল হক। এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শায়খুল হাদিসের অনেক অবদান রয়েছে। সরকারের কাছে আহ্বান করব, তাঁর সেই ভূমিকার হক আদায় স্বরূপ তাঁর সন্তান আল্লামা মামুনুল হককে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে মুক্তি দেবেন।’
২০১২ সালের ৮ আগস্ট শায়খুল হাদিস আজিজুল হক মারা যান।
আজ তাঁর কর্মজীবন নিয়ে আলোচনায় আরও অংশ নেন মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামিদ, সিলেট দরগাহ মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা মহিব্বুল হক, হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহাদ্দিস আশরাফ আলী নিজামপুরী, পটিয়া মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম মাওলানা আবু তাহের নদভী, আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াতের মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমেদ, ইসলামি লেখক মাওলানা যাইনুল আবেদীন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, জামিয়া মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়ার মুহতামিম আল্লামা আবুল কালাম, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) সহসভাপতি মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের প্রধান মুফতি মাওলানা এনামুল হক, উজানি মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মাহবুবে এলাহী, হাইআতুল উলইয়ার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা ইসমাইল প্রমুখ।