অপপ্রচার চালিয়েছিলেন, এখন খালেদা জিয়াও সেই টিকা নিচ্ছেন: নানক

গুলিস্তানে ছাত্রলীগের আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক ৷
ছবি: প্রথম আলো

করোনার টিকা নিতে খালেদা জিয়ার উদ্যোগ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, দেশে যখন প্রথম করোনার টিকা আনা হয়েছিল সেই সময় বিএনপি নেতারা নানা ‘অপপ্রচার’ চালিয়েছিলেন, এখন তাঁদের নেত্রীও এই টিকা নিচ্ছেন।  

আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর গুলিস্তানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাহাঙ্গীর কবির নানক এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কারা অন্তরীণ দিবস উপলক্ষে এই সভার আয়োজন করা হয়।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘ফখরুল সাহেব, আপনি বলতে চান যে করোনার সময়ে শেখ হাসিনা অপরিকল্পিত পদক্ষেপ নিচ্ছেন। পরিকল্পনাটা কী? আপনারা তো একটা বাকবাকুম পার্টিতে পরিণত হয়েছেন। আপনাদের নেতা কে? আপনারা গন্তব্যহীন পথে এগোচ্ছেন। করোনায় আপনারা মানুষকে কোনো সহযোগিতা করেননি। বাংলাদেশ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর ১৬ মাস জীবন ও জীবিকাকে একসঙ্গে পরিচালনা করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বজায় রেখেছেন শেখ হাসিনা। কিন্তু চোরেরা না শোনে ধর্মের কাহিনি।’

করোনার টিকা নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বলেন, ‘শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশে করোনার টিকা নিয়ে আসেন, তখন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবরা বলেছিলেন যে তাঁরা টিকা নেবেন না, টিকার বিরুদ্ধে তাঁরা অপপ্রচার চালিয়েছিলেন। এখন কারারুদ্ধ ও দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াও টিকা নিচ্ছেন।’

সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এ ঘটনাকে জনগণের কণ্ঠস্বর রোধ এবং অধিকার হরণের একটি ‘কূটনৈতিক প্রক্রিয়া’ আখ্যা দেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, ‘ন্যক্কারজনক এই গ্রেপ্তারের ঘটনা ছিল জনগণের অধিকার হরণের শেষ ধাপ। এর শুরুটা হয়েছিল ২০০১ সালে। সে বছরের অক্টোবরে প্রহসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করে। তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পরপরই দেশে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিএনপির নেতা-কর্মীরা দেশব্যাপী হত্যা, লুণ্ঠন, লুটতরাজ ও নিপীড়নের নারকীয় উৎসব শুরু করে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে নাভিশ্বাস ওঠে জনগণের। দেশে এক স্বপ্নহীন নৈরাশ্যের যুগের সূচনা হয়। জঙ্গিবাদের উত্থান হয়। ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে তখন জঙ্গি কায়দায় হামলা করে অনেক জনপ্রিয় নেতাকে হত্যা করা হয়।’

২০০৭ সালের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে নানক বলেন, সেদিন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে। ষড়যন্ত্রকারী ও সংস্কারবাদীরা ভেবেছিল, সেই সভায় তারা নিজেদের মনের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু তা তারা পারেনি। সভায় সব জেলা থেকে আসা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকেরা পরিষ্কার বলেছিলেন, ‘নো হাসিনা, নো ইলেকশন’। শেখ হাসিনার জন্য সেদিন সভায় নির্ধারিত একটি চেয়ার শূন্য রাখা হয়েছিল।

সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, আজকে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই।
ছবি: প্রথম আলো

নানক বলেন, ‘দল যখনই কোনো সংকটের মুখোমুখি হয়, তখনই কিছু খন্দকার মোশতাক বেরিয়ে যায়। এই মোশতাকদের চিনতে হবে। এরা বর্ণচোরা। এরা আমাদের সঙ্গেই থাকে। এদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে, এদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।’

সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম৷ তিনি বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবদের টার্গেট ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করা। আদর্শের জায়গায় শক্ত থাকবেন। ঐক্যবদ্ধ থেকেই আমরা ওয়ান-ইলেভেনের অশুভ শক্তিকে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। সততা ও দৃঢ়তার সঙ্গে আপসহীন নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা আজকে গোটা জাতির অপরিহার্য নেতায় পরিণত হয়েছেন। ওয়ান-ইলেভেনের সময় শেখ হাসিনার বিকল্প খোঁজা হয়েছিল। যারা এই কাজ করেছিল, তারা আজকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। আজকে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের সঞ্চালনায় এই আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ সোহেল রানা ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব। এই চার নেতাই এক-এগারোর সময়ে ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালন করেছেন। সভায় বিশেষ আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য৷