আইভী ও সাখাওয়াতের পাশে নেই স্থানীয় নেতারা

.
.

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিজ দলের স্থানীয় নেতাদের এখনো মাঠে নামাতে পারেননি আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান। তবে স্থানীয় নেতারা মাঠে না থাকলেও দুই দলের কেন্দ্রীয় নেতারা নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে নারায়ণগঞ্জে গিয়ে গণসংযোগ ও প্রচার চালাচ্ছেন।

সিটি করপোরেশনে এবারই প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুই চলছে দলীয় ভিত্তিতে। কিন্তু নির্বাচনের মাঠে স্থানীয় নেতাদের না দেখে অনেক ভোটারও তাঁদের বিস্ময়ের কথা জানিয়েছেন। নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে দল সঙ্গে আছে কি নেই, তা নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে ভোটারদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। আলোচনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দলীয় নেতাদের স্বার্থসহ নানা বিষয় উঠে আসছে।

গতকাল রোববার সকাল থেকেই সেলিনা হায়াৎ আইভী নগরের বন্দর এলাকায় প্রচার ও গণসংযোগ করেন। কিন্তু বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ রশিদ তাঁকে স্বাগত জানাননি। আইভী নিজেই রশিদের বাসায় গিয়ে দেখা করেন এবং পরে একাই গণসংযোগ করেন। অবশ্য এম এ রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, আইভীর সঙ্গে না বের হলেও তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষেই আছেন।

এর আগে সিদ্ধিরগঞ্জে আইভীর টানা গণসংযোগেও তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের দেখা যায়নি। ৩ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা নারায়ণগঞ্জে গেলে তাঁদের কাছে আইভীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন দলের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সভাপতি মুজিবুর রহমান। তাঁর অভিযোগ, আইভী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের উপেক্ষা করেন। এর পরদিন আইভী সিদ্ধিরগঞ্জে মুজিবুর রহমানের বাসায় যান। রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সঙ্গেও দেখা করে আসেন তিনি।

স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমান গত শুক্রবার ফতুল্লায় এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁর নেতা-কর্মীদের শনিবার থেকে আইভীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু গতকাল রোববার পর্যন্ত কোথাও শামীম ওসমানের এই ঘোষণার প্রতিফলন দেখা যায়নি।

অবশ্য আইভী প্রথম আলোকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ বা বিএনপি বলে কিছু নেই, সবাই একযোগে তাঁর পক্ষে কাজ করছেন। কর্মীরা আগেই নেমেছেন। নেতারাও নেমেছেন। সাধারণ মানুষ তাঁর পাশে আছেন।

আইভীর শুভাকাঙ্ক্ষী, ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বির মতে, আইভী একা গণসংযোগ করলে তাঁর আরও ভোট বাড়বে।

স্থানীয় নেতারা না নামলেও গতকাল আইভীর পক্ষে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রচারে অংশ নেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক ইসহাক আলী পান্না, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুর রহমান চৌধুরী ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।

স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মাঠে নামানোর ক্ষেত্রে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত খানেরও একই অবস্থা। গতকাল মদনপুর, মুরাদপুর, কুড়িপাড়া, পশ্চিম ফুলহর ও শহীদনগরে সাখাওয়াত হোসেন ভোটারদের মধ্যে প্রচারপত্র বিলি ও গণসংযোগ করেন। সঙ্গে ছিলেন আরও আট-দশজন। তবে স্থানীয় বিএনপির তিন প্রভাবশালী নেতা—জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকার, সাবেক দুই সাংসদ আবুল কালাম ও গিয়াসউদ্দীনকে গণসংযোগে দেখা যায়নি। কেবল বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা গেলে তাঁদের সঙ্গে এই নেতাদের দেখা যায় বলে স্থানীয় লোকজন জানান। যদিও তৈমুর কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হওয়া নিজ ভাইয়ের জন্য, আবুল কালাম ও গিয়াসউদ্দিন কাউন্সিলর পদে তাঁদের ছেলেদের পক্ষে মাঠে সক্রিয় আছেন।

নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল শহরে দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত বসেন। সেখানে অনুষ্ঠিত নেতা-কর্মীদের মতবিনিময়ে থাকেন। ঢাকা থেকে নেতারা গেলে তাঁদের সঙ্গেও থাকেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নারায়ণগঞ্জ বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা নীতিনির্ধারণী কাজে ব্যস্ত আছেন। তাঁরা মাঠে না থাকলেও নির্বাচনী কাজের মধ্যেই আছেন। 

সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর পক্ষে দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছে। তিনি যেভাবে প্রচার চালাচ্ছেন, স্থানীয় নেতারাও তাঁদের মতো করে প্রচার চালাচ্ছেন। এখানে ধানের শীষের পক্ষে সবাই কাজ করছেন, কোনো বিভেদ নেই।

সাখাওয়াতের পক্ষে গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান গণসংযোগ করেছেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েমের নেতৃত্বে ঢাকা থেকে যাওয়া একটি দল প্রচারে অংশ নেয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই নির্বাচনে কেন্দ্রীয় যুবদলের ১৭টি দল গণসংযোগের কাজ করছে।

পাল্টাপাল্টি বক্তব্য 

সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে গতকাল গণসংযোগকালে আইভী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান সম্পর্কে আইভী বলেন, ‘সাখাওয়াত নারায়ণগঞ্জের লোক নন। তিনি মুন্সিগঞ্জ যুবদলের রাজনীতি করতেন এবং পেশাগত কারণে তিনি নারায়ণগঞ্জে আসেন। তাই স্বাভাবিকভাবে তিনি নারায়ণগঞ্জের লোক নন। তিনি বিএনপির প্রার্থী হলেও ভাড়াটে। সাখাওয়াত সাহেবকে লোকজন কোনো দিন দেখেছে কি না আমার সন্দেহ আছে।’

অন্যদিকে আইভীর বক্তব্যের জবাবে সাখাওয়াত সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ধানের শীষের জোয়ারে আইভীর পায়ের নিচে মাটি নেই। নারায়ণগঞ্জে আইভী দেউলিয়া হয়ে গেছেন। এ কারণে উল্টাপাল্টা কথা বলছেন।’ তিনি অভিযোগ করেন, আইভীর কর্মী-সমর্থকেরা তাঁর পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে। নগর ভবনের প্রায় ২০০ কর্মীকে আইভী নির্বাচনের কাজে লাগিয়েছেন।

এ ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারদলীয় সাংসদ শামীম ওসমান বাধা হতে পারেন—এমন আশঙ্কা জানিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শামীম ওসমান নির্বাচন প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারেন। তাঁর এই প্রভাব বিস্তার ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান সাখাওয়াত।