আমরা সরকারি দলের মধ্যে আত্মশুদ্ধি চাই: রানা দাশগুপ্ত

সম্প্রীতি পুনরুদ্ধার সমাবেশ ও পদযাত্রার আয়োজন করে ইসকন। এতে অংশ নেন বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের নন্দনকানন এলাকায়।
ছবি: সৌরভ দাশ

বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর একাত্তরের আওয়ামী লীগ কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কোনো রাজনীতিবিদের ওপর আমাদের আস্থা নেই। আমরা সরকারি দলের মধ্যে আত্মশুদ্ধি চাই।’

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ, মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা হয়। এসব ঘটনার প্রতিবাদে ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আহ্বানে বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামের নন্দনকানন চত্বরে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটি আয়োজিত এক সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশে রানা দাশগুপ্ত ওই কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ ক্রমশ ১৯৪৮ সালের আওয়ামী মুসলিম লীগের দিকে চলে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক হামলার এই দেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ নয়। রাজনৈতিক দলের নেতারা একটি কথা বলতে অভ্যস্ত, বাংলাদেশে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আছে, তা পৃথিবীর কোনো জায়গায় নেই। পঁচাত্তরের পর রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে সংবিধানকে সাম্প্রদায়িকীকরণ করে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানে ভাগ করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করেছে।’

প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এল, আমরা আশা করেছিলাম, সাম্প্রদায়িক হামলার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। কিন্তু আমাদের সব আশায় ছাই দিয়ে সাম্প্রদায়িক হামলা শুধু অব্যাহত নয়, বরং বেড়েছে।’

সমাবেশে চট্টগ্রামের উত্তর-দক্ষিণ, নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি নগর বিএনপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষে একটি পদযাত্রা বের হয়।

রানা দাশগুপ্তের বক্তব্য প্রসঙ্গে সাবেক মেয়র ও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় আপনাদের মতো আমিও ব্যথিত। কিন্তু প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানালে কেউ সুযোগ পাবে কি না, সেটাও ভেবে দেখতে হবে। অনেকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের জন্য বসে আছে।’

সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘হামলার ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে তাদের শাস্তি দিতে হবে। অনর্থক লোক ধরে এনে লোক দেখানো বিচার আমরা চাই না।’

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অনুপম সেন বলেন, ‘রাষ্ট্রের কোনো বিশেষ ধর্ম থাকতে পারে না। সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম বাদ দিতে হবে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকারীদের মৃত্যুদণ্ড চাই।’

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ইসকনের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী। সমাবেশে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা ইন্দু নন্দন দত্ত, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিত, ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, ইসকন চট্টগ্রামের বিভাগীয় সম্পাদক চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্য ভাষা বিভাগের অধ্যাপক জিনবোধি ভিক্ষু, পাথরঘাটা ক্যাথলিক চার্চের ফাদার লেনার্ড, শংকর মঠের অধ্যক্ষ তপনানন্দ ব্রহ্মচারী, কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী উদ্‌যাপন পরিষদের সম্পাদক প্রবীর সেন, চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য প্রমুখ বক্তব্য দেন।