আ.লীগের পদ হারাচ্ছেন হেলেনা জাহাঙ্গীর

হেলেনা জাহাঙ্গীর।
ফাইল ছবি

ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্যপদ হারাচ্ছেন। দলটির মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্যপদ থেকে বাদ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপকমিটির সদস্যসচিব ও আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ।

মেহের আফরোজ রাতে প্রথম আলোকে বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীর উপকমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে পারছেন না। তাঁর কিছু কিছু কাজ সংগঠনকে বিব্রত করছে। এ জন্য তাঁকে উপকমিটির সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানানো হবে।

জয়যাত্রা টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও হেলেনা জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য হন গত ১৭ জানুয়ারি। এর আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের দিকে তিনি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। আবদুল মতিন খসরু মারা গেলে ওই আসনে মনোনয়নের জন্য দলীয় ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। তবে মনোনয়ন পাননি।

সম্প্রতি ফেসবুকে নেতা বানানোর ঘোষণা দিয়ে ছবি পোস্ট করে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে সংগঠনটির জেলা, উপজেলা ও বিদেশি শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হেলেনা জাহাঙ্গীর আর সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মনির।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, হেলেনা জাহাঙ্গীরের রাজনীতি নিয়ে দলের ভেতরে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। একেক সময় একেক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তাঁর ছবি প্রকাশিত হয়েছে। এরপরও তাঁকে উপকমিটির সদস্য করা নিয়ে সমালোচনা করেছেন কোনো নেতা। ওই সূত্র বলছে, হেলেনা জাহাঙ্গীরকে উপকমিটিতে যুক্ত করার জন্য বেশ কজন কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রী সুপারিশ করেছিলেন। এ জন্যই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা না থাকার পরও তাঁকে সদস্য করা হয়। এখন সমালোচনার মুখে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় হেলেনা জাহাঙ্গীর সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি আন্দোলনকারীদের খাবার সরবরাহসহ নানা তৎপরতায় যুক্ত ছিলেন। তাঁর একটি অনলাইন টিভি আছে। গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগের ভালো দিক প্রচার করবেন—এমনটাই বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি বিভিন্ন টেলিভিশনের টক শোতে অংশ নিয়ে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে পারেননি। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁর কথাবার্তা হাস্যরসের জন্ম দিয়েছে।

আরেকজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, এখন টাকাওয়ালা এবং ব্যক্তিগত যোগাযোগ দিয়ে অনেকেই রাতারাতি আওয়ামী লীগের নেতা বনে যাচ্ছেন। তাঁরা এই পরিচয় ব্যবহার করে নিজেদের লাভ করছেন। এতে দলের কোনো লাভ হচ্ছে না। এর ফলে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। এখন বদনাম হওয়ার পর হেলেনা জাহাঙ্গীরকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। নেওয়ার সময় কেন ভাবা হয়নি?
এদিকে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরাও উপদেষ্টা পরিষদের পদ থেকে হেলেনা জাহাঙ্গীর বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ বিষয়ে গত মাসেই দপ্তর থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিষয়ে নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কথা এসেছে। এরপরই তাঁরা তাঁকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।