আ.লীগের রাজনীতিতে ‘এসপি লীগের’ দাপট

সৈয়দ নুরুল ইসলাম ২০১৪ সালে পুলিশ সুপার থাকাকালে এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়ান। তাঁর গ্রুপটি ‘এসপি লীগ’ নামে পরিচিত।

৬ ফেব্রুয়ারি শিবগঞ্জ পৌরসভার এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন সৈয়দ নুরুল ইসলাম (ডান থেকে দ্বিতীয়)। তাঁর ডানে ছোট ভাই পৌর মেয়র সৈয়দ মনিরুল ইসলাম। বাঁয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

তিনি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। কিন্তু তাঁকে ঘিরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গড়ে উঠেছে একটি প্রভাবশালী পক্ষ। যারা ‘এসপি লীগ’ নামে পরিচিত। দলীয় রাজনীতিতে আগে তেমন ভূমিকা না থাকলেও এই পুলিশ কর্মকর্তার বড় ভাই আওয়ামী লীগের মনোনয়নে হয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ছোট ভাই হয়েছেন পৌরসভার মেয়র।

এই কর্মকর্তার নাম সৈয়দ নুরুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক বিভাগ, দক্ষিণ)। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের জালমাছমারি গ্রামে তাঁর বাড়ি। নুরুল ইসলাম ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এ
সপি) থাকাকালে শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়ান। এরপর তাঁর গ্রুপটি ‘এসপি লীগ’ নামে পরিচিতি পায়।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা–কর্মীদের অভিযোগ, সৈয়দ নুরুল ইসলাম সরকারি চাকরিজীবী হয়েও চাঁপাইনবাবগঞ্জ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করেন। জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ এখন তাঁর সমর্থিত নেতাদের হাতে।

তবে সৈয়দ নুরুল ইসলাম প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ২০১৪ সালে শিবগঞ্জে জামায়াত-শিবির তাণ্ডব শুরু করলে তিনি এলাকার আওয়ামী লীগের নির্যাতিত নেতা–কর্মীদের পাশে দাঁড়ান। তখন থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও যোগাযোগ তাঁর।

আমি দল-পাগল টাইপের মানুষ। দলকে ভালোবাসি বিধায় দলীয় লোকজনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে, যোগাযোগ আছে।
সৈয়দ নুরুল ইসলাম, যুগ্ম কমিশনার, ডিএমপি
ডিএমপি কার্যালয়ে সৈয়দ নুরুল ইসলাম (মাঝে)। তাঁর বামে শিবগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রিজভী রানা ও ডানে সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসিফ আহমেদ
ছবি: সংগৃহিত

‘এসপি লীগ’ বিষয়ে সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, দল থেকে বিচ্যুত ও জনগণ দ্বারা ধিক্কৃত হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিছু নেতা ‘এসপি লীগ’ নামে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের নুরুল বা এসপি লীগ ইত্যাদি বলার চেষ্টা করে। ওরা (তাঁর সমর্থকেরা) এসপির নামে স্লোগান দেয় না। স্লোগান দেয় আওয়ামী লীগের। কেউ যদি পৃষ্ঠপোষকতা না দেয়, তাহলে দলটাকে বাঁচাবে কে?’

‘এসপি লীগের’ আবির্ভাব

শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ সালে সৈয়দ নুরুল ইসলাম তাঁর গ্রামের বাড়িতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীদের নিয়ে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেন। এরপর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ‘এসপি লীগের’ আবির্ভাব হয়।

২০২০ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। সম্মেলনে আবু আহমেদ নাজমুল কবীরকে সভাপতি ও আতিকুল ইসলামকে (টুটুল খান) সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এই দুজনই সৈয়দ নুরুল ইসলামের অনুসারী। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সৈয়দ নুরুল ইসলাম শিবগঞ্জের দিশাহারা নেতা–কর্মীদের উজ্জীবিত করেছেন।

তবে শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক জহির হাসান চৌধুরী বলেন, চর দখলের মতো শিবগঞ্জে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও কৃষক লীগ দখল হয়ে গেছে। সৈয়দ নুরুল ইসলাম তাঁর পছন্দের লোকদের প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে দলকে নষ্ট করেছেন।

ডিএমপি কার্যালয়ে সৈয়দ নুরুল ইসলামকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন শিবগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ হিল বাকির
ছবি: সংগৃহিত

২০২০ সালের জুলাইয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে শিবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কারিবুল হকের সমর্থক সুকুদ্দির বাড়িতে হামলা চালান নুরুল ইসলামের অনুসারীরা। কারিবুল অভিযোগ করেন, এর প্রতিবাদে তাঁরা উপজেলা ডাকবাংলোর সামনে মানববন্ধন করলে সেখানেও হামলা হয়।

‍এ বিষয়ে সৈয়দ নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তারা ‘নুরুল এসপির বিচার চাই’ প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। এটা নিয়ে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।

দুই ভাই হলেন জনপ্রতিনিধি

২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন সৈয়দ নুরুল ইসলামের বড় ভাই সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তিনি এখন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থী হবেন বলে এলাকায় প্রচারণা আছে।

তবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম শিবগঞ্জ মহিলা কলেজের রসায়ন বিষয়ের প্রদর্শক (ডেমোনেস্ট্রেটর) ছিলেন। উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার পর কলেজের চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। ওই কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে চাকরি করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও দুর্লভপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রাজীব।

ডিএমপি কার্যালয়ে সৈয়দ নুরুল ইসলাম কেক খাইয়ে দিচ্ছেন শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হককে। তাঁর ডানে উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি তুষার আহমেদ
ছবি : সংগৃহিত

আবদুর রাজীব প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯ বছর থেকে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে বিএনপি হিসেবে দেখে আসছি। উপজেলা নির্বাচনের তিন মাস আগে হঠাৎ শুনি, তিনি আওয়ামী লীগ হয়ে গেছেন।’ সৈয়দ নজরুল ইসলাম একসময় বিএনপির রাজনীতি করতেন বলে প্রথম আলোকে বলেছেন বিএনপির সাবেক সাংসদ মো. শাজাহান মিয়াও।

তবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, তিনি কখনো বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তাঁর প্রয়াত বড় ভাই সৈয়দ আলী হোসেন মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন শাজাহান মিয়ার অধীনে। এ কারণে অনেকে মনে করেন তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো।

সৈয়দ নজরুল ইসলামের বিপক্ষে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন জেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মহসীন আলী। তাঁর অভিযোগ, সৈয়দ নুরুল ইসলাম তখন কুমিল্লার এসপি ছিলেন। তিনি বড় ভাইকে জেতাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ প্রশাসন দিয়ে নির্বাচন প্রভাবিত করেছিলেন।

শিবগঞ্জে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সৈয়দ নুরুল ইসলাম (মাঝে)। ছবি বা থেকে জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাহিদ শিকদার, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক টিসু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবদুল আউয়াল গণি
ছবি : সংগৃহিত

মহসীন আলী বলেন, সে সময় তাঁর গাড়িতে হামলা হলে তিনি শিবগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের তখনকার এসপি টি এম মোজাহেদুল ইসলামকে নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে রাজশাহীর অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক আরিফুল ইসলামকে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন।

গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি শিবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র হন সৈয়দ নুরুল ইসলামের ছোট ভাই সৈয়দ মনিরুল ইসলাম। দলীয় সূত্র জানায়, ২০২০ সালের আগে মনিরুল ইসলাম স্থানীয় আওয়ামী লীগ বা সহযোগী কোনো সংগঠনের সদস্য ছিলেন না। তবে মনিরুল দাবি করেন, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে ছাত্রলীগের সালাম-বরকত হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

সৈয়দ নুরুল ইসলামের ভাষ্য, তাঁর দুই ভাইয়ের নির্বাচনকালে তিনি এলাকায় যাননি। তাঁর বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

জেলার রাজনীতিতেও হস্তক্ষেপ

দলীয় সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল কেন্দ্র থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন যথাক্রমে আরিফুর রেজা ও সাইফ জামান। দুজনই সৈয়দ নুরুল ইসলামের অনুসারী। ২০২০ সালে আরিফুর রেজা জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হন। পরে তিনি জেলা ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেন।

জেলা কমিটিতে নুরুল ইসলামের নিয়ন্ত্রণ নেই বলে দাবি করেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, ‘সহযোগী সংগঠনগুলোতে সৈয়দ নুরুল ইসলামের নিয়ন্ত্রণ আছে। তিনি কেন্দ্রে লবিং করে তাঁর লোকদের কমিটিতে ঢোকান। আর শিবগঞ্জ আওয়ামী লীগে তাঁর হস্তক্ষেপ প্রকটভাবে আছে। গত পৌর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সদরেও শুরু হয়েছে। আমরা সব খেয়াল রাখছি।’

সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, তিনি শিক্ষিত ও মেধাবী তরুণদের রাজনীতি করতে পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তাঁর দাবি, যাঁরা পদ না পেয়ে কোণঠাসা হয়েছেন, তাঁরাই এসব প্রশ্ন তুলছেন।

গত বছরের নভেম্বরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে মেয়র হন ব্যবসায়ী মোখলেছুর রহমান। মোখলেছুর রহমান আগে কখনো দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তিনি সৈয়দ নুরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

দলীয় সূত্র জানায়, পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ নুরুল ইসলামের সঙ্গে জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সামিউল হকের দ্বন্দ্বের কারণে রাজনীতিতে আবির্ভাব ঘটে মোখলেছুর রহমানের। ২০১৯ সালের অক্টোবরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ শূন্য হলে মোখলেছুরকে এই পদ দেওয়া হয়। তিনি এখন জেলা আওয়ামী লীগেরও সদস্য।

গত ৭ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা কার্যালয়ে আলাপকালে মোখলেছুর তাঁর দলীয় রাজনীতি ও মেয়র হওয়ার পেছনে সৈয়দ নুরুল ইসলামের অবদান সবচেয়ে বেশি বলে প্রথম আলোকে জানান। অন্যদিকে, ২০১৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে সামিউল হক মনোনয়ন পেলেও পরেরবার দলের মনোনয়ন পাননি। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করায় এখন দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে রাজনীতি ছেড়েছেন। সামিউল হক এখন আর এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে চান না। তিনি বলেন, ‘ঋণ করে ব্যবসা করি। কথা বলে বিপদ পড়তে চাই না।’

‘পুলিশের একজন কর্মকর্তা হয়ে রাজনীতিতে জড়ানো বা রাজনীতিসংক্রান্ত কাজকর্মে জড়ানো সরকারি কর্মচারী আচরণবিধির পরিপন্থী। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
মুহাম্মদ নুরুল হুদা, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক

‘এসপি লীগে’ ক্ষুব্ধ নেতারা

গত বছরের ৬ অক্টোবর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন হয়। এতে শহীদুল হুদা সভাপতি ও আবদুল আউয়াল গণি সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হন। দুজনই সৈয়দ নুরুল ইসলাম গ্রুপের।

দলীয় সূত্র জানায়, স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ দুই পদের জন্য সক্রিয় ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওদুদের অনুসারীরাও। পরে সমঝোতা হয় এবং নুরুলের পক্ষের আবদুল আউয়াল গণিকে সভাপতি ও ওদুদের পক্ষের ফাইজার রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

শিবগঞ্জের রাজনীতিতে এসপি লীগের উত্থানের পর এই পক্ষের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাংসদ ও জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সামিল উদ্দিন আহমেদের সমর্থকদের বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। সামিল উদ্দিন কয়েকবার জেলা কমিটির কাছে অভিযোগ করেন, তাঁর পক্ষের নেতা–কর্মীদের বাদ দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি করা হয়েছে। এই দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

সাংসদ সামিল উদ্দিন এখন আর সৈয়দ নুরুল ইসলামকে নিয়ে কথা বলতে চান না। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন চলে এসেছে। ওই গ্রুপেও অনেক লোক আছে। তাদেরকেও ভোটে লাগবে। এ জন্য আমি বিরোধে যেতে চাচ্ছি না। এখন থেকে দেড়-দুই বছর আগে হলে অনেক কথা বলা যেত।’

সৈয়দ নুরুল ইসলাম অযাচিত হস্তক্ষেপ করে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করছেন বলে প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ আবদুল ওদুদ। বিষয়টি দলকে অবগত করেছেন কি না, জানতে চাইলে আবদুল ওদুদ বলেন, সবার মধ্যে তাঁকে নিয়ে ভয় আছে।

ডিএমপি কার্যালয়েও সমর্থকদের আনাগোনা

সৈয়দ নুরুল ইসলামের বক্তব্য নিতে তাঁর দেওয়া সময় অনুযায়ী গত ১৪ মার্চ বেলা ১১টায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কার্যালয়ে গেলে এই প্রতিবেদককে তাঁর কক্ষে নিয়ে যান তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী সাবেক এএসআই আল মামুন। তখন ওই কক্ষে শিবগঞ্জের কয়েকজন বাসিন্দা বসা ছিল। নুরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জের অন্তত ৫০ জন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন।

কিছুক্ষণ পর শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ৮ থেকে ১০ জনের একটি দল নিয়ে আসেন সেখানে। তখন সৈয়দ নুরুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মানুষের কেন্দ্রবিন্দু একটাই। সেটা হচ্ছি আমি।’ পুলিশ কর্মকর্তা হয়ে রাজনীতিতে জড়ানো ঠিক কি না, জিজ্ঞেস করলে তিনি প্রথমে বলেন, তিনি সরকারের যত ধরনের নিয়ম আছে, সেগুলো মেনে চলেন। এর পরপরই বললেন,‘আমি দল–পাগল টাইপের মানুষ। দলকে ভালোবাসি বিধায় দলীয় লোকজনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে, যোগাযোগ আছে।’ সরকারি কার্যালয়ে রাজনৈতিক নেতাদের আসা-যাওয়া বিষয়ে তাঁর ভাষ্য, ‘তারা শুধু যে রাজনীতির কারণে আসে তা নয়। অনেকে বিভিন্ন সমস্যা নিয়েও আসে।’

তবে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশের একজন কর্মকর্তা হয়ে রাজনীতিতে জড়ানো বা রাজনীতিসংক্রান্ত কাজকর্মে জড়ানো সরকারি কর্মচারী আচরণবিধির পরিপন্থী। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’