ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ফাইল ছবি

আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধী দল বিএনপি। বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু কোনো নির্বাচনের যোগ্য নয় বলে মন্তব্য করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। বিএনপির পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গতকাল শনিবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

বিএনপির এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস দেখিয়ে চরম প্রতিকূল অবস্থাতেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দল। কিন্তু সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে প্রমাণিত হয়েছে, এই কমিশন কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের যোগ্য নয়।

বিএনপির মতে, এই সরকার অনির্বাচিত একটি সরকার এবং সরকারের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই কমিশনের প্রধান কাজ।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের বিরোধিতা বিএনপি সব সময়ই করে আসছে। তারা বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ উল্লেখ করে আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকে নিজেদের দূরে রাখার সিদ্ধান্ত জানাল।

এ ছাড়া সভায় বিএনপি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে গণবিরোধী আখ্যা দিয়ে এই আইন বাতিলের জোর দাবি জানিয়েছে। এ আইনের আওতায় আটক ব্যক্তিদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি তুলেছে বিরোধী দলটি।  

সভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় দ্রুত বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে এই মৃত্যুর কারণ উদ্‌ঘাটনের এবং দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানায় বিএনপি। লেখক মুশতাক অসুস্থ হওয়ার পর কোনো চিকিৎসা না দেওয়ার অভিযোগ করা হয় সভা থেকে এবং তাঁর জামিন না দেওয়ারও নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।

সভায় উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ।

সভায় বর্তমান সরকারকে গণবিরোধী স্বৈরাচারী সরকার হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সব সাংবিধানিক অধিকার হরণ করে বিভিন্ন কালাকানুন, বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো একটি ভয়ংকর নির্যাতনমূলক আইনের মাধ্যমে জনগণের বাকস্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা, সব সাংবিধানিক অধিকার, স্বাধীন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করে চলেছে।

বিএনপির দাবি, এই আইনের আওতায় ইতিমধ্যে প্রায় ৭০০ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সাংবাদিক নেতা রুহুল আমীন গাজী, দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদকসহ অসংখ্য সাংবাদিক, লেখক, পেশাজীবীকে আটক করা হয়েছে। তাঁরা বিনা বিচারে কারাগারে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে বলে মত প্রকাশ করা হয় সভায়।

বিএনপি মনে করে, অবৈধ দখলদার আওয়ামী লীগ সরকারের প্রশ্রয়ে হত্যা–নির্যাতন বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি নোয়াখালীতে তরুণ সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির নিহত হওয়ার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে, হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনার দাবি করা হয়েছে সভা থেকে।

সাংবাদিক বুরহান আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়েছেন বলেও অভিযোগ করা হয়।

সভায় শনিবার বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের খুলনায় পূর্বঘোষিত সমাবেশ কর্মসূচি বানচাল করার অভিযোগ তোলা হয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিএনপির নেতা-কর্মীদের নির্বিচারে আটক এবং সমাবেশে লোকসমাগম ঠেকাতে পুলিশ দিয়ে বাসমালিকদের ধর্মঘটে যেতে বাধ্য করা এবং বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কর্মীদের পুলিশি তল্লাশি ও বাধা প্রদান করা হয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এর মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো সরকার জনগণের মত প্রকাশ, সভা, সমাবেশের অধিকারসহ সব গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক অধিকার নগ্নভাবে খর্ব করে চলেছে এবং স্বৈরাচারী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে।

সভা–সমাবেশ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্র সব ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার জন্য সভা থেকে আহ্বান জানায় বিএনপি।

সভায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরীক্ষা স্থগিতের ঘটনায় বিক্ষোভ ও উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর ব্যর্থতার সমালোচনা করেন বিএনপি নেতারা এবং একই সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে তালা দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের হল ছাড়তে বাধ্য করার নিন্দা জানান।

কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না নিয়ে কিংবা এলাকাবাসীর সঙ্গে বিরোধ-মীমাংসার কোনো উদ্যোগ না নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের এভাবে বের করে দেওয়াকে চরম অপরাধ বলে মত প্রকাশ করে দলটি।

অবিলম্বে এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান বিএনপি নেতারা।

এ ছাড়া সাম্প্রতিক বিভিন্ন উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচন ও পৌরসভা নির্বাচনে সরকারের হস্তক্ষেপ এবং নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতার নিন্দা জানানো হয়।

সভায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপনে জাতীয় কমিটির ঘোষিত মার্চ মাসের কর্মসূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং ওই কমিটির সভাপতি খন্দকার মোশাররফ হোসেনের প্রস্তাবিত সব কর্মসূচি অনুমোদন করা হয়।

সম্প্রতি কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হয়ে সাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার খালেদ ইব্রাহিম এবং লেখক, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদসহ বিশিষ্ট নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করা হয়।