ইভিএম নিয়ে সন্দেহের কথা জানাল জাপাসহ আটটি দল

নির্বাচন কমিশন

সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের ইঙ্গিত দেওয়া হলেও সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির অবস্থান এর বিপক্ষে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জাতীয় পার্টি স্পষ্টতই বলেছে, দেশের ভোটাররা ইভিএমে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত নন। জাতীয় পার্টির পাশাপাশি নিবন্ধিত আরও সাতটি দলের প্রতিনিধিরা ইসির সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ইভিএম নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা বলেছেন, মানুষের মনে ইভিএম নিয়ে যেসব সন্দেহ ও অবিশ্বাস রয়েছে, তা এখনো দূর হয়নি।

রোববার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইভিএম বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে ইসি। প্রথম দফায় ১৩টি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর মধ্যে ১০টি দল অংশ নিয়েছে। আমন্ত্রণ পেয়েও সভায় যায়নি গণফোরাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও বাংলাদেশের জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। ইসি বলছে, পর্যায়ক্রমে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ নিয়ে সভা হবে। ইভিএম নিয়ে ইসির পরের বৈঠক হবে ২১ জুন। এই বৈঠকে বিএনপি, জেএসডিসহ ১৩টি দল ইসির আমন্ত্রণ পাবে।

সভায় জাতীয় পার্টির পাশাপাশি অংশ নিয়েছে জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (ডা. মতিন), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ও বাংলাদেশ কংগ্রেস।

জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক বলেন, সাধারণ মানুষের ধারণা হলো, ইভিএমের মধ্যে অন্য কোনো কারসাজি আছে। এর চেয়ে বড় বিষয় হলো দেশের ভোটাররা ইভিএমে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত নন। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ইভিএমের ব্যবহার চায় না।

জাপার মহাসচিব বলেন, ভোট দিতে গেলে দেখা যায় ইভিএমে ফিঙ্গার প্রিন্ট মেলে না। ইভিএমে আস্থা না দেখানোর কোনো কারণ নেই। কিন্তু ইভিএম নিয়ে একটা পাবলিক পারসেপশন তৈরি হয়েছে, এর মধ্যে কোনো কারসাজি আছে, ইভিএমে বিশেষ কোনো দল ‘কিছু’ করতে পারে।

ইভিএম মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না বলে সভায় উল্লেখ করেন জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, নির্বাচনে এক কেন্দ্রে ইভিএম, আরেক কেন্দ্রে ব্যালট ব্যবহার করা ঠিক হবে না।

বাংলাদেশ মুসলিম লীগের স্থায়ী কমিটির সদস্য আতিকুল ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষ ইভিএমকে ‘ডিজিটাল কারচুপির’ একটি নির্ভরযোগ্য যন্ত্র বলে মনে করে।

মতবিনিময় সভা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ইভিএমের ব্যাপারে অনেকের বক্তব্য ইতিবাচক, আবার অনেকে বলেছেন ইভিএম ব্যবহার করা সমীচীন হবে না। কিন্তু ইভিএমের অনেক বিষয় তাঁদের অজানা ছিল, নির্বাচন কমিশনের বিশেষজ্ঞরা বিষয়গুলো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের বুঝিয়ে বলেছেন।

এর আগে সভায় নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিএনএফের সভাপতি এস এম আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, সমস্যা ইভিএমে নয়। সমস্যা হচ্ছে যখন ভোট দেওয়া হয়, তখন ভোটকক্ষে ডাকাত থাকে। ডাকাতদের সরাতে হবে। এটাই নির্বাচনের বড় সমস্যা।

বিএনএফের সভাপতির এ বক্তব্যের পর সভায় উপস্থিত থাকা বাংলাদেশ মিশন টুলস ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘আপনি যে প্রশ্ন তুললেন, ওখানে যদি আরেকজন থাকে, এতে তো ইভিএমের কিছু করার নাই। এটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের সমস্যা।’

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা ও মো. আলমগীর, ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার ও সেনাকল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম প্রমুখ।

সভায় জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান প্রশ্ন তোলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন ইভিএম বর্জন করছে, সেখানে বাংলাদেশে কেন এ পদ্ধতি ব্যবহারের দিকে এগোচ্ছে। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, মালয়েশিয়া, ভেনিজুয়েলাসহ অনেক দেশ ইভিএম বর্জন করেছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য মনে করে, ইভিএম গণতন্ত্রের বিকাশে বাধা।