এই বাজেট দুর্নীতিবাজদের স্বার্থে: জোনায়েদ সাকি

জোনায়েদ সাকি
ফাইল ছবি

চলতি বছরের প্রস্তাবিত বাজেট দুর্নীতিবাজদের স্বার্থে। স্বাস্থ্য খাত পুনর্গঠনের উদ্যোগের ন্যূনতম কোনো ছাপ এই বাজেটে নেই। করোনাকালে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা নতুন করে দারিদ্র্যে প্রবেশ করা জনগোষ্ঠীর সংকট উত্তরণের কোনো পরিকল্পনাও নেই।

রাজধানীর হাতিরপুলে গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে আজ শনিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সেখানে এসব কথা বলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে এবারও থোক বরাদ্দ দেওয়া কথা বলা হয়েছে। এর মানে হচ্ছে স্বাস্থ্য খাতের কোন কোন বিষয়ে সরকার অগ্রাধিকার দেবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। এই অগ্রাধিকার সুনির্দিষ্ট না থাকার ফলে ব্যয় কিভাবে হবে তার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকে না। ফলে বিভিন্ন ক্রয় খাত থাকে, সেখানে বিভিন্ন ‘লবিস্ট গ্রুপ’ প্রকল্প নিয়ে হাজির হয় এবং সেখানে দুর্নীতির নহর বয়ে যায়।

জিডিপির ফুলানো বেলুন যেকোনো মুহূর্তে ফেটে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, জনগণের হাতে টাকা না এলে, তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি না পেলে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ার দশায় যাবে। টেকসই উন্নয়ন, যা অধিকাংশ মানুষের সুযোগ তৈরি করে, সেটা নিশ্চিত না করলে জিডিপির ফুলানো বেলুন যেকোনো মুহূর্তে ফেটে যেতে পারে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি সেই পথেই হাঁটছে।
জোনায়েদ সাকি বলেন, বর্তমান সরকার শুরু থেকেই বৃহত্তর জনস্বার্থকে অবজ্ঞা করে মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণ করে আসছে। মহামারি কালের এই দ্বিতীয় বাজেটে তা আরও প্রকট হয়ে ধরা পড়েছে। তিনি বলেন, শিক্ষায় ৯৫ হাজার কোটি টাকার যে বরাদ্দের কথা বলা হচ্ছে তা মোট বাজেটের ১৬ শতাংশ। শিক্ষায় সর্বোচ্চ বরাদ্দের মিথ্যা গৌরব আছে, ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা নেই। সামাজিক নিরাপত্তা খাত উপেক্ষিত থাকছে মহামারির মধ্যেও।

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বাজেট নিছক আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়, বাজেটের মধ্যে যে নীতির প্রতিফলন ঘটে সে নীতিটা আমাদের বিবেচনায় নেওয়া দরকার। আমাদের দেখা দরকার নীতির পেছনে কি আছে। বিদ্যমান নীতিতে দেখা যাবে সরকার বাজেটে কোথাও কম-বেশি বরাদ্দ বাড়িয়েছে, কিংবা কমিয়েছে।’
তিনি বলেন, এই বরাদ্দ বাড়ানো বা কমানোর মধ্যে বাস্তবে কোনো পরিবর্তন ঘটে না। মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে এর সম্পর্ক থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে টাকার অঙ্কের ক্ষেত্রে হয়তো বরাদ্দ বাড়ে বটে। কিন্তু এই বরাদ্দকৃত টাকা ব্যয়ের যে একটা জবাবদিহির জায়গা আছে সেটা বাজেটে উল্লেখ থাকে না।

করোনাকালে দারিদ্র্যসীমার নিচের মানুষদের জন্য বরাদ্দ কম বেড়েছে। গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষ থেকে বলা হয়, করোনাকালে অর্থনৈতিক অচলাবস্থায় বিপন্ন প্রান্তিক মানুষকে রক্ষা করতে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম জোরদার প্রত্যাশিত ছিল। সরকারের তরফ থেকেও এ নিয়ে বড় বড় কথা শোনা গেছে। অথচ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ চলতি বছরের প্রায় ৯৬ হাজার কোটি টাকা থেকে সামান্য বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকার মতো। এই বরাদ্দেরও একটি বড় অংশ আসলে বিপন্ন মানুষদের কাছে যাচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান। আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মনির উদ্দীন প্রমুখ।