এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি
আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই আওয়ামী লীগের নতুন সম্পাদকমণ্ডলীর নাম ঘোষণা করা হতে পারে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হতে সপ্তাহ খানেক লাগতে পারে। এ অবস্থায় পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পেতে আগ্রহী নেতাদের অনেকে গণভবন ও দলের ধানমন্ডি কার্যালয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এর মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর ফাঁকা তিন পদে কে আসছেন—তা নিয়েই এখন দলে বেশি আলোচনা চলছে।
গঠনতন্ত্র অনুসারে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ হবে ৮১ সদস্যের। গত রোববার কাউন্সিলরদের উপস্থিতিতেই ২১ সদস্যের নাম ঘোষণা হয়ে গেছে। সভাপতিমণ্ডলীর তিনটি, সম্পাদকমণ্ডলীর ২৯টি ও নির্বাহী সদস্যের ২৮টি পদ এখনো ঘোষণা করা হয়নি। এর বাইরে উপদেষ্টা পরিষদ, জাতীয় কমিটি ও সহসম্পাদক পদও রয়েছে। দলের গঠনতন্ত্রে এসব কমিটি নির্বাচনে দলীয় সভাপতিকে একক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে নির্দিষ্ট সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া নেই। অবশ্য নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল সোমবার গণমাধ্যমকে বলেছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এখন সবার দৃষ্টি সভাপতিমণ্ডলীর ফাঁকা তিনটি পদের দিকে। দলীয় প্রধান এই তিনটি পদে কেন কারও নাম ঘোষণা না করে ফাঁকা রেখেছেন, তা নিয়ে দলে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে।
বিদায়ী কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, এই তিনটি পদ এখনই পূরণ হবে কি না, সন্দেহ আছে। পরে বিশেষ কোনো প্রয়োজনে কাউকে অন্তর্ভুক্তির জন্য হয়তো আপাতত ফাঁকা রাখা হতে পারে। একই কারণে বিগত কমিটিতেও সভাপতিমণ্ডলীর দুটি পদ ফাঁকা রাখা হয়েছিল।
নতুন কমিটির একজন নেতা বলেন, সম্পাদকমণ্ডলীতে খুব বড় কোনো পরিবর্তন হবে না। সভাপতিমণ্ডলীতে কয়েকজনকে পদোন্নতি দেওয়ায় সম্পাদকমণ্ডলীতে কয়েকটি শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে। সেগুলোতে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। বাকি পদগুলোতে আগের কমিটির নেতাদের রেখে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগের জন্য একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বাছাই করতে হবে।
>আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর তিন পদই এখন আকর্ষণ
আরও আছে বিষয়ভিত্তিক সম্পাদক ও দপ্তর সম্পাদকের পদ। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী আবদুস সোবহান (গোলাপ) গত দুই বছর দপ্তর সামলাচ্ছেন। তাঁকেই এই পদে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। বিষয়ভিত্তিক সম্পাদক পদে তারানা হালিম, নসরুল হামিদ, জুনাইদ আহ্মেদসহ কিছু তরুণ ও নারী আসতে পারেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্যসংখ্যা ২৮টি। দলীয় সূত্র জানায়, দলীয় শীর্ষ পর্যায় না চাইলে সদস্যদের খুব একটা সাংগঠনিক কাজ নেই। দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে অংশগ্রহণই মূল কাজ। সভাপতিমণ্ডলী কিংবা সম্পাদকমণ্ডলীতে স্থান দেওয়া যায়নি অথবা সহযোগী সংগঠনে দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন, এমন নেতাদের নির্বাহী সদস্য হিসেবে স্থান দেওয়া হয়। জাতীয় সম্মেলনের ২১ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে গঠনতন্ত্রে।
গঠনতন্ত্রে উপদেষ্টা পরিষদকে দলের ‘থিংক ট্যাংক’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ৪১ সদস্যের এই পরিষদে নিয়োগ দেন দলের সভাপতি। তিনি চাইলে সংখ্যা বাড়াতে পারেন। ফোরামের অধীন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক—এই তিন বিষয়ে সেল থাকার কথা বলা হয়েছে। তবে এ ধরনের সেলের কার্যক্রম এর আগে ছিল না। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকও হয় কদাচিৎ। দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে, উপদেষ্টা পরিষদে এবার বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।
আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম। কেন্দ্রীয় কমিটির সব সদস্য, সব জেলার সভাপতি এবং সভাপতি কর্তৃক নির্বাচিত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হয়। এবার এই কমিটির সদস্যসংখ্যা ১৬৬ থেকে বৃদ্ধি করে ১৮০ করা হয়েছে। এই কমিটি চূড়ান্ত করতে সময় লাগবে বলে দলীয় সূত্র জানায়।
সহসম্পাদক নিয়ে আগের কমিটি ব্যাপক সমালোচিত ছিল। গত কমিটিকে কতজন সহসম্পাদক ছিল তার সঠিক সংখ্যা কেউ বলতে পারেননি। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক মিলে হাজার খানেক সদ্য সাবেক ছাত্রনেতাকে সহসম্পাদকের পদ দেওয়া হয় বলে বিভিন্ন সময়ে খবর বেরিয়েছিল। নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এর আগে সভাপতিমণ্ডলীতে থাকা অবস্থায় অসংখ্য সহসম্পাদকের বিষয়ে একাধিকবার সমালোচনা করেছিলেন।
গঠনতন্ত্র অনুসারে প্রতিটি বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকীয় বিভাগের অধীনে একটি করে উপকমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। প্রতিটি উপকমিটিতে সহসম্পাদক থাকার কথা পাঁচজন। সব মিলিয়ে শ খানেকের বেশি হওয়ার কথা নয়। দায়িত্বশীল একজন নেতা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, বদনামের কারণে এবার সহসম্পাদক কমিয়ে আনা হবে।