এটা তো ধাপ্পাবাজির মেশিন: ইভিএম নিয়ে জাফরুল্লাহ

রাজধানীর পুরানা পল্টনে গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে করণীয়’ শিরোনামে আলোচনা সভায় বক্তারা
ছবি: প্রথম আলো

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনকে (ইভিএম) ধাপ্পাবাজির মেশিন আখ্যায়িত করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী।‌ এবার জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম দিয়ে ‘ভানুমতির খেলা’ চলবে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।‌

আজ সোমবার বিকেলে ‘দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে করণীয়’ শিরোনামে একটি আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। রাজধানীর পুরানা পল্টনে গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সভার আয়োজন করা হয়।

সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে সরকারের এত ভয় কেন– এমন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আপনি চান ইভিএম।‌ এটা তো ধাপ্পাবাজির মেশিন। এত উন্নয়ন করেছেন, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছেন কেন? বারবার কলা চুরি করা যাবে না। এখন আপনাকে মাঠে নামতে হবে। নির্বাচনের মাঠে খেলতে হবে।’

নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা ছাড়ার আহ্বান জানান জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

আলোচনা সভায় অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ মহাসংকটের মধ্যে আছে। এই সংকট উত্তরণের একমাত্র উপায় সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। এই সুষ্ঠু নির্বাচন করার দায়িত্ব সরকারের। তবে দেখা যাচ্ছে এবারও যেনতেনভাবে নির্বাচন করার জন্য সরকার কাজ করছে।

সরকার কারও মতামতের তোয়াক্কা না করে নিজেদের মতো কাজ করে চলছে বলে অভিযোগ করেন দিলারা চৌধুরী। তিনি বলেন, ‌এ জন্য সবাইকে বুঝতে হবে সামনে বাঁচা–মরার লড়াই। এই লড়াইয়ে হেরে গেলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপদ আছে। এ জন্য সবাইকে যুগপৎ আন্দোলন করতে হবে। তবে এটিও খেয়াল রাখতে হবে, ওই আন্দোলনে যাতে সহিংসতা না হয়।

আলোচনায় অংশ নিয়ে নির্বাচন হবে কি হবে না, তা নিয়ে চিন্তা না করতে রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান কবি–লেখক ফরহাদ মজহার। এই পরামর্শের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন আপনাদের হাতে নাই। কখনোই এটা আপনাদের হাতে ছিল না। যাঁরা মনে করেন নির্বাচন হবে, তখন নির্বাচন করবেন। এখন সময় নষ্ট করবেন না। আগামীর বাংলাদেশ কীভাবে গড়বেন, সেটা নিয়ে ভাবুন। কাজ করুন।’

ফরহাদ মজহার বলেন, যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে সব দল আন্দোলন করেছে, তখন তিনি একা এর বিরুদ্ধে ছিলেন। তাঁর মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘আমরা একটা রাষ্ট্র গঠন করতে পারিনি, একটা শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারিনি, সংবিধান তৈরি করতে পারিনি, জোড়াতালি দিয়ে চলছি। এর মূল্য আমাদের দিতে হচ্ছে।’

তৃতীয় শক্তি বলে কিছু নেই বলে মনে করেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘গণশক্তি আছে তৃতীয় শক্তি নাই। আপনারা যদি গণশক্তি হওয়ার চেষ্টা করেন তাহলে “অটোমেটিক” ক্ষমতায় যাবেন। জনগণই ক্ষমতায় বসাবে। এ জন্য কাজ করতে হবে।’

এবি পার্টির সদস্যসচিব মুজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে এমন কোনো রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন না, যাঁকে জোর করে ক্ষমতা থেকে নামাতে হয়নি। সরকারকে সরাতে হলে সামগ্রিক ঐক্য দরকার।

অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে মুজিবুর বলেন, ‘আমরা যারা হাসিনাকে স্বৈরতান্ত্রিক বলছি, আমরা কি গণতান্ত্রিক? অগণতান্ত্রিক মানসিকতা দিয়ে শেখ হাসিনাকে উৎখাত করা যাবে না। তাই আগে নিজেদের গণতান্ত্রিক হতে হবে।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ বলেন, চলমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। এই সংকটের জন্য সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলগুলো দায়ী। ‌ তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। তাহলে এই সংকট কমবে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি অভিযোগ করে বলেন, সরকার আবার এমন নির্বাচন করতে যাচ্ছে, ওই নির্বাচনে দিনের বেলায় ইভিএম দিয়ে ডাকাতি সম্পন্ন করবে। তিনি বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে ব্যর্থ হলে সার্বভৌমত্ব বিপর্যস্ত হবে। গভীর সংকট থেকে গণতন্ত্রের গতিমুখে ফেরা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, যদি সম্মিলিতভাবে এই জালিমের বিপক্ষে দাঁড়ানো যায়, তাহলে রাজপথের যে আগুন আর মানুষের মনের যে আগুন, এই আগুন ছড়িয়ে দিলে সরকার সাত দিনের বেশি টিকবে না। এ নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, শক্তি খরচ করে সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে।‌ এ জন্য রাজপথের শক্তি, আন্দোলনের শক্তি বাড়াতে হবে। সেই শক্তি সঞ্চয় করতে রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে ঈদের পরে আরেকটি অনুষ্ঠান করার আহ্বান জানান তিনি।

আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক বলেন, সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি শুরু করতে না পারলে সংকট উত্তরণ হবে না।

নুরুল হক বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এখন পর্যন্ত দেশের রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। নানা কারণে বাংলাদেশের ক্ষমতার পরিবর্তন বিদেশের ক্রীড়নক ছাড়া এ দেশের জনগণ করতে সক্ষম হয়নি। এ জন্য তৃতীয় শক্তি, দ্বিতীয় শক্তি বা চতুর্থ শক্তি নয়, গণশক্তির উত্থান ঘটাতে হবে।

আলোচনা সভায় অন্তত ৩০টি রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নিয়েছেন বলে আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এতে আরও বক্তব্য দেন জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফুর রহমান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ জাতীয় লীগের শাহরিয়ার ইফতেখার, বাংলাদেশ নেজামী ইসলাম পার্টির আশরাফুল হক, বাংলাদেশ লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের কাজী আবুল খায়ের, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।