এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকবে: তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ
ফাইল ছবি

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র আর ভোটার আইডি কার্ড এক বিষয় নয়। পৃথিবীর সব দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবার কাজ করে থাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অথবা অন্য কোনো মন্ত্রণালয়। এটি নির্বাচন কমিশন করে না। নির্বাচন কমিশন শুধু ভোটার তালিকা নিয়ে কাজ করে। জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের আশঙ্কা অমূলক। এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকবে।

জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আজ সোমবার তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র একটা চলমান প্রক্রিয়া। সবাইকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। পৃথিবীর সব দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অথবা অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকে। এটি নির্বাচন কমিশন করে না। নির্বাচন কমিশন শুধু ভোটার তালিকা নিয়ে কাজ করে।

জাতীয় পরিচয়পত্রের সেবা সরকারের হাতে থাকা যুক্তিযুক্ত বলে মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যখন এটি একটি প্রকল্প হিসেবে শুধু ভোটার তালিকা প্রণয়নের বিষয় ছিল, তখন এটি নির্বাচন কমিশনের হাতে ছিল। এখন এটি আর ভোটার তালিকা নয়, এটা ন্যাশনাল আইডি কার্ড করা হচ্ছে। তখন এটি সরকারের হাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকায় যুক্তিযুক্ত। সব দেশেই তা আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই কাজ করবে। বিদেশে যারা অবস্থান করছে, তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই পাসপোর্ট দেয়। তাদেরও ন্যাশনাল আইডি কার্ড দেওয়া হয়। সুতরাং এ ক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো সিদ্ধান্ত। ন্যাশনাল আইডি কার্ড দেওয়ার পর ১৮ বছরের বেশি বয়স্ক যাঁরা, যিনি ভোটার হওয়ার উপযোগী, তাঁদের তালিকা তো অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এখন নির্বাচন কমিশন থেকে যে আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে, সেটি আসলে অমূলক। এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকবে।’

জাতীয় পরিচয়পত্রের সেবা নির্বাচন কমিশনের হাতে রাখার দাবি জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। গতকাল রোববার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মনে করি এনআইডি কার্যক্রম ইসির কাছেই থাকা উচিত। কারণ, ইসি এটি তৈরি করেছে ভোটার তালিকা তৈরির ভিত্তিতে। সরকারের যে উৎকণ্ঠা বা পরামর্শ, সেটা হলো কোনো দেশে নির্বাচন কমিশন এনআইডি কার্ড করে না। এটা ঠিকই, কোনো দেশে এটা নির্বাচন কমিশন করে না। অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলনা করলে হবে না। ইসির কাছে এটি থাকলে কোনো অসুবিধা নেই। ইসি সেবা দিতে পারছে।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে ইসি। চলতি মাসে এই কাজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে স্থানান্তর করা যায়, এমন মত দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠি দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এই নির্দেশনা বাস্তবায়িত হলে ইসির পরিবর্তে জাতীয় পরিচয়পত্র দেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

২০০৭ সাল থেকে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন কাজের অংশ হিসেবে নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে আসছে ইসি। তারাই এখন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধনের সব কার্যক্রম পরিচালনা করে। ইসিকে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইনে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৭ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন দেশের উদাহরণের আলোকে সুরক্ষা সেবা বিভাগ এই দায়িত্ব পালনে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বিবেচিত বিধায় সুরক্ষা সেবা বিভাগের দায়িত্বগুলোর মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনসংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

জাতীয় পরিচয়পত্র আইন ২০১০ সংশোধন করে ‘নির্বাচন কমিশন’-এর পরিবর্তে ‘সরকার’ শব্দ অন্তর্ভুক্ত করে আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা যেতে পারে। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল ইসি থেকে সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।