কথা 'উন্নয়ন ইস্যুতে', প্রতিপক্ষের অভিযোগে 'রূঢ়'

আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপির প্রার্থী হাসান সরকার
আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপির প্রার্থী হাসান সরকার

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের দুদিন আগে রোববার বিভিন্ন পথসভা ও জনসংযোগে বারবার ‘উন্নয়নের’ কথাই আবার বলেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। রোববার নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিনে জাহাঙ্গীর ভোট চেয়েছেন বিনীতভাবে। বলেছেন স্বপ্নের কথা। আর প্রতিপক্ষের অভিযোগ খন্ডন করতে গিয়ে হয়েছেন রূঢ়। দুপুরে নিজ বাসভবনে প্রতিপক্ষ প্রার্থী হাসান সরকারে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন জাহাঙ্গীর। কিন্তু সেখানে বারবার কথা বলেছেন ‘উন্নয়ন ইস্যুতে’।

গাজীপুরের শালনায় দিনের প্রথম পথসভা করেন জাহাঙ্গীর আলম। সকাল পৌণে ১০টার দিকে যখন পৌঁছলাম শালনায় তখন চারদিকে লোকে লোকারণ্য। পথসভার জন্য ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের একটি অংশে যানবাহন দাঁড়িয়ে আছে। সমাবেশের উপস্থিতি দেখে সেখানে খুশী স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা শাহাব উদ্দিন বলছিলেন, ‘সকালটা ভালোই হইল ইনশাল্লাহ।’

এমন খুশী হওয়াটা হয়তো সংগতও। শালনা গাজীপুরের কাউলতিয়ার মধ্যে পড়েছে। এখানেই বিএনপির এখনকার মেয়র আবদুল মান্নানের গ্রামের বাড়ি। এই জায়গার এই উপস্থিতি যে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের উদ্দীপ্ত করবে তা বলাই বাহুল্য।

জাহাঙ্গীর শালনায় বললেন, ‘নির্বাচনে নৌকার পক্ষেÿজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। গাজীপুরের মানুষ উন্নয়নের পক্ষে ভোট দেবেন, এটা আমার বিশ্বাস।’

এই নির্বাচনে কয়েক দিনের প্রচারের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক বললেন, ‘যেখানে গেছি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের স্বতঃস্ফূর্ত মনোভাব দেখেছি। আগে গাজীপুর উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে। গাজীপুরের মানুষ আর অনুন্নয়নের পথে থাকতে চান না।’

জাহাঙ্গীর আলমের পোশাকের একটি বিশেষ ধরন আছে। সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা। পাঞ্জাবির হাতে এবং গলায় কালো রঙের বিট। আজও সেই একই পোশাক। তবে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কালো রঙের মুজিব কোট। আর নিজের প্রতীক সংবলিত সাদা কালো টুপি।

শালনার পর জাহাঙ্গীর আসেন বাসন এলাকায়। এখানে সভা জনসভায় রূপ নেয়। নিজেকে তিনি ‘এলাকার ছেলে’ বলে দাবি করেন। বলেন, ‘এখানকার মানুষের ভোট পাওয়া আমার অধিকার। তাদের ভালোবাসাতেই আজ আমি জাহাঙ্গীর হয়েছি। আপনারা নিশ্চয়ই আমার সম্মান রাখবেন।’

বাসনের পথসভায় জাহাঙ্গীর বলেন, বাসন ও গাছা এলাকার মাঝামাঝি স্থানে একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম বানানোর পরিকল্পনা তাঁর আছে। তিনি বলেন, পাঁচ বছর আগে গাজীপুরের মানুষ মিথ্যায় বিশ্বাস করে যাকে ভোট দিয়েছিল তিনি এলাকার কোনো উন্নয়ন করেননি। গাজীপুরের রাস্তায় এখন হাঁটা যায় না। রাস্তার পানি বাড়িতে ঢোকে। এর অবসান চাই।

জাহাঙ্গীর রোববার ভোটারদের স্মরণ করিয়ে দেন যে স্থানীয় সরকারে থাকলেই যে উন্নয়ন হবে, এমন নয়। কেন্দ্রে নিজেদের লোক থাকা চাই। এখন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ। তিনি যদি নির্বাচিত হন এসব দাবি-দাওয়া তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরতে পারবেন সহজেই।

এই পথসভায় বক্তব্য দেন খুলনার সিটি নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। তাঁর উপস্থিতি ছিল আচরণবিধির লঙ্ঘন। কেননা, নির্বাচন কমিশন গত ২২ জুন যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে তাতে শনিবার রাত ১২টার পর থেকে বহিরাগতদের প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়। এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারে থাকার জন্য কমিশনের নির্দেশ সম্পর্কে জানতে পারিনি। এটা ভুল ছিল। বিধি লঙ্ঘনের কোনো ইচ্ছে আমার নেই।’

বাসনের এ সভা শেষ করে জাহাঙ্গীর ছোটেন জয়দেবপুরে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে হাত মেলান তিনি। তারপর কোনাবাড়ীতে গিয়ে সভা করেন। রোববার এভাবেই একটি সভা শেষ করে আরেকটি সভা করেছেন, ছুটেছেন জনসংযোগে।

রোববার শেষ সংবাদ সম্মেলনে টঙ্গীর শ্রমিক নেতা বোমা হামলায় নিহত আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যার প্রসঙ্গ তোলেন জাহাঙ্গীর আলম। বিএনপির প্রার্থী হাসান সরকারের ভাই নুরুল ইসলাম সরকার এ হত্যা মামলার আসামি। নিম্ন আদালতে তাঁর ফাঁসির আদেশের বিষয়টিও জাহাঙ্গীর স্মরণ করিয়ে দেন। হাসান সরকারের বিভিন্ন অভিযোগ খণ্ডন করতে গিয়ে কিছুটা রূঢ় ভাবেই বললেন, উনি অযথা অভিযোগ করছেন। এর কোনো সত্যতা নেই। কিছুটা ক্ষিপ্ত জাহাঙ্গীর স্মরণ করিয়ে দিলেন ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের নির্বাচনের কথা। ওই নির্বাচনে হাসান সরকার কীভাবে জিতেছেন তাও বলছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলন শেষ করে জাহাঙ্গীর আলমের বহর ছোটে আবার গাজীপুর শহরে। শহরের মন্দিরের কাছে পথ সভা করেন। দলের জেলা কার্যালয়ের সামনে পথ সভা করেন। ছুটলেন টঙ্গীর দিকে।