কবে যে এ সড়ক দেখতে যাব, মনটা পড়ে থাকল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ফাইল ছবি

কিশোরগঞ্জের ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম মহাসড়কটিকে (অলওয়েদার সড়ক) মুজিব বর্ষে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে বর্ণনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভিডিওতে হাওর ও সড়কটির সৌন্দর্যে অভিভূতি হয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইশ! এ সড়কে (দেখতে) কবে যে যাব। আমার মনটা পড়ে থাকল। এ সড়ক দিয়ে গাড়িতে করে যাব। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে সড়ক দেখতে যাব।’ এ সময় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে এমন মহাসড়ক তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তাঁর (রাষ্ট্রপতির) অনুপ্রেরণা ও উদ্যোগের কারণে রাস্তাটি নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম মহাসড়ক উদ্বোধন শেষে সুবিধাভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন।

কিশোরগঞ্জ অঞ্চলে এ জাতীয় মহাসড়ক নির্মিত হতে পারে, এটা কল্পনার বাইরে ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রপতির উদ্যোগের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হওয়ায় এই মহাসড়কটি নির্মাণের কারণে এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ দূর হয়ে যাবে। এ অঞ্চলের মানুষ এখন নাসিরনগর বা ভৈরব হয়ে দ্রুত ঢাকা যেতে পারবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এই মহাসড়ক নির্মাণ করে একটি দুর্দান্ত যোগাযোগব্যবস্থা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।’

ভিডিওতে হাওরের বিস্ময় ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অলওয়েদার সড়কের ভিডিও চিত্র দেখে হাওর ও সড়কটির সৌন্দর্যে অভিভূতি হয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘ইশ! কবে যে যাব। এ সড়কে (দেখতে) কবে যে যাব। আমার মনটা পড়ে থাকল। এ সড়ক দিয়ে গাড়িতে করে যাব। রাষ্ট্রপতিও চান আমি যেন সরাসরি যাই। আমি যাব, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে এ সড়ক দেখতে যাব।’
দেশের কোনো অঞ্চলের মানুষ আর অনুন্নত থাকবে না উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো হবে। হাওর এলাকায় কৃষিভিত্তিক শিল্পকারখানাও গড়ে তুলতে চায় সরকার।

যেখানে যে পণ্য উৎপন্ন হয়, সেখানেই সে শিল্প গড়ে তোলার দিকে সরকার নজর দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু হাওরে একটা বিশাল মৎস্য ভান্ডার রয়েছে, তাই এই মৎস্য উত্তোলন, লালন-পালন ও মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বাজারজাতকরণের সুবিধা হয়, সেই লক্ষ্যেই আমরা এ অঞ্চলে শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী পরে উপকারভোগী, স্থানীয় প্রশাসন এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করেন।

কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা যেন সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বর্ষায় মাইলের পর মাইল বিস্তীর্ণ জলরাশি, বর্ষা শেষে জলকাদা আর শুকনো মৌসুমে ফসলি জমি। বর্ষায় নৌকা আর অন্য ঋতুতে পায়ে হাঁটা ছাড়া চলাচলের উপায় ছিল না হাওরবাসীর। নতুন সড়ক নির্মিত হওয়ায় হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রায় প্রতিদিন হাজারো পর্যটকের সমাগম হচ্ছে। স্থানীয়দের কথায়, দৃষ্টিনন্দন রাস্তাটির সুবাদে জীববৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ হাওরের সৌন্দর্য বেড়েছে।

অলওয়েদার সড়ক

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ইচ্ছা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে কিশোরগঞ্জের তিন উপজেলার মধ্যে সারা বছর চলাচলের জন্য নির্মিত হয়েছে হাওরের ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অলওয়েদার সড়ক। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ৮৭৪ দশমিক ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কটি নির্মাণ করেছে।

২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক প্রকল্পের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। হাওরের বুক চিরে চলে যাওয়া ২৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ অলওয়েদার সড়কে ৫৯০ দশমিক ৪৭ মিটার দীর্ঘ তিনটি পিসি গার্ডার, ১৯০ মিটার দীর্ঘ ৬২টি আরসিসি বক্স কালভার্ট, ২৬৯ দশমিক ৬৮ মিটার দীর্ঘ ১১টি আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬১ দশমিক ৮১ মিটার দীর্ঘ ভাতশালা সেতু, ১৭১ দশমিক ৯৬৪ মিটার ঢাকী সেতু ও ১৫৬ দশমিক ৭২ মিটার দীর্ঘ ছিলনী সেতু মহাসড়কের সৌন্দর্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্ষায় ভাঙন থেকে সড়ক রক্ষায় ৭ দশমিক ৬০ লাখ বর্গমিটার সিসি ব্লক দিয়ে স্লোপ প্রোটেকশনের কাজ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাগত বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম প্রকল্পের ওপর একটি সংক্ষিপ্ত প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, পিএমও সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মহাসড়কটির ওপর একটি ভিডিও চিত্র ও প্রদর্শিত হয়।