করোনা মোকাবিলায় সহযোগিতা করায় মন্ত্রণালয়-সচিবদের ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রীর

বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাকালে তাঁর সরকারের লক্ষ্য ছিল সাধারণ মানুষ যাতে কোনো রকম কষ্ট না পায়। তাদের খাদ্যের চাহিদা পূরণ, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা অর্থাৎ তাদের করোনা থেকেও যেমন মুক্তি দেওয়া, তেমনি আর্থিকভাবেও সহযোগিতা করা। যে কারণে প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকার ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজ সরকার ঘোষণা এবং বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকারের এ কাজে সহায়তা করায় সব মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সচিবদের তিনি ধন্যবাদ জানান।

সরকারপ্রধান আজ রোববার সকালে মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোর ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর এবং এপিএ ও শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান-২০২১–এর প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

করোনার দুর্যোগ মোকাবিলায় তিনি প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী থেকে জনপ্রতিনিধি সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সাহসী ভূমিকা রেখেছে এবং এত বাধার মধ্যেও অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যেও সবাই নিজ নিজ কাজ চালিয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী এই সমস্যাটি হলেও করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধকল্পে এবং জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করা তাঁর সরকারেরর অন্যতম অগ্রাধিকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের আর্থসামাজিক অবস্থা গতিশীল রেখে জনগণের জন্য কাজ করে যাওয়াটাই তাঁর সরকারেরর লক্ষ্য।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন সরকারে এসেছি বাংলাদেশের মানুষের জন্য সেবক হিসেবে কাজ করেছি। প্রধানমন্ত্রিত্ব আমার জন্য কোনো কিছু নয়, শুধু একটা সুযোগ মানুষের জন্য কাজ করার, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করার এবং যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।’

প্রধানমন্ত্রী করোনা প্রতিরোধকল্পে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর পুনরায় গুরুত্বারোপ করে পবিত্র ঈদুল আজহায় দেশের বাড়ি যেতে ইচ্ছুক যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। ইনশা আল্লাহ কেউ বাদ যাবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে সবাই যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। আমি জানি, আমাদের মানুষগুলো একটু গ্রামের উদ্দেশে ছুটতে পছন্দ করে, মাস্ক পরতে চায় না। কিন্তু প্রশাসনের যাঁরা যেখানে দায়িত্বরত আছেন, তাঁরা একটু চেষ্টা করবেন মানুষকে বোঝাতে এবং তারা যেন মাস্কটা অন্তত পরে আর যেন সাবধানে থাকে।’

পর্যায়ক্রমে সবাইকে ভ্যাকসিন দিতে সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো মানুষ যেন ভ্যাকসিন থেকে বাদ না পড়ে। সেভাবে কিন্তু আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। তিনি বলেন, ‘আমরা ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করেছি। ভ্যাকসিন আসছে। আমাদের দেশের সবাই যেন ভ্যাকসিন নিতে পারে, তার জন্য যত ভ্যাকসিন দরকার আমরা কিনে আনব এবং দেশের সবাইকে সেই ভ্যাকসিন দেব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি আমাদের দেশের মানুষ যেন কোনো রকম ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যক্তিপর্যায়ে শুদ্ধাচার পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব এন এম জিয়াউল আলম শ্রেষ্ঠ বিভাগ হিসেবে এপিএ সম্মাননা পাওয়ায় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সব সময় একটা লক্ষ্য ছিল সরকার জনগণের সেবা করবে। কাজেই যারা সেবা করবে, তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলা, তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা অর্থাৎ জনগণের সেবামূলক প্রশাসন গড়ে তোলা। তিনি বলেন, ‘সরকারে থেকে শুধু সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করব তা নয়, এখানে আমাদের একটা দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের প্রতি। জনগণের কল্যাণে, স্বার্থে এবং ভাগ্য পরিবর্তনে। সেই কথা চিন্তা করেই আমরা সব কর্মকাণ্ড-বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন বাজেট দিই এবং প্রশাসনে নানা কর্মকাণ্ড আমরা পরিচালনা করি, সেগুলো যেন গতিশীলতা পায়, সেগুলো যেন জনকল্যাণমুখী হয় এবং জনগণ যেন এর সুফল ভোগ করতে পারে—সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করি।’ তিনি বলেন, ‘২০১৪–১৫ সালে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিসহ যে কাজগুলো করব, সেটার একটা জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং কাজগুলো যাতে সঠিকভাবে হয়, সেটা নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এই বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি করেছি। যেখানে সব মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবেরা এবং আমাদের মন্ত্রণালয়য়ের পক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব স্বাক্ষর করবেন। এর পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের নানা দপ্তর এবং বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট সচিব এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব স্বাক্ষর করে কাজগুলো যথাযথভাবে হচ্ছে কি না, দেখবেন।’

ধারাবাহিকভাবে সরকারে থাকায় দেশের উন্নতি এমনটাই হয়, অভিমত ব্যক্ত করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘তাঁর সরকার পরিচালনায় আজকে করোনা নামের এমন একটা বাধা এসেছে যেটি সমগ্র বিশ্বেই সংকটের সৃষ্টি করেছে। তবে এই সংকটের সময় কীভাবে আমাদের চলতে হবে, সব সময় সেই কর্মপন্থা সুনির্দিষ্ট করেছি। কারণ, করোনার ফলে সব থেকে বেশি আঘাত এসেছে আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে।’

আমাদের দুঃখ হলো, বাংলাদেশকে আমরা যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম সেখানে করোনা নামক একটা অদৃশ্য শত্রুর বিরাট ধাক্কা লেগেছে, বলেন তিনি।

ওয়ান–ইলেভেনের প্রেক্ষাপটে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিনা বিচারে তাঁর সাবজেলে অন্তরীণ থাকতে বাধ্য হওয়ার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তখন এমন একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয় যে আওয়ামী লীগকে আর কখনো বোধ হয় ক্ষমতায় আসতে দেবে না। কিন্তু জনগণের ওপর আমার বিশ্বাস ছিল, তাই ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ সালে আমরা সরকার গঠন করি এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নে বিভিন্ন মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন শুরু করি।’