কুমিল্লার ঘটনায় সরকার দায়ী: মান্না

দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন মাহমুদুর রহমান মান্না
ছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার খবরে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনাকে একটি ‘রাজনৈতিক ব্যাপার’ বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না৷ এ ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে দায়ী করেন তিনি।

আজ শনিবার সকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না এসব কথা বলেন৷ দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে নাগরিক যুব ঐক্য, নাগরিক নারী ঐক্য ও নাগরিক ছাত্র ঐক্য যৌথভাবে ‘বাজারের শূন্য থলে ও রান্নার শূন্য হাঁড়ি নিয়ে মানুষের দুর্দশাচিত্রের প্রতীকী উপস্থাপন’ শীর্ষক এই কর্মসূচির আয়োজন করে৷

মান্না সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, যখন মানুষ বাঁচাতে পারে না, তখন তারা নতুন নতুন নাটক করে। মানুষ যদি দ্রব্যমূল্য নিয়ে পথে নামে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যদি ন্যায্য দাবিতে কথা বলেন! অতএব একটা না একটা কাণ্ড ঘটাতে থাকো, যাতে মানুষ ওই দিকেই বেশি ব্যস্ত থাকে৷ কখনো ক্যাসিনো, কখনো পাপিয়া, কখনো পরীমনি, কখনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, আবার কখনো গরিব মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য নানা রকম অজুহাত খোঁজে তারা।

সরকারের কড়া সমালোচনা করে মান্না বলেন, এরা মানুষকে মানুষ মনে করে না, নিজেরাও মানুষ নয়৷ মানুষের কান্না যেন গণমাধ্যম প্রচার না করতে পারে, তার জন্য তারা গণমাধ্যমের কণ্ঠ চেপে ধরেছে৷ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য যত রকম কাজ করা যায়, সব চেষ্টাই তারা করে৷

বাংলাদেশের ঘরে ঘরে আজ পাতিল খালি—এমন মন্তব্য করেন মাহমুদুর রহমান মান্না৷ তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনেরা উড়োজাহাজে চড়ে ঘুরে বেড়ান আর নিচে তাকালে লস অ্যাঞ্জেলেস দেখতে পান৷ তাঁরা আমাদের উন্নয়নের গল্প শোনান৷ অথচ দেশে ক্ষুধার আগুন জ্বলে, মানুষের ঘরে খাবার নেই৷ একটি জিনিসও নেই, যার দাম কম৷ এই যে খালি কলসি, ডেকচি ও পাতিল নিয়ে সবাই এখানে এসেছেন, এটি কোনো নাটক নয়৷ আমাদের হাজার ডলারের মাথাপিছু আয় দেখানো হয়, অথচ আমাদের পেটে ক্ষুধার আগুন৷

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য সরকার ও আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন মান্না। কর্মসূচিতে মান্না বলেন, জিনিসপত্রের দাম কমবে কীভাবে? দাম বাড়ায় তো সরকার৷ তারা সিন্ডিকেট বানিয়েছে৷ দাম কমানোর জন্য সিন্ডিকেট ডাকতে হয়৷ দেখা যায়, সেই সিন্ডিকেটের নেতা ও সদস্যরা আওয়ামী লীগের৷ বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আওয়ামী লীগের লোক৷ যতগুলো দোকানদার সমিতি আছে, সেগুলোতেও তাদের লোক৷ জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে চাঁদাবাজি, টোল, সিন্ডিকেট, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগিতা কিংবা অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের মতো যেসব কারণ চিহ্নিত হয়েছে, তার কোনো কিছুই বর্তমান সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এর কারণ, এই সরকারের নিজের ওপরই তার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই৷

কর্মসূচির স্লোগান ছিল—‘সবকিছুর দাম বাড়ে, কমে শুধু জীবনের; ক্ষুধার্তরা অন্ন চায়, গল্প চায় না উন্নয়নের’৷ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার কোনো পদক্ষেপ না নিলে এবং ঊর্ধ্বগতি চলতে থাকলে, আগামী শুক্রবার বিকেলে ফের শাহবাগে জমায়েতের ঘোষণা দেন মান্না৷ এতে অন্যদের মধ্যে নাগরিক ঐক্যের সদস্য আনিসুর রহমান, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম, নাগরিক নারী ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌসী আক্তার প্রমুখ বক্তব্য দেন৷