কেন্দ্রে এজেন্ট হাজির করা নিয়েই সন্দিহান বিএনপি

৬০টি পৌরসভায় আজ শনিবার যে ভোট, অধিকাংশ জায়গায়ই নির্বাচনী প্রচারে বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা বাধা, হামলা এবং কোথাও কোথাও খোদ প্রার্থীও মারধরের শিকার হন। শেষ মুহূর্তে কর্মী-সমর্থকদের মাঠছাড়া করতে হুমকি-ধমকির অভিযোগ করেছেন প্রার্থীরা। এ পরিস্থিতিতে আজ ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট উপস্থিত করা নিয়েই সন্দিহান বিএনপির অধিকাংশ প্রার্থী।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে নাটোরের গোপালপুরের বাহাদিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ক​র্মীরা বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী আবদুল্লাহ আল মামুনের ছেলে রাসেল হোসেনসহ দুজনকে মারধর করেন। এ সময় তাঁদের মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়। পাশের নলডাঙ্গা পৌরসভায়ও একই পরিস্থিতির কথা জানান বিএনপির প্রার্থী আব্বাছ আলী। তিনি অভিযোগ করেন, প্রতিদ্বন্দ্বী সরকারি দলের প্রার্থীর লোকজন তাঁকে প্রচারে বাধা দিয়েছেন, তাঁর নির্বাচনী পোস্টার ছিঁড়েছেন, এখন কর্মীদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।

গোপালপুর পৌরসভায় বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘নৌকার প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের হুমকির মুখে আমি সব কেন্দ্রের সব বুথে এজেন্ট দিতে পারছি না। বিশেষ করে আজ (শুক্রবার) আমার ছেলেকে মারপিট করার ঘটনা জানাজানির পর এজেন্টরা আরও আতঙ্কে পড়েছে।’

তবে ব্যতিক্রম পরিবেশ নোয়াখালীর বসুরহাটে। সেখানে কেবল বিএনপি নয়, জামায়াতের প্রার্থীও বিনা বাধায় নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন। তাঁরা সব কেন্দ্রেই নির্বাচনী এজেন্টও দিয়েছেন। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই আবদুল কাদের মির্জা। সুনামগঞ্জ পৌরসভায়ও বিএনপির প্রার্থী নির্বিঘ্নে প্রচার চালাতে পেরেছেন।

প্রায় একই রকম শান্তিপূর্ণ পরিবেশের কথা বলেছেন নাগেশ্বরী, গাংনী, গাইবান্ধা, সুন্দরগঞ্জ, ভবানীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, শৈলকুপা, ফুলবাড়ী ও বিরামপুর পৌরসভায় বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থীরা। অন্যদিকে বাধাবিঘ্নের ঘটনা না থাকলেও প্রচারে অনেকটা ঢিলেঢালা ছিলেন নজিরপুর, সারিয়াকান্দি ও মাগুরায় ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা।

এই দফার ৬০টি পৌরসভার ভোটে কেবল নারায়ণগঞ্জের তারাব পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী নেই। সেখানে কারসাজি করে মনোনয়নপত্র বাতিল করার অভিযোগ করেছেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী নাসিরউদ্দিন। বাকি ৫৯টি পৌরসভার তিন-চতুর্থাংশ পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা প্রচারে বাধা, হামলা, পোস্টার ছেঁড়া এবং মারধরের অভিযোগ করেছেন। নির্বাচনী সমাবেশে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় আহত হয়েছেন ধনবাড়ী পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী এস এম এ ছোবাহান। রাজশাহীর আড়ানী পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী তোজাম্মেল হকের দুই ভাতিজা ও গাড়িচালককে মারধর করা হয়। তিনি থানায় অভিযোগ করেও ফল পাননি।

অনেক পৌরসভায় নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে মাঠছাড়া করার অভিযোগও করেছেন প্রার্থীরা। ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী আবদুস শুকুর শেখ প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা নিজেরা নিজেদের অফিসে পরিকল্পিতভাবে আগুন দিয়ে বিএনপির ৪৩ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। তিনি কেন্দ্র দখলের আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

শ্রীপুর পৌরসভায় নিজের নির্বাচনী কার্যালয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হন বিএনপির প্রার্থী কাজী খান। পরে এ ঘটনায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়।

গত বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইল শহরের পশ্চিম আকুরটাকুর পাড়া স্টেডিয়াম ব্রিজ এলাকায় বিএনপির প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। টাঙ্গাইল পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী মাহমুদুল হক অভিযোগ করেন, ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হুমায়ুন রশীদ আকন্দের নেতৃত্বে সরকারি দলের লোকজন তাঁর নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর করেন।

একাধিক পৌরসভায় নির্বাচনের আগমুহূর্তে বিএনপির প্রার্থীর সমর্থক এবং দলের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ হানা দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে বলেও অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা। গতকাল সকালে কুলিয়ারচর শহরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির প্রার্থী নুরুল মিল্লাত অভিযোগ করেন, ভীতি ছড়াতে কয়েক দিন ধরে নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ হানা দিচ্ছে। পৌর বিএনপির সাবেক সদস্য খোকন মিয়ার বাড়ি গিয়ে পুলিশ তাঁকে চড়-থাপ্পড় মারে। অন্তত আটজন নেতার বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। সেখানে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই।

অবশ্য কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম সুলতান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারও বাড়িতে পুলিশি হানার কোনো ঘটনা ঘটেনি। এসব অভিযোগ বিএনপির অভ্যাসগত প্রচার।’

চান্দিনা পৌরসভায় মেয়র পদপ্রার্থী পাঁচজন। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন আওয়ামী লীগের শওকত হোসেন ভূঁইয়া, বিএনপির আলমগীর খান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন। বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন।

জাতীয় সংসদের মতো স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনেও ভোট লুটের অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি গতকাল ঠাকুরগাঁওয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যতগুলো পৌরসভা নির্বাচন দেখলাম, বেশির ভাগ নির্বাচনে সরকারি দল আগের রাতেই ভোট ডাকাতি করে ফলাফল তাদের পক্ষে নিয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি ইজ আ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি তো অস্ত্রের যুদ্ধ করতে পারে না, ভোটের যুদ্ধ করতে পারে।’

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা )