ক্ষমতায় টিকে থাকতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: ফখরুল

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে ঢাকা মহানগর বিএনপি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ বিক্ষোভ সমাবেশ করেছবি: দীপু মালাকার

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার জোর করে রাষ্ট্রক্ষমতা ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বেআইনিভাবে আগের রাতে ভোট করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাঁর অভিযোগ, এই ‘দখলদার সরকার’ শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো আইন তৈরি করছে। যা দিয়ে অন্যায়-অত্যাচার-নিপীড়ন করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে৷

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন৷ সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে জঘন্য মিথ্যাচার ও তাঁর খেতাব বাতিলের চক্রান্ত, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, লেখক মুশতাক আহমেদ ও সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কিরের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি যৌথভাবে এই সমাবেশের আয়োজন করে৷

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক সরকার নয়, জনগণের সরকার নয়৷ তারা জোর করে রাষ্ট্রক্ষমতা ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বেআইনিভাবে আগের রাতে ভোট করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে৷ দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামে একটি ভয়াবহ আইন তৈরি করা হয়েছে৷ এই আইন দিয়ে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের বাক্‌স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে, লেখার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে৷ এই সরকার শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আজ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো আইন তৈরি করেছে৷ তারা সবচেয়ে বড় যে অস্ত্র ব্যবহার করেছে, তা হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রাখা; তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় বেআইনি সাজা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা৷
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে৷ সাত শর ওপর মানুষ, যাঁরা রাজনীতি করেন না, তাঁদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আটকে রাখা হয়েছে৷ কার্টুনিস্ট কিশোরের ওপর নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে৷ মুশতাক আহমেদ কারাগারে নিহত হয়েছেন৷ আমি শাবাশ ও ধন্যবাদ দিতে চাই কার্টুনিস্ট কিশোরকে যে আজ তিনি নিজের ওপর হওয়া অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন৷’

সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে, এই আইনে গ্রেপ্তার সব মানুষকে মুক্তি দিতে হবে৷ মিথ্যা মামলায় আটক থাকা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে৷ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে হওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে৷ ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে করা গায়েবি মামলা প্রত্যাহার করতে হবে৷ বর্তমান নির্বাচন কমিশন, যারা সব নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে, তাকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে৷

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে ঢাকা মহানগর বিএনপি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তৃতা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ছবি: প্রথম আলো

সমাবেশ চলার সময় প্রেসক্লাবের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি ছিল৷ প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় এ সময় যান চলাচলও বন্ধ ছিল৷ সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা এত ভয় পান কেন, অনুমতি দেওয়ার পরও কেন চতুর্দিকে বন্ধ করে দিয়ে আমাদের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের আসতে দেন না? কারণ, আপনারা জানেন, জনগণ জেগে উঠলে আপনাদের ক্ষমতায় থাকা সম্ভব হবে না৷’

সমাবেশে অংশ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল এবং নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এই সমাবেশ৷ এই সমাবেশ যখন বড় হচ্ছে, তখন তোপখানা রোড-পল্টন মোড়, মৎস্য ভবন, দোয়েল চত্বর ও সচিবালয়ের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, বাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ এর কারণ বাসে উঠে নেতা-কর্মীরা এখানে নামবেন৷
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবীব-উন-নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নাজিমুদ্দিন আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন৷ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েক শ নেতা-কর্মী এতে অংশ নেন৷ সমাবেশ শেষে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দিকে যান নেতা-কর্মীরা৷