খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে সরকারকে বাধ্য করব: ফখরুল

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে যোগ দেন নেতা-কর্মীরা। নয়াপল্টন, ঢাকা, ০৮ ফেব্রুয়ারি। ছবি: সাজিদ হোসেন
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে যোগ দেন নেতা-কর্মীরা। নয়াপল্টন, ঢাকা, ০৮ ফেব্রুয়ারি। ছবি: সাজিদ হোসেন

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আগামী শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। আজ শনিবার ঢাকার সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচির ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘অনেক কথা বলেছি, অনেক দাবি জানিয়েছি, নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। এখন আমাদের একটাই কথা, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবই। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে সরকারকে বাধ্য করব।’

আজ নয়াপল্টনে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বন্দিত্বের দুই বছর পূর্তির দিনে তাঁর মুক্তির দাবিতে বিএনপি এ সমাবেশ করে। অনুমতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় থাকায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাদের সমাবেশের আয়োজন করতে হয়। শেষ মুহূর্তে হাজার হাজার নেতা-কর্মী খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে সমাবেশে অংশ নেন।

সমাবেশে ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে দলের দুই মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন উপস্থিত ছিলেন।


সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘শতকরা ১৫ ভাগ ভোট পেয়ে কোনো দিন জনপ্রতিনিধি হওয়া যায় না, জনগণের মেয়র হওয়া যায় না। সিটি নির্বাচনে আমরা প্রমাণ করেছি, এ দেশের মানুষ এখন ঐক্যবদ্ধ। যতই যন্ত্র দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে নিতে চাও, এ দেশে মানুষ তোমাদের সেখানে পৌঁছাতে দেবে না।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে, মিথ্যা মামলা সাজিয়ে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে আটক বরে রাখা হয়েছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। এত অসুস্থ যে কারও সাহায্য ছাড়া হাটতে পারেন না, ঠিকমতো খেতে পারেন না। তাঁর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই, আর্থ্রাইটিস বেড়ে গেছে। দুটি বছর বিনা কারণে তাঁকে আটক করে রাখা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, জনগণের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ দানবকে পরাজিত করতে হবে এবং মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। সরকারকে বাধ্য করব বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে জনগণের সব অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। এ হচ্ছে এখন আমাদের একমাত্র কাজ।’

আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তারা শপথ নিয়েছিল, এ দেশকে দুর্নীতিমুক্ত এবং স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গড়ে তুলবে। তা না করে সব বিরোধী কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিয়েছে, একদলীয় বাকশাল করেছে। আজকেও তারা ভিন্নপথে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে।

বিএনপির মহাসচিব দেশের সার্বিক পরিস্থিতির উল্লেখ করে বলেন, এই সরকার বাংলাদেশকে অকার্যকর ও ব্যর্থ করে দিয়েছে, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তছনছ করে দিয়েছে। অর্থনীতিকে তছনছ করে নিচের দিকে নামিয়ে দিয়েছে। বিচার বিভাগ বলে কিছু আছে কি না, সন্দেহ।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গার্মেন্টস সেক্টর অত্যন্ত খারাপের দিকে যাচ্ছে, রপ্তানি আয় নিচের দিকে, রাজস্ব আয় নেই। কিন্তু দুর্নীতি বন্ধ নেই। দুর্নীতির জন্য মেগা প্রজেক্টগুলো সমানে চলছে। দুর্নীতির জন্য গ্যাসের, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এ সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে এই রাষ্ট্রকে সমৃদ্ধি পথে নিয়ে যেতে। কারণ তারা নিজেরাই দুর্নীতিগ্রস্ত। তার প্রমাণ তারা নিজেরাই দিয়েছে। দুর্নীতির জন্য যুবলীগের সভাপতিকে বাদ দিতে হয়েছে, যুবলীগের ঢাকার নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার করতে হয়েছে, দুর্নীতির জন্য ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দুজনকেই বাদ দিতে হয়েছে। আর যদি নিজেদের দিকে তাকায়, তাহলে শেষ পর্যন্ত নিজেদের বিদায় নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকারের পতন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন একসঙ্গে করতে হবে। কারণ এ সরকারের পতন ছাড়া মানুষের মুক্তি হবে না, খালেদা জিয়ার মুক্তিও হবে না। আর খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে না।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, এ সরকার জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে।
খালেদা জিয়ার জামিনে সরকারের হস্তক্ষেপের কথা উল্লেখ করে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমাদের আইনজীবীরা যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন জামিনের জন্য। কিন্তু সরকারের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে জামিন হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘যেদিন জামিনের শুনানি হবে, তার আগের দিন যদি প্রধানমন্ত্রী বলেন খালেদা জিয়া রাজার হালে আছেন। এই কথা শোনার পর কেউ কি জামিন দেওয়ার সাহস দেখাতে পারেন?’ তিনি বলেন, এ অবস্থা চিরদিনের জন্য নয়। খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন, আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁকে মুক্ত করতে হবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারে বিএনপির দুই প্রার্থীর মিছিলে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন। কিন্তু তাঁরা ভোট দিতে যাননি। কেন যাননি? ঢাকার জনগণ এই সরকার এবং এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিশ্বাস করেন না। এই নির্বাচন ব্যবস্থাকে তাঁরা প্রত্যাখ্যান করেছেন।’

সমাবেশ আরও বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, বরকতউল্লাহ বুলু, ​নিতাই রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা মিজানুর রহমান মিনু, আইনজীবী ফজলুর রহমান, মেয়াজ্জেম হোসেন, খায়রুল কবির, শহীদউদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।