খালেদা জিয়ার রক্তক্ষরণ পুরোপুরি বন্ধ হয়নি

খালেদা জিয়া

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শরীর থেকে রক্তক্ষরণ এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার বড় ধরনের রক্তক্ষরণ হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের একজন গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, থেমে থেমে এই রক্তক্ষরণ তাঁর জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পর্যন্ত তাঁর চারবার রক্তক্ষরণ হয়।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সকালে ঢাকায় এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বলেন, খালেদা জিয়ার শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এই রক্তক্ষরণ যদি বেশি দিন চলে, তা হলে তিনি বাঁচবেন না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিদেশে না পাঠিয়ে বেগম জিয়াকে তিলে তিলে সচেতনভাবে হত্যা করা হচ্ছে।

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে গত ২৫ নভেম্বর থেকে বিএনপি ও দলটির অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনগুলোর ৮ দিনের কর্মসূচি চলছে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল জাতীয়তাবাদী কৃষক দল ঢাকাসহ সারা দেশে মানববন্ধন করে। ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী খালেদা জিয়ার ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ডসহ অংশ নেন। আজ শনিবার ছাত্রদলের সমাবেশের মধ্য দিয়ে আট দিনের কর্মসূচি শেষ হবে।

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস হয়েছে। এটা মারাত্মক রোগ। এর চিকিৎসা এদেশে সেভাবে নেই। আমেরিকা, ইংল্যান্ড এবং জার্মানিতে এই রোগের চিকিৎসা ভালো হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তাঁকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হোক। আমাদের দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সংগঠন, বুদ্ধিজীবী সবাই বলেছেন দেশনেত্রীকে বাইরে চিকিৎসা করার সুযোগ দিন। এটা ন্যূনতম একটা দাবি, কোনো দয়ামায়া নয়। এটা একজন নাগরিকের সাধারণ অধিকার।’

‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়া অবিচ্ছেদ্য’ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার মতো নেত্রীকে সরকার যদি বিদেশে চিকিৎসা নিতে যেতে না দেয়, তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া গণতন্ত্রকে মুক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। বাক্‌স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন। প্রথম ক্ষমতায় এসেই তিনি কৃষকদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছিলেন। বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল করেছিলেন। তারই ওপর এখনো বাংলাদেশ চলছে।

নেতা-কর্মীদের জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘একবার ভাবুন, আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আট হাজার মাইল দূরে আছেন। তাঁর মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। আজ আমাদের জেগে উঠতে হবে। দুঃশাসনকে পরাজিত করে দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে।’

খালেদা জিয়া
ফাইল ছবি

কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফিরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলামের পরিচালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারপারসন শামসুজ্জামান, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন, কৃষক দলের গৌতম চক্রবর্তী, মোশাররফ হোসেন, গোলাম হাফিজ প্রমুখ।

গত ১৩ নভেম্বর থেকে খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন। চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর চিকিৎসার জন্য গঠিত হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড অবিলম্বে তাঁকে বিদেশে উন্নত সেন্টারে নিয়ে চিকিৎসার সুপারিশ করেছে।