খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে বিতর্ক, ক্ষোভ

প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পৃথক দুটি তালিকা প্রস্তাব করেছিলেন। পরে তাদের তালিকার সমন্বয় করা হয়।

কেন্দ্রে জমা দেওয়া খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্বজনপ্রীতি, অপরিচিত, প্রাথমিক সদস্যপদ নেই, আগে নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে নির্বাচন করেছেন—এমন ব্যক্তিদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার নিজেদের মধ্যে বিরোধের কারণে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকও পাল্টাপাল্টি কমিটি প্রস্তাব করেছিলেন।

নেতা-কর্মীরা বলছেন, প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ ও সাধারণ সম্পাদক সুজিত কুমার অধিকারীর বিরোধ প্রকাশ পাচ্ছে। জেলার শীর্ষ দুই নেতাই পাল্টাপাল্টি কমিটি নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিলেন। সর্বশেষ ঐকমত্যের ভিত্তিতে জমা দেওয়া প্রস্তাবিত কমিটি নিয়েও দুই নেতার কেউই খুশি হতে পারেননি। যদিও কমিটিতে সভাপতির মতই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দেওয়ার কথা ছিল। দুই নেতা পৃথক কমিটির তালিকা নিয়ে গেলে খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হকের মধ্যস্থতায় একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া তৈরি করা হয়।

দলের বিভিন্ন এজেন্সি আছে, তারা অনুসন্ধান করে যদি কারও সম্পর্কে অভিযোগ পায়, তাহলে তাঁদের বাদ দেওয়া হবে।
শেখ হারুনুর রশীদ, সভাপতি, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ

সুজিত অধিকারী বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমিটি করার ব্যাপারে সভাপতির কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছিল না। দুই দফায় তাঁর সঙ্গে আলোচনা করলেও তিনি ইতিবাচক সাড়া দেননি। পরে তিনিই একটি কমিটি তৈরি করে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। ঢাকায় গিয়ে দেখি, সভাপতিও আরেকটি কমিটি নিয়ে হাজির। বহিরাগত ব্যক্তিদের অনুপ্রবেশের বিষয়ে এই নেতা বলেন, কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা ছিল, যাঁরা নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করেছেন, তাঁদের কমিটিতে রাখা যাবে না। কিন্তু প্রস্তাবিত কমিটিতে এমন অনেকের নামই আছে। তা ছাড়া প্রাথমিক সদস্য নন, এমন কয়েকজনের নামও কমিটিতে আছে।’

এ বিষয়ে শেখ হারুনুর রশীদ বলেন, দলের বিভিন্ন এজেন্সি আছে, তারা অনুসন্ধান করে যদি কারও সম্পর্কে অভিযোগ পায়, তাহলে তাঁদের বাদ দেওয়া হবে। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তফা রশিদীর অনুসারীদেরও কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আর খুলনার সংরক্ষিত আসনের সাংসদ গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার স্বজনপ্রীতি করে কমিটিতে অপরিচিত পাঁচজনের নাম দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে শেখ হারুনুর রশীদ বলেন, তিনি (গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার) একজন খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। দল চালাতে মুসলমান, হিন্দু, খ্রিষ্টান সবাইকে লাগবে।

যাঁদের নিয়ে বেশি সমালোচনা

দলীয় বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তাবিত কমিটিতে বটিয়াঘাটা উপজেলার বাসিন্দা ও সাবেক সচিব প্রশান্ত কুমার রায়কে সহসভাপতি করা হয়েছে। তিনি কখনোই খুলনা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। পাইকগাছা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী শেখ মনিরুল ইসলাম এবং ডুমুরিয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী এজাজ আহমেদকে সহসভাপতি ও উপপ্রচার সম্পাদক করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত কমিটিতে দপ্তর সম্পাদক হিসেবে মৃণাল কান্তি বিশ্বাস, কোষাধ্যক্ষ এস এম জাহিদুর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক গাজী মামুনুর রশীদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক শ্রীমন্ত অধিকারী রাহুল, নির্বাহী সদস্য রর্বাট নিক্সন ঘোষ, অতসী সরকার, দান কুমারী, মোজাফফর মোল্যা, শেখ রাসেল এর আগে কোনো পদে ছিলেন না। পদ পেতে যাওয়া নেতাদেরই অন্তত পাঁচজনের দাবি, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ও মনোয়ার হোসেন জামায়াত পরিবারের সন্তান।

বাদ পড়ছেন যাঁরা

প্রস্তাবিত কমিটিতে সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শেখ বাহারুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোকলেসুর রহমান, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামানকে রাখা হয়নি। বাদ পড়েছেন খুলনা-১ আসনের সাবেক সাংসদ ননী গোপাল মণ্ডলও। এ বিষয়ে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুজিত কুমার অধিকারী বলেন, ‘কয়েকজন কোনোভাবে বাদ পড়ে গেছেন। আপনারা এবার বুঝে নিন কীভাবে কী হয়েছে।’