গুমের ঘটনা জাতিসংঘকে জানিয়েছি, তারা পদক্ষেপ নেয়নি: ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বাংলাদেশে গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের আন্তর্জাতিক বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছে বিএনপি। তবে দলের মহাসচিব বলেছেন, এর আগে জাতিসংঘের কাছে এসব বিষয়ে জানানো হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে আজ রোববার এক ভার্চ্যুয়াল ওয়েবিনারে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং মারা গেছেন আড়াই হাজারের বেশি। এ ছাড়া গুম হয়েছেন ছয় শতাধিক। তবে আসল সংখ্যা এর বেশি বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আমরা এসব ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। এ জন্য তাদের বাংলাদেশে ‘গুম’ ও বিচারবহির্ভূত হত্যা ঘটনাবলির তদন্তে একটি জুডিশিয়াল ইনকোয়ারি কমিশন গঠন করা উচিত।’

২০০৯ সাল থেকে ‘গুম’ হওয়ার ঘটনাগুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে সংবাদ ব্রিফিং এবং এর খসড়া জাতিসংঘের কাছে প্রেরণের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই ঘটনাগুলো সম্পর্কে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সংবাদ সম্মেলন করে ব্রিফ করেছি। আমাদের দলীয়প্রধানের খসড়া জাতিসংঘকে পাঠিয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, কোনো অ্যাকশন এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি।’
বাংলাদেশ এখন গণতন্ত্রহীন, ফ্যাসিবাদী একনায়কতন্ত্র একটা দেশে পরিণত হয়েছে এবং এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে জানিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

গণমাধ্যম সব ঘটনা নিয়ে সোচ্চার হয় না উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত না পত্রপত্রিকাগুলো সামনে নিয়ে আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে না। দুর্ভাগ্য আমাদের যে মেজর সিনহাকে যখন নির্মমভাবে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে অন দ্য স্পট গুলি করা হলো, এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং করা হলো, তখনো অনেকেই কথা বলেছেন। তার আগে যে রাজনৈতিক কারণে শুধু নয়, সম্পূর্ণ অন্য কোনো কারণ নেই, তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, কেউ কখনো কোনো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নেই, তাদের তু্লে নিয়ে গিয়ে যখন খুন করে ফেলা হয়েছে অথবা হত্যা করা হয়েছে; তখন কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের মিডিয়া সেভাবে সোচ্চার হয়নি।’

ভার্চ্যুয়াল ওয়েবিনারে বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নিপীড়ন-নির্যাতন’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ মাহবুবউল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহিদুজ্জামান এবং গুম হওয়া কয়েকজনের পরিবারের সদস্যরা। এ ছাড়া এতে অংশ নেন ঢাকায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা।