চট্টগ্রামে অস্থিরতা বিএনপি-যুবদলে

পাল্টাপাল্টি মামলায় নগর বিএনপি ও যুবদলের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবন চত্বরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে বিএনপির নেতা–কর্মীদের উপস্থিতি ঘটলে যুবদলে জায়গা না পাওয়া এক নেতার অনুসারীদের হামলায় একজন রক্তাক্ত হন। 

দলীয় সূত্র জানায়, ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে যোগ দিতে গিয়ে পিটুনির শিকার হন নগর যুবদলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জিল্লুর রহমান। 

এই ঘটনায় তিনি শামসুল হকসহ পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন। এই মামলায় তৈয়ব আলী নামে শামসুল হকের এক অনুসারী গ্রেপ্তার হন সোমবার রাতে। শামসুল হক যুবদলে জায়গা পাননি। তবে স্থানীয় রাজনীতিতে একটি বলয় তৈরি করেছেন। যুবদলের কাউকে পেলে তাঁর কর্মীরা হামলা চালান বলে অভিযোগ রয়েছে। 

হামলার শিকার যুবদলের প্রচার সম্পাদক জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাসিমন ভবন চত্বরে যা ঘটেছে তা সন্ত্রাস ছাড়া আর কিছু নয়। তাই আমি আইনি পথে গিয়েছি।’ 

গত সোমবার রাতে শামসুল হকের অনুসারী হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম নামে আরেক ব্যক্তি নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদসহ আরও ছয়জনের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন বলে জানান কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন। যদিও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে নাসিমন ভবন চত্বরে এই দুই নেতা ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন না। এ কারণে নেতা–কর্মীদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাগের মাথায় একটি ঘটনা ঘটে গেছে। এটা অনাকাঙ্খিত। পাল্টাপাল্টি মামলা সংগঠনের জন্যও ক্ষতিকর। আমি আমাদের সভাপতি শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে কথা বলেছি, যাতে উভয় পক্ষ মামলা তুলে নেয়।’ 

আবুল হাশেম আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে সবার সঙ্গে বসতে হবে। ইতিমধ্যে উভয় পক্ষের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি।’ 

স্থানীয় যুবদলের রাজনীতিতে বর্তমান সভাপতি মোশাররফ হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ বিপরীত ধারায় ছিলেন। 

গত বছরের ১ জুন নগর যুবদলের কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর দুজনই একমঞ্চে চলে আসেন। তাঁরা পরস্পরের সম্মতির ভিত্তিতে ওয়ার্ড যুবদলের কমিটির সম্মেলন করছেন। কিন্তু শামসুল হক যুবদলের নেতৃত্বে আসতে ব্যর্থ হন। ফলে তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে একের পর এক অঘটন ঘটানোর অভিযোগ ওঠে। সর্বশেষ ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা ঘটে। পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। 

নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘যুবদলের কর্মসূচি ১ সেপ্টেম্বর সকালে অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে বিএনপির কর্মসূচিতে আমরা উপস্থিত ছিলাম না। কিন্তু নাসিমন ভবন চত্বরে যা ঘটেছে তা দুঃখজনক।’ 

নাসিমন ভবনের সন্ত্রাসী ঘটনা সংগঠনে অস্বস্তি আছে বলে বিএনপি ও যুবদলের অনেক নেতা–কর্মী মনে করেন। তাঁদের বক্তব্য, বিএনপি দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে। সরকারের বিরুদ্ধে দলীয় নেতা–কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা। কিন্তু সন্ত্রাসী ঘটনা দল বা সংগঠনকে আরও দুর্বল করবে। পাল্টাপাল্টি মামলার সুযোগ সরকার নেবে বলে তাঁরা মনে করছেন। 

নগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ বলেন, ‘বড় সংগঠনে অসাংগঠনিক কর্মী–সমর্থক থাকা স্বাভাবিক। তাঁদের নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব অভিভাবক সংগঠনের নেতাদের। ১ সেপ্টেম্বরের উচ্ছৃঙ্খল ঘটনার ব্যাপারে মুরুব্বি সংগঠনের নেতারা কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন বলে আমরা আশাবাদী।’ 

ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন শামসুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই পক্ষের মধ্যে কিছু একটা ঘটেছে। আমি পরে শুনেছি। আমাদের মুরুব্বিরা সব ঠিক করে দেবেন।’