ছবি দেখে সৌদি সরকার ভিসা বাতিল করে দিতে পারে

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন
ফাইল ছবি

ঢাকায় বিক্ষোভ দেখানো সৌদি আরব প্রবাসীদের ধৈর্য ধরতে বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি সাবধান করে দিয়েছেন, সৌদি সরকার এখানকার বিক্ষোভের বিষয়গুলো দেখছে। এসব দেখে তারা ভিসা বা কাজ বাতিল করে দিতে পারে।

সৌদি আরবের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আজ বুধবার দুপুরে তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের সামনে এ কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

আব্দুল মোমেন বলেন, ‘প্রবাসীদের বলব, ধৈর্য ধরেন। সৌদি সরকার আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে অত্যন্ত কড়া। আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কাজ বা জটলা দেখানো, এটি বরদাশত করে না। তারা এখানকার বিষয়গুলো অবলোকন করছে। টেলিভিশন মিডিয়াতে যা দেখানো হচ্ছে, সেটি স্টাডি করছে এবং আমাদের ভয় হলো তারা যদি দেখে আন্দোলনকারীরা জটলা করছে, তবে হয়তো তাদের ভিসা বাতিল করে দেবে কিংবা কাজ বাতিল করে দেবে। এ বিষয়ে তারা খুব শক্ত। তারা যদি বাতিল করে, তবে আমাদের কিছু করার নাই।

প্রবাসীরাই তখন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আগেও এ ধরনের ঘটনা হয়েছে।’

আকামা ও ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের কাছে অভিবাসীরা এসেছিলেন। আজ প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদের সভাপতিত্বে আমরা একটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করেছিলাম। সেখানেও সৌদি আরবে লোক পাঠানো প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল। অভিবাসীদের দাবি ছিল, তারা যদি এখন না যেতে পারে তবে তাদের ভিসা বাতিল হয়ে যাবে। আমরা মঙ্গলবার সৌদি সরকারের কাছে অনুরোধ করেছি তিন মাস তাদের ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য। এখনো কোনো জবাব পাইনি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সৌদি এয়ারলাইনস যতগুলো অনুমতি চেয়েছে, সব অনুমতি দিয়েছি যাতে করে সহজে তারা বাংলাদেশের লোকজনকে নিয়ে যেতে পারে। বিমান তৈরি আছে এবং যে মুহূর্তে ল্যান্ডিং রাইট পাবে, তখনই ফ্লাইট চলাচল শুরু করবে।’

সৌদি আরবে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবের তৎকালীন বাদশা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এবং রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখে ৮০ ও ৯০-এর দশকে অনেক রোহিঙ্গা নিয়ে গেছে। অনেকে সরাসরি গেছে এবং কেউ কেউ হয়তো বাংলাদেশ হয়ে গেছে। এটি আমরা পুরোপুরি জানি না। সৌদি আরব বলছে রোহিঙ্গার সংখ্যা ৫৪ হাজার এবং তাদের ওখানে পরিবার আছে। তাদের ছেলেমেয়ে কখনোই বাংলাদেশে আসেনি। তারা সৌদি সংস্কৃতি জানে এবং আরবি ভাষায় কথা বলে। তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে জানে না।’

আব্দুল মোমেন বলেন, ‘সৌদি সরকার প্রথমে বলেছিল ৪৬২ জন এবং তারা জেলে আছে। তারা এদের নিয়ে যাওয়ার জন্য বললে আমরা নাগরিকত্ব যাচাইবাছাই সাপেক্ষে নিয়ে আসতে রাজি হই। পরে আমরা দেখি তাদের বেশির ভাগেরই কোনো কাগজ নেই। তারা বাংলাদেশের নাগরিক হলে আমরা নিয়ে আসব। এরপর তারা বলল ৫৪ হাজার রোহিঙ্গা সেখানে আছে। তারা বলছে এদের কোনো পাসপোর্ট নেই এবং কোনো কাগজ নেই। তারা বলছে এদের তোমরা পাসপোর্ট ইস্যু করো। আমরা বলেছি, যারা আগে পাসপোর্ট পেয়েছে এবং তাদের যদি পাসপোর্টের কাগজ থাকে, তবে আমরা নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করব। কিন্তু এরা যদি আমাদের লোক না হয়, তবে আমরা নেব না।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটি কমিটি করেছি পররাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে এবং তাঁরা বিষয়টি দেখছেন। কিন্তু সৌদি আরবের দিক থেকে কিছুটা তাগাদা আছে। তারা বলছে তারা নাগরিকত্বহীন কোনো ব্যক্তিকে রাখবে না। তারা বলছে তোমরা এটি তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করো। আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রায়ই তারা এ প্রশ্নটা তোলে। তারা বলছে, তোমরা তাদের পাসপোর্ট ইস্যু করো।’

মন্ত্রী বলেন, ‘জুনিয়র লেভেলে কেউ কেউ বলছে তোমরা যদি এদের না নাও বা পাসপোর্ট ইস্যু না করো, তবে তোমাদের দেশ থেকে এত লোক আনছি, এটা আমরা বন্ধ করে দেব। এবং তোমাদের যে ২২ লাখ লোক আছে, তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক অবস্থান নেব। এই কথাগুলো জুনিয়র লেভেল থেকে আমাদের বলা হয়েছে।’

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশটিতে কাজ করতেন এমন অন্তত ৪০ থেকে ৫০ হাজার অভিবাসী বাংলাদেশে এসে আটকা পড়েছেন।

গত মঙ্গলবার আকামা ও ভিসার মেয়াদ চতুর্থ দফায় আরও তিন মাস বাড়ানোর অনুরোধ করলেও আজ বিকেল পর্যন্ত সৌদি আরবের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। উপরন্তু সৌদি আরবের জাতীয় দিবস উদ্‌যাপনকে কেন্দ্র করে সেখানে আগামী কয়েক দিনের সরকারি ছুটি। ফলে তিন-চার দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সৌদি সরকার সাড়া দেবে কি না, সেটা নিশ্চিত নয়। তাই ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশে আটকে পড়া লোকজনের সৌদি যাওয়াটা এক ধরনের অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে।

দেশে আটকে পড়া লোকজনের সমস্যার সঙ্গে সৌদি আরবে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বিষয়টি নতুন করে সামনে এনেছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ। ফলে সৌদি জনশক্তির বাজারকে ঘিরে পুরোনো সমস্যাটি সামগ্রিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে।