জাতি বিনির্মাণে মানুষের মনন তৈরিতে গণমাধ্যম অনন্য: তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত তিন দিনব্যাপী স্মারক বক্তৃতামালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি। ঢাকা, ২৯ অক্টোবর
ছবি: পিআইডি

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, জাতি বিনির্মাণে মানুষের মনন তৈরিতে গণমাধ্যম অনন্য। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য মানুষের মনন তৈরিতে গণমাধ্যম, গণমাধ্যমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সাংবাদিকদের ভূমিকা, যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, তত দিন ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
তথ্যমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে তাঁর সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) রজতজয়ন্তী উপলক্ষে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী স্মারক বক্তৃতামালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকার মনে করে, নতুন প্রজন্মের মনন গঠনেও গণমাধ্যমের সুষ্ঠু বিকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সরকারের পথচলা, সুষ্ঠুভাবে কাজের ক্ষেত্রেও গণমাধ্যমের সমালোচনা সহায়ক ভূমিকা রাখে।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সে কারণে আমরা সমালোচনাকে সমাদৃত করা এবং সমালোচকদের পুরস্কৃত করার সংস্কৃতিটাও লালন করি। গণমাধ্যমের কাছে আমার নিবেদন, খারাপ কাজের সমালোচনার পাশাপাশি ভালো কাজের প্রশংসাও প্রয়োজন, তাতে ভালো কাজ উৎসাহিত হয়।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে গত প্রায় ১২ বছরে গণমাধ্যমের বিস্ময়কর প্রসার হয়েছে। চলতি করোনাকালে সাংবাদিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিলের মাধ্যমে সহায়তা বিশ্বে অনন্য নজির স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে পুঁজি বিনিয়োগ ভালো এবং একই সঙ্গে লক্ষ রাখতে হবে, গণমাধ্যম যেন পুঁজির স্বার্থে ব্যবহৃত না হয়।
মূলধারার গণমাধ্যম পত্রপত্রিকা, বেতার ও টেলিভিশন যাতে সুষ্ঠুভাবে বিকশিত হয়, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী তাঁকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে তথ্য মন্ত্রণালয় নিরলস কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, যেসব পত্রিকা হঠাৎ হঠাৎ বের হয়, নিয়মিত বের হয় না, সেগুলো আসলে গণমাধ্যমের সুষ্ঠু বিকাশে কতটুকু সহায়ক, সেটি নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন আছে। পত্রিকার প্রচারসংখ্যাও যাতে বাস্তবনির্ভর হয়, এ নিয়েও কাজ চলছে। এসব ক্ষেত্রে একটি শৃঙ্খলা প্রয়োজন।
মন্ত্রী জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে বিজ্ঞাপন চলে যাচ্ছে এবং যেটির কোনো আয়কর সরকার পাচ্ছিল না, সম্প্রতি সেখানে ভ্যাট যুক্ত করাসহ এ খাতে শৃঙ্খলা আনতে তথ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিভাগ সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘বহুদিন ধরে যা সম্ভব হয়নি, বাংলাদেশের পণ্যের বিজ্ঞাপন বিদেশি চ্যানেলের মাধ্যমে দেখানো; আমরা এখন পুরোপুরিভাবে বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। এ ছাড়া যা কয়েক দশকে সম্ভবপর হয়নি, সেই বাংলাদেশ টেলিভিশন গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে সমগ্র ভারতে ফ্রি ডিশের মাধ্যমে প্রদর্শিত হচ্ছে।’

তথ্যমন্ত্রী এ সময় ডিআরইউকে রিপোর্টারদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও গণমাধ্যম পেশাজীবীদের একটি বলিষ্ঠ সংগঠন হিসেবে অভিহিত করে ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে তাদের অভিনন্দন জানান এবং এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার প্রশংসা করেন।
ডিআরইউর সাবেক সভাপতি শাহজাহান সরদারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা পরিচালনা পর্ষদের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ফিন্যান্সিয়াল হেরাল্ডের সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ।
‘বাংলাদেশে সাংবাদিকতার সংকট ও সম্ভাবনা: বর্তমান প্রেক্ষিত’ বিষয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল উপস্থাপিত স্মারক বক্তৃতার ওপর আলোচনায় অংশ নেন সাংবাদিক আব্দুল হাই সিদ্দিক, ডিআরইউর সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সহসভাপতি নজরুল কবীর, সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী প্রমুখ।