জামুকাকে ‘ধিক্কার’ দিলেন ঢাবির বিএনপিপন্থী শিক্ষকেরা

আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল একটি মানববন্ধন করে
ছবি: প্রথম আলো

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলকে (জামুকা) ‘ধিক্কার’ জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকেরা। তাঁরা বলেছেন, জামুকার দায়িত্ব ছিল দেশের মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রকাশ ও তাঁদের পুনর্বাসন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো খেতাবের দায়িত্ব জামুকার নয়, রাষ্ট্রের৷

আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল একটি মানববন্ধন করে। সম্প্রতি জামুকা জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের যে সুপারিশ করেছে, এর প্রতিবাদেই ছিল এই মানববন্ধন।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সাদা দলের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সদ্য সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, জামুকার দায়িত্ব ছিল দেশের মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা, মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রকাশ ও তাঁদের পুনর্বাসন। মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো খেতাব দেওয়ার দায়িত্ব জামুকার নয়, রাষ্ট্রের। জামুকার দায়িত্বে থাকা একজন সাবেক মন্ত্রী বলেছেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশ থেকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন। এটি সঠিক নয়। যখন বঙ্গবন্ধুর খুনিরা কেউ কেউ দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিল বা পালাতে চেষ্টা করেছিল, তখন জিয়াউর রহমান গৃহবন্দী ছিলেন। সেই সময় খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সরকার চলছিল।

লুৎফর রহমান বলেন, ‘জামুকার প্রতি আমরা ধিক্কার জানাই, যারা নিজেদের এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের মতো একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার নিশ্চয়ই এতটা বোকা নয় যে এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ শুরু করবে। জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত যাঁরা নিয়েছেন, তাঁরা কি বর্তমান সরকারকে সহায়তা করছেন, নাকি উল্টোটা? বিগত কয়েক বছরে ইতিহাস বিকৃতির কারণে নতুন প্রজন্ম জিয়াকে কিছুটা ভুলতে বসেছিল, সেই প্রজন্ম আজ জেগে উঠেছে তাঁকে জানার জন্য। আওয়ামী লীগকে এটি বুঝতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত বুদ্ধিমান বলেই আমরা মনে করি। তিনি নিশ্চয়ই জামুকার এই সিদ্ধান্ত আমলে নেবেন না৷ যদি তিনি এটি আমলে নেন, তাহলে দেশের মানুষ কখনোই সেটি মেনে নেবে না এবং সারা দেশে আন্দোলন হবে।’

অধ্যাপক লুৎফর আরও বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মুহূর্তে মুক্তিযোদ্ধাদের কীভাবে নতুন করে সুবিধা ও সম্মান দেওয়া যায়, সেই দিকে না গিয়ে তাঁদের খেতাব বাতিল করার পরিকল্পনা হচ্ছে। একজন নয়, হাজারো মুক্তিযোদ্ধার খেতাব বাতিল করা যায়। কিন্তু জিয়াউর রহমান তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের মনে যে জায়গা করে নিয়েছেন, সেই জায়গা থেকে তাঁর নাম কখনোই সরানো যাবে না।

সাদা দলের সদ্য সাবেক আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত কী ঘটেছিল, জাতি তা জানে। সেখানে যা ঘটেছিল, তাতে জিয়াউর রহমানের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। ১৫ আগস্ট কারা ঘটিয়েছে, খন্দকার মোশতাক কাদের লোক, সেই মন্ত্রিপরিষদে কারা ছিলেন? সবাই ছিলেন আওয়ামী লীগের। তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দল আর বিএনপি হচ্ছে সরাসরি মুক্তিযোদ্ধার দল, মুক্তিযুদ্ধের দল।

সাদা দলের নেতা ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন আহমেদ বলেন, ‘সরকার এখন একটি অস্বস্তিকর পরিবেশে আছে। সেখান থেকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের মতো একটি হীন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত জিয়ার অবস্থানের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না, বরং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করা হবে। আমরা এর নিন্দা জানাই।’

সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন মো. হাসানুজ্জামান বলেন, জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের অপতৎপরতার পেছনে দুটি উদ্দেশ্য হতে পারে। একটি হলো রাতের আঁধারে অবৈধ ভোট। এটি তাদের করতে হয় এ কারণে যে মৃত্যুর পরও জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তার কাছে তারা সব জায়গায় পরাজিত হচ্ছে। খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে সরকারের আরেকটা লাভ হলো জনগণকে অন্যদিকে ঘোরানো। বিএনপির যে জিনিসটি নিয়ে এখন আন্দোলন করার কথা, সেটি না করে তারা এখন এই বিষয়টি নিয়ে রাজপথে থাকবে। আল-জাজিরার খবর যেন চাপা পড়ে যায়, সে জন্যই হয়তো এটি করা হয়েছে।

সাদা দলের সদস্যসচিব অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে সংগঠনের সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক আখতার হোসেন খান, বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মাদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ শাখার নেতা অধ্যাপক এ বি এম শহিদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।