জেসিসি বৈঠকের অগ্রাধিকার প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন
ফাইল ছবি

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের আয়োজনের বিষয়টি দুই দেশ বিবেচনা করছে। তাঁর এই সফরের প্রস্তুতির পাশাপাশি জ্বালানি, সংযুক্তি ও পানিসম্পদ বণ্টনে সহযোগিতা জোরদারের মতো বিষয়গুলো বাংলাদেশ ও ভারতের আসন্ন জেসিসি বৈঠকে বিশেষ গুরুত্ব পাবে।

আগামী রোববার দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) সপ্তম বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশের ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তাঁর দেশের নেতৃত্ব দেবেন।

বৈঠকে অংশ নিতে আব্দুল মোমেন আগামী শনিবার তিন দিনের সফরে দিল্লি যাবেন। সফরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১৮ জুন কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির (সিআইআই) প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি। ১৯ জুন দুই নিকট প্রতিবেশীর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জেসিসি বৈঠকে বসবেন। আজ বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চূড়ান্ত না হলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাতের চেষ্টা চলছিল।

গত বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফর করেছিলেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিল্লি সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়।

২০ জুন ঢাকায় ফেরার আগে ভারতীয় মন্ত্রিসভার কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সদস্যের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। গত ৩০ মে জেসিসি বৈঠকের কথা ছিল। তবে বৈঠকের এক দিন আগে তা স্থগিত হয়ে যায়।

আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক আলোচনা অনুষ্ঠানের পর জেসিসি বৈঠকের আলোচ্যসূচির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মোমেন বলেন, ভারতের সঙ্গে অনেক বিষয় রয়েছে। আবার অমীমাংসিত বিষয়ের মধ্যে রয়েছে পাটের ওপর অ্যান্টিডাম্পিং, সীমান্ত ইস্যু ও জ্বালানি নিরাপত্তার নতুন ইস্যু। আলোচনা হবে পানিবণ্টন ইস্যুতে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সপ্তম বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো আলোচনায় উঠবে।

প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর

গত বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফর করেছিলেন। সফরের সময় ভারতের নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিল্লি সফরের আমন্ত্রণ জানান। ফলে এবার দ্বিপক্ষীয় সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত যাওয়ার কথা।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, জেসিসি বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর চূড়ান্ত করার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। ওই সফরের সম্ভাব্য একাধিক তারিখ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সফরটি হতে পারে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো এই প্রতিবেদককে আভাস দিয়েছে, এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত না হলেও দুই দেশ সেপ্টেম্বরের প্রথমার্ধ্বে এ সফর আয়োজনের বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

দুই বন্দরের ব্যবহার চলতি বছর

২০১৯ সালে বাংলাদেশের দুই সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম ও মোংলা ব্যবহার করে ভারতের ব্যবসায়ীদের পণ্য আনা-নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরীক্ষামূলকভাবে একবার পণ্য পরিবহনও করা হয়। তবে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও বাণিজ্যিকভাবে দুই বন্দর ব্যবহারের সিদ্ধান্ত আলোর মুখ দেখেনি।

জানতে চাইলে মাশফি বিনতে শামস বলেন, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে চায়। এ জন্য দুই বন্দরের চারটি রুটে চারটি পরীক্ষামূলক চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে।

করোনা সংক্রমণকালে ২০২০ সালে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে পণ্য পরিবহন করা হয়েছিল।

জ্বালানি সহযোগিতা

জ্বালানি খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য বিশেষ করে জলবিদ্যুৎ খাতের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান বেশ কয়েক বছর ধরেই আলোচনা করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, গত এপ্রিলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ঢাকা সফরের সময় জ্বালানি খাতে দিল্লির সমর্থনের বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন। এ প্রেক্ষাপটে বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটনা, ভারত ও নেপাল) কাঠামোর অধীন জ্বালানি নিরাপত্তা সহযোগিতা প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী বাংলাদেশ।

ঢাকার কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দক্ষিণ এশিয়ার চার দেশের মধ্যে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে পানিসম্পদ বণ্টন, জ্বালানি, সংযুক্তিসহ সম্ভাব্য অংশীদারত্ব নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ এখন চার দেশীয় উদ্যোগকে বেগবান করে জ্বালানি সহযোগিতা বাড়াতে মনোযোগ দিচ্ছে।

মাশফি বিনতে শামস বলেন, ভুটান, ভারত ও নেপালের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়ভাবে এ অঞ্চলের দেশগুলোর জ্বালানি সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হলে সব পক্ষ একমত পোষণ করে। এখন তিন কিংবা চার দেশ মিলে এই সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে। জেসিসির বৈঠকে বাংলাদেশ এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী।