টিকা নিয়ে সরকারের ব্যর্থতা বিপর্যয় নিয়ে এসেছে: মোশাররফ

খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
ফাইল ছবি

মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থ সরিয়ে এনে শিগগির সরকারকে টিকা কিনতে বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেছেন, টিকা নিয়ে সরকারের লুকোচুরি ও ব্যর্থতা জনজীবনে চরম বিপর্যয় নিয়ে এসেছে।

আজ সোমবার সকালে বিএনপি গঠিত ‘করোনার ভ্যাকসিন সংগ্রহ-বিতরণ-পর্যবেক্ষণ–সংক্রান্ত কমিটি’ আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব হচ্ছে টিকা ক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ অন্য খাত থেকে বিশেষ করে মেগা প্রকল্পগুলোর বরাদ্দকৃত অর্থ ডাইভার্ট করে টিকা ক্রয় করা অতি জরুরি।’

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এক লাখ, দুই লাখ, পাঁচ লাখ নয়, কোটি কোটি টিকা আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে করোনা চার-পাঁচ মাসের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, বাজেট অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যত টিকা লাগে কেনা হবে। কিন্তু কোথা থেকে কেনা হবে, কবে নাগাদ কেনা হবে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দেননি। কোভিড-১৯ অতিমারির শুরু থেকে সরকারের রাখঢাক, সমন্বয়হীনতা, অতিকথন ও দুর্নীতি জনগণকে হতাশ করেছে, ক্ষুব্ধ করেছে। সরকার ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘টিকা ক্রয় আমরা বিরোধী দল করতে পারব না। এটা সরকারকেই করতে হবে। যদি সরকার না পারে, এর দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। সেই দায়দায়িত্ব গ্রহণ করে সরকারকে প্রয়োজনে সরে দাঁড়াতে হবে। যারা পারবে, তারা এ দেশের জনগণকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসবে।

সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা প্রতিরোধে টিকা হচ্ছে একমাত্র উপায়। দেশের জনসংখ্যার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা প্রদানের মাধ্যমেই একমাত্র করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে সরকারকে পর্যাপ্ত টিকা সংগ্রহের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং জনগণকে তা অবহিত করতে হবে।

এই টিকা নিয়ে সরকারের লুকোচুরি ও ব্যর্থতা জনজীবনে চরম বিপর্যয় নিয়ে এসেছে।

টিকা কূটনীতিতে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ, এমন মন্তব্য করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিশ্বের যেসব দেশ ইতিমধ্যে করোনার সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে, সেসব দেশ ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা প্রদান করতে সমর্থ হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে সরকারের টিকা কূটনীতিতে চরম ব্যর্থতা, টিকা ক্রয়ে অনিয়ম ও হঠকারিতার কারণে দেশে ২৭ জুন পর্যন্ত দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন মাত্র ৪২ লাখ ৮১ হাজার ৭৭৬ জন। এ হিসেবে গত ৬ মাসে মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত জনসংখ্যার তুলনায় অতি সামান্যসংখ্যক মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। তাতেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত অগ্রাধিকার তালিকা অনুসরণ করা হয়নি।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, সরকার ও তার মন্ত্রীরা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন প্রথম থেকে। তাঁরা বলেছেন, করোনা সংক্রমিত হবে না, কিন্তু হয়েছে। তারপর বলেছেন, সবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। দেশের জনগণের কাছে পরিষ্কার যে সরকার তাদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছে।

সরকারের বিরুদ্ধে করোনা নিয়ে খামখেয়ালি, দুর্নীতি ও ব্যর্থতার অভিযোগ করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যুবরণ করেছে বাংলাদেশে এবং ৮ হাজার ৬০০–এর ওপরে শনাক্ত হয়েছে। প্রতিদিন একই অবস্থা।

এটা কমার কোনো লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আমরা বলব, অতি দ্রুত টিকা সংগ্রহ এবং টিকাদান কর্মসূচিকে স্বচ্ছ হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। এ জন্য জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে জনগণকে একত্র করে অগ্রসর হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে আমরা মনে করি।’

সংবাদ সম্মেলনে করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন এবং ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) হটলাইনে চিকিৎসাসেবা, বিভিন্ন হাসপাতালে করোনার চিকিৎসাসামগ্রী প্রদান, সীমান্তবর্তী জেলার হাসপাতালে রোগীদের অক্সিজেন সিলিন্ডার, হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা সরবরাহ, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, লকডাউনে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম তুলে ধরেন খন্দকার মোশাররফ।

সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে আমি দেশের সব জনগণকে বলব, আপনারা মাস্ক ব্যবহার করুন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। আপনি নিজে সুরক্ষায় থাকুন, অন্যদেরও সুরক্ষিত করতে সহযোগিতা করুন।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ফরহাদ হালিম, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন আল রশিদ, বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ড্যাবের মহাসচিব আবদুস সালাম প্রমুখ।